ভারতের পৃথিবী বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় (MoES) কৃষকদের কল্যাণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে (Farmers Progress)। সময়োপযোগী আবহাওয়া-ভিত্তিক পরামর্শ, মৌসুমি পূর্বাভাস এবং প্রাথমিক সতর্কতার মাধ্যমে মন্ত্রণালয় কৃষকদের জন্য জলবায়ু-সহনশীল কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়তা করছে। দেশব্যাপী ১৩০টি অ্যাগ্রোমেট ফিল্ড ইউনিট (AMFU) এবং মেঘদূত ও মৌসমের মতো ডিজিটাল অ্যাপের মাধ্যমে MoES কৃষকদের স্থানীয় ও ব্যবহারযোগ্য তথ্য সরবরাহ করে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করছে।
এই উদ্যোগগুলি কৃষকদের ফসলের ক্ষতি কমাতে, উৎপাদন বাড়াতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।MoES-এর অধীনে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (IMD) এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি কৃষকদের জন্য নির্ভরযোগ্য আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রদান করে।
এই পূর্বাভাসগুলির মধ্যে রয়েছে বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা খরার তথ্য। অ্যাগ্রোমেট ফিল্ড ইউনিটগুলি দেশের বিভিন্ন কৃষি অঞ্চলে স্থাপন করা হয়েছে, যা স্থানীয় আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করে এবং কৃষকদের জন্য কাস্টমাইজড পরামর্শ প্রদান করে।
এই ইউনিটগুলি ফসল বপন, সেচ, কীটনাশক প্রয়োগ এবং ফসল কাটার সময় নির্ধারণে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, এই পরামর্শের মাধ্যমে কৃষকরা বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস জেনে সেচের সময়সূচী পরিবর্তন করতে পারেন বা খরার সময় জল সংরক্ষণের কৌশল গ্রহণ করতে পারেন।মেঘদূত এবং মৌসম অ্যাপের মতো ডিজিটাল সরঞ্জামগুলি কৃষকদের হাতে আবহাওয়া তথ্য পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
মেঘদূত অ্যাপটি কৃষি-নির্দিষ্ট আবহাওয়া তথ্য প্রদান করে, যেমন ফসল-ভিত্তিক পরামর্শ, মাটির আর্দ্রতা এবং বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। এই অ্যাপটি একাধিক ভাষায় উপলব্ধ, যার মধ্যে বাংলা, হিন্দি এবং অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে, যা গ্রামীণ কৃষকদের জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য করে তুলেছে।
মৌসম অ্যাপটি প্রতিদিনের আবহাওয়া পূর্বাভাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সতর্কতা এবং দীর্ঘমেয়াদী মৌসুমি পূর্বাভাস প্রদান করে। এই অ্যাপগুলি কৃষকদের তাদের মোবাইল ফোনে সরাসরি তথ্য পেতে সক্ষম করেছে, যা তাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।MoES-এর এই উদ্যোগগুলি কৃষকদের জন্য আর্থিক ক্ষতি কমিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালে মহারাষ্ট্র ও ওডিশার কৃষকরা মৌসম অ্যাপের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ের প্রাথমিক সতর্কতা পেয়ে তাদের ফসল সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এই ধরনের সতর্কতা কৃষকদের সম্পদ রক্ষা করতে এবং ফসলের ক্ষতি কমাতে সহায়তা করেছে। এছাড়া, মিলেট ও অন্যান্য জলবায়ু-সহনশীল ফসলের চাষে পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে MoES কৃষকদের টেকসই কৃষি পদ্ধতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
২১ জুলাই ধর্মতলায় তৃণমূলের লক্ষ্য উত্তরবঙ্গ থেকে রেকর্ড জমায়েত
MoES-এর এই প্রচেষ্টা রাষ্ট্রসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অর্জনেও অবদান রাখছে, বিশেষ করে ক্ষুধা নির্মূল এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সহযোগিতায় MoES কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যাতে তারা আধুনিক প্রযুক্তি এবং আবহাওয়া তথ্য ব্যবহারে দক্ষ হয়।
তবে, এই উদ্যোগগুলির সাফল্য আরও বাড়ানোর জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা প্রয়োজন। গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগের অভাব এবং ডিজিটাল সাক্ষরতার কম মাত্রা কিছু কৃষকের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। MoES এবং সরকারের উচিত গ্রামীণ এলাকায় ডিজিটাল পরিকাঠামো উন্নত করা এবং কৃষকদের জন্য সহজে বোধগম্য প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম চালু করা।
এছাড়া, অ্যাগ্রোমেট ফিল্ড ইউনিটের সংখ্যা বাড়িয়ে আরও স্থানীয়করণ করা যেতে পারে।ভারতের কৃষি খাত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে MoES-এর আবহাওয়া-ভিত্তিক পরামর্শ এবং ডিজিটাল সরঞ্জাম কৃষকদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য সমর্থন ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করছে।
এই উদ্যোগগুলি কৃষকদের আয় বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আগামী দিনে এই প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা গেলে ভারতের কৃষি খাত আরও টেকসই ও সমৃদ্ধ হবে।