পুণে শহরের বুধওয়ার পেঠ এলাকায় শনিবার পাঁচজন সন্দেহভাজন বাংলাদেশী মহিলাকে আটক (Bangladeshi Women Detained) করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে অবৈধভাবে বসবাসের অভিযোগ উঠেছে। ফরাসখানা থানার একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গোপন সূত্র থেকে খবর পাওয়ার পর বুধওয়ার পেঠে অভিযান চালিয়ে এই পাঁচ মহিলাকে আটক করা হয়। পুলিশের মতে, এই মহিলারা বৈধ ভিসা বা অন্য কোনও আইনি নথি ছাড়াই ভারতে বসবাস করছিলেন এবং তারা পতিতাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন।
অভিযানটি ফরাসখানা থানার পুলিশ দলের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, “আমরা গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বুধওয়ার পেঠে অভিযান চালাই। এই এলাকায় কিছু বাংলাদেশী অভিবাসী অবৈধভাবে বসবাস করছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছিল। অভিযানের সময় পাঁচজন মহিলাকে আটক করা হয়, এবং জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে যে তাদের কাছে ভারতে থাকার জন্য কোনও বৈধ নথি নেই।” তিনি আরও জানান, এই মহিলারা জানিয়েছেন যে তারা পতিতাবৃত্তির জন্য বাধ্য হয়েছিলেন, যা এই অভিযানের একটি উল্লেখযোগ্য দিক।
Also Read | যোগী রাজ্যে কানওয়ার যাত্রীদের হাতে আক্রান্ত সিআরপিএফ জওয়ান
এই ঘটনাটি ভারতের বিভিন্ন শহরে অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের একটি অংশ। সাম্প্রতিক মাসগুলিতে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে, বিশেষ করে মহারাষ্ট্র, দিল্লি, এবং গুজরাটে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিকদের আটক করার জন্য একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। পুণের বুধওয়ার পেঠ, যা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি কুখ্যাত রেড-লাইট এলাকা, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কার্যকলাপ এবং মানব পাচারের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই এলাকায় প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ পতিতা রয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এসেছেন।
আটককৃত মহিলাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় পাসপোর্ট আইন, ১৯২০ এবং বিদেশী নাগরিক আইন, ১৯৪৬-এর ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই মহিলারা সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তের মাধ্যমে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। তাদের মোবাইল ফোন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করে পুলিশ জানতে পেরেছে যে তারা বাংলাদেশে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। এছাড়াও, এই মহিলারা কীভাবে ভারতে প্রবেশ করেছেন এবং কীভাবে তারা পুণে পৌঁছেছেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
Also Read | চন্ডিগড়ে পুলিশের হাতে গোমাংস উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য
এই ঘটনা মানব পাচারের একটি গুরুতর সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে। পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “এই মহিলারা সম্ভবত মানব পাচারকারীদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে ভারতে আনা হয়েছিল। তাদের ভালো চাকরি বা উন্নত জীবনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু পরে তাদের পতিতাবৃত্তির জন্য বাধ্য করা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, এই মহিলাদের পুণেতে আশ্রয় দেওয়ার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে। এই ঘটনায় জড়িত একজন ব্যক্তি, যিনি এই মহিলাদের থাকার জন্য বাড়ি ভাড়া দিয়েছিলেন,
তাকেও আটক করা হয়েছে।
পুলিশ এখন এই মহিলাদের বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তাদের ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফআরআরও)-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, যারা তাদের প্রত্যর্পণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করছে। এই ঘটনাটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের সুরক্ষা এবং অবৈধ অভিবাসনের সমস্যা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মোট দৈর্ঘ্য ৪,০৯৬.৭ কিলোমিটার, যার মধ্যে ৩,২৩২.২১ কিলোমিটারে বেড়া দেওয়া হয়েছে। তবুও, সীমান্তের কিছু অংশ এখনও অরক্ষিত রয়েছে, যা অবৈধ প্রবেশের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এই ঘটনা ভারতের অভিবাসন নীতি এবং মানব পাচারের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়। পুণে পুলিশের এই অভিযান অবৈধ অভিবাসন এবং মানব পাচারের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে। তবে, এই ধরনের ঘটনা কেবল আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে নয়, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলির সমাধানের মাধ্যমেও মোকাবেলা করা প্রয়োজন। মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের পুনর্বাসন এবং তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলির সমন্বিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই ঘটনার পর পুণে পুলিশ আরও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে, এবং এই ধরনের অবৈধ কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। এই ঘটনা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব তুলে ধরেছে।