লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) সাম্প্রতিক টুইট নিয়ে বিজেপি তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে। বিজেপির মুখপাত্ররা দাবি করেছেন যে, রাহুল গান্ধীর টুইট ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি অবমাননাকর। তাঁর এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ভারতের প্রতি তাঁর আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি।
রাহুল গান্ধী তার এক্স হ্যান্ডেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ভিডিও প্রকাশ করে তাতে লিখেছেন, “ট্রাম্প বলছেন ভারতের পাঁচটি যুদ্ধ বিমান ধ্বংস হয়েছে এর সত্যতা কি আমরা সবাই জানতে চাই।” ঠিক এই কারণেই আবারও উত্তাল হয়েছে ভারতীয় রাজ্যটির ময়দান। বিজেপির অভিযোগ, রাহুল গান্ধী ভারতের বিরোধী দলনেতার ভূমিকায় নয়, বরং ‘পাকিস্তানের নেতার’ মতো কথা বলছেন।
বিজেপি আরও বলেছে তিনি একটি ‘পাকিস্তানপন্থী’ এজেন্ডা প্রচার করছেন, যা ভারতীয় সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। এই বিতর্ক সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “রাহুল গান্ধীর টুইট বিষাক্ত এবং বিপজ্জনক। এটি স্পষ্ট করে যে তাঁর আনুগত্য ভারতের প্রতি নয়।
তিনি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি অবিশ্বাস প্রকাশ করছেন এবং আমাদের সাহসী সৈনিকদের অপমান করতে আনন্দ পাচ্ছেন।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, রাহুল গান্ধী সম্প্রতি সশস্ত্র বাহিনীর মর্যাদা হানির অভিযোগে একটি মানহানির মামলায় জামিনে মুক্ত রয়েছেন, তবুও তিনি বারবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করছেন।
বিজেপির দাবি, রাহুল গান্ধীর টুইটে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অপমান করা হয়েছে এবং তিনি এমন মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন, যা পাকিস্তানের প্রচারের সঙ্গে মিলে যায়। বিজেপি নেতা রাজীব চন্দ্রশেখর এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন, “রাহুল গান্ধী ভারতের বিরোধী দলনেতা নন, তিনি পাকিস্তানের নেতার মতো কথা বলছেন। কিন্তু রাহুল গান্ধী কার্যত নিজে কিছুই বলেননি তিনি দিনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য পোস্ট করেছেন এবং জানতে চেয়েছেন যুদ্ধ বিমান ধ্বংসের বিষয়ে মোদী নীরব কেন। আর কেনই বা ট্রাম্প এই বিস্ময়ে গলা ফাটাচ্ছেন।
বিজেপি নেতৃত্ব বলছে তাঁর প্রতিটি বক্তব্য ভারতীয় সেনাবাহিনীকে হেয় করার জন্য এবং আমাদের মহান জাতির মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার জন্য।” তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের বক্তব্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থে নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও ক্ষতিকর।”বিজেপির অভিযোগ, রাহুল গান্ধী সীমান্তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছেন।
বিজেপি নেতা অমিত মালব্য এক্স-এ লিখেছেন, “রাহুল গান্ধীর টুইট আমাদের সেনাবাহিনীর ত্যাগ এবং সাহসিকতার প্রতি অপমান। তিনি কেন বারবার ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ভাষায় কথা বলছেন? এটি কি কংগ্রেসের নতুন রাজনৈতিক কৌশল?”অন্যদিকে, কংগ্রেস এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ করেছে। কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনাথ বলেছেন, “বিজেপি রাহুল গান্ধীর বক্তব্যকে বিকৃত করে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
রাহুলজি সবসময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাশে থেকেছেন এবং তাঁর বক্তব্য জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি তাঁর উদ্বেগের প্রকাশ। বিজেপি এই ইস্যুকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে।” তিনি আরও বলেন, রাহুল গান্ধী সরকারের নীতি এবং সীমান্তে পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যা একজন বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব।
এই বিতর্কের মধ্যে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, বিজেপি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে এই আক্রমণের মাধ্যমে আসন্ন সংসদীয় অধিবেশনের আগে কংগ্রেসকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। সংসদে সীমান্ত পরিস্থিতি এবং জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এবং বিজেপি চায় না যে কংগ্রেস এই বিষয়ে সরকারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে পারে।
রাহুল গান্ধী এর আগেও বিজেপির সমালোচনার মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে, সীমান্তে চীনের সঙ্গে উত্তেজনা এবং সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি নিয়ে তাঁর মন্তব্য বিজেপির নিশানায় এসেছে। তবে, কংগ্রেস দাবি করছে যে, রাহুল গান্ধী সরকারের নীতির সমালোচনা করছেন, সেনাবাহিনীর নয়। তাঁরা বলছেন, বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে এই বিষয়টিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে।
ফের বিতর্কে শেখ শাহজাহান, গেস্টহাউসে উদ্ধার ১০ কোটির জাল নোট
এই বিতর্ক আগামী সংসদীয় অধিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। রাহুল গান্ধীর টুইট এবং বিজেপির প্রতিক্রিয়া জাতীয় নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই পরিস্থিতিতে সংসদে সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে।