অসমে বাংলা ভাষা-সহাবস্থান ইস্যুতে মমতা-হিমন্ত মুখোমুখি সংঘাত

কলকাতা: অসম বনাম বাংলা—দুই মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Banerjee vs Himanta Sarma) সরাসরি বাকযুদ্ধ। আজ ফের অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা…

অসমে বাংলা ভাষা-সহাবস্থান ইস্যুতে মমতা-হিমন্ত মুখোমুখি সংঘাত

কলকাতা: অসম বনাম বাংলা—দুই মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Banerjee vs Himanta Sarma) সরাসরি বাকযুদ্ধ। আজ ফের অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাষার অধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষ সহাবস্থানের পক্ষে সওয়াল করে তিনি অভিযোগ করেন, “বাংলা ভাষাভাষী নাগরিকদের হুমকি দিয়ে অসমে বিজেপি সরকার এক ধরনের সাংবিধানিক অন্যায় করছে।”

এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ এক পোস্টে মমতা লেখেন, “বাংলা দেশের দ্বিতীয় সর্বাধিক কথ্য ভাষা এবং অসমেও দ্বিতীয় সর্বাধিক ব্যবহৃত ভাষা। ধর্ম ও ভাষার প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল হয়ে যারা সহাবস্থানে বিশ্বাস রাখেন, তাঁদের হুমকি দেওয়া ও নির্যাতনের হুমকি সাংবিধানিক ও মানবিকভাবে বিভাজনমূলক।”

   

তিনি আরও লেখেন, “অসমে বিজেপি সরকার বিভাজনের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। অসমের মানুষ এর জবাব দেবেই।”

এই মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেননি অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি বলেন, “আপনি এই বিতর্কের সূত্রপাত করেছেন। অসমে আমরা নিজেদের লোকদের সঙ্গে লড়াই করছি না। আমরা সীমান্ত থেকে অনবরত মুসলিম অনুপ্রবেশ রুখতেই কড়া অবস্থান নিয়েছি। বহু জেলায় হিন্দুরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হচ্ছেন। এটা শুধু সামাজিক ইস্যু নয়, এটি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন। সুপ্রিম কোর্টও একে ‘বাহ্যিক আগ্রাসন’ বলেছে।”

বিশ্বশর্মা স্পষ্ট করেন, “অসমে আমরা কখনো ভাষা বা ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করি না। অসমিয়া, বাংলা, বোড়ো, হিন্দি—সবাই যুগ যুগ ধরে একত্রে বাস করছেন। তবে কোনো সভ্যতা তার সীমান্ত ও সাংস্কৃতিক ভিত্তি রক্ষা না করলে সে টিকে থাকতে পারে না।”

Advertisements

এর পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ করে হিমন্ত বলেন, “আপনি পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করে ফেলেছেন। ভোটব্যাঙ্কের জন্য একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে তুষ্ট করে যাচ্ছেন। সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ চলছে অথচ আপনি চুপ করে রয়েছেন। এই রাজনীতিই আপনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে, কিন্তু তা দেশের অখণ্ডতার পক্ষে বিপজ্জনক।”

এই বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, অসমে বসবাসকারী বাংলা ভাষাভাষীদের অধিকার নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে ভাষার ভিত্তিতে সহাবস্থানের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন, সেখানে হিমন্ত বিশ্বশর্মা ধর্ম ও অনুপ্রবেশকে সামনে এনে নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলছেন।

বিরোধীদের একাংশের মতে, এই গোটা বাকযুদ্ধের পেছনে রয়েছে ২০২৬ সালের অসম বিধানসভা নির্বাচন এবং জাতীয় রাজনীতির ২০২৯-এর দিকচিহ্ন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাষা ও ধর্ম—এই দুই স্পর্শকাতর ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীরা নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান আরও বেশি স্পষ্ট করছেন এবং ভোটারদের মন জয় করাই এদের মূল উদ্দেশ্য।

তবে ভাষা ও ধর্ম নিয়ে এই ধরনের প্রকাশ্য সংঘাত সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক তৈরি করতে পারে বলেও অনেকে আশঙ্কা করছেন।