কেরলে অনুষ্ঠিত স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (এসএফআই)-এর ১৮তম সর্বভারতীয় সম্মেলনে দীর্ঘ জল্পনার অবসান ঘটিয়ে নতুন নেতৃত্বের ঘোষণা করা হয়েছে (Srijan)। সৃজন ভট্টাচার্য (Srijan) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন, এবং আদর্শ এম সাজি নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
এই সম্মেলনে বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস (Srijan) এবং সভাপতি ভিপি সানু তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। এই তরুণ, প্রতিশ্রুতিশীল নেতৃত্বের হাতে এখন এসএফআই-এর ভবিষ্যৎ, যারা দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে বাম ছাত্র আন্দোলনকে নতুন দিশা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সৃজন ভট্টাচার্যের রাজনৈতিক যাত্রা (Srijan)
সৃজন ভট্টাচার্যের (Srijan) রাজনৈতিক উত্থান ব্যতিক্রমী এবং অনুপ্রেরণাদায়ী। কলকাতার গোলপার্ক অঞ্চলে স্কুল স্তরে ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে তিনি তার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করেন। সাধারণত ক্যাম্পাস রাজনীতির মাধ্যমে ছাত্র নেতারা উঠে আসেন, কিন্তু সৃজনের ক্ষেত্রে এই পথ ছিল ভিন্ন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র হিসেবে তিনি ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। পরবর্তীতে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) বা সিপিআই(এম)-এর হয়ে বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। যদিও তিনি এই নির্বাচনগুলিতে জয়ী হননি, তাঁর সংযত ভাষা, মার্জিত আচরণ এবং চিন্তাশীল ব্যক্তিত্ব তাঁকে একজন সম্ভাবনাময় নেতা হিসেবে আলাদা করে তুলেছে।
সৃজনের (Srijan) নেতৃত্বে এসএফআই পশ্চিমবঙ্গে ছাত্র আন্দোলনকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, ক্যাম্পাসে স্বাধীনতার উপর হামলা এবং ছাত্রদের অধিকারের জন্য সোচ্চার ছিলেন। তাঁর এই সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি এবং সংগঠনের প্রতি নিষ্ঠা তাঁকে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আদর্শ এম সাজি: নতুন সভাপতি
নতুন সভাপতি (Srijan) আদর্শ এম সাজি এসএফআই-এর কেরল শাখার একজন বিশিষ্ট নেতা। তিনি দক্ষিণ ভারতে ছাত্র আন্দোলনকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। কেরলের শক্তিশালী বাম ছাত্র আন্দোলনের পটভূমিতে তাঁর নেতৃত্বে এসএফআই দেশের অন্যান্য অংশে নতুন প্রজন্মকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিদায়ী নেতৃত্ব: ময়ূখ বিশ্বাস ও ভিপি সানু
বিদায়ী সাধারণ (Srijan) সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ছাত্র রাজনীতির মূল স্রোতে উঠে আসেন। কলকাতা জেলা কমিটিতে কাজের পর তিনি এসএফআই-এর সর্বভারতীয় পর্যায়ে দায়িত্ব পান। তাঁর নেতৃত্বে এসএফআই উত্তর ভারত, উত্তর-পূর্ব ভারত এবং এমনকি ব্রিটেনেও নতুন শাখা গড়ে তুলেছে।
তাঁর আমলে এসএফআই শিক্ষার অধিকার, ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র এবং ছাত্রদের স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে সোচ্চার ছিল। বর্তমানে ময়ূখ গবেষণার কাজে নিযুক্ত রয়েছেন, তবে তাঁর অবদান এসএফআই-এর ইতিহাসে স্মরণীয় থাকবে।
বিদায়ী (Srijan) সভাপতি ভিপি সানুও কেরলের ছাত্র আন্দোলনের একজন শক্তিশালী নেতা ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে এসএফআই দেশের বিভিন্ন অংশে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ এবং হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিবাদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে সৃজনের চ্যালেঞ্জ
দেশজুড়ে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে সৃজন ভট্টাচার্য এবং আদর্শ এম সাজির নেতৃত্বে এসএফআই-এর উপর বড় দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ধর্মীয় মৌলবাদ, স্বাধীন মত প্রকাশের উপর হামলা এবং শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে এসএফআই-এর লড়াই আরও তীব্র হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সৃজনের সংযত নেতৃত্ব এবং নতুন প্রজন্মের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ক্ষমতা এই লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে, (Srijan) যেখানে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে, সেখানে বাম ছাত্র আন্দোলনের পুনরুত্থান একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সৃজন ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে এসএফআই কীভাবে নতুন প্রজন্মকে সংগঠিত করে এবং শিক্ষার্থীদের অধিকারের জন্য লড়াই করে, তা আগামী দিনে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
WBCS-এ বাংলা ফিরিয়ে আনতে কলকাতায় রাজপথে বৃষ্টিতে ভিজল হাজারো বাঙালি
জনগণের প্রত্যাশা
এসএফআই-এর নতুন নেতৃত্বের কাছে ছাত্র সমাজের প্রত্যাশা অনেক। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র, অর্পিতা দাস, বলেন, “সৃজনদার নেতৃত্বে আমরা আশা করছি এসএফআই ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক স্থান পুনরুদ্ধার করবে এবং শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করবে।” অন্যদিকে, কেরলের একজন ছাত্র নেতা, রাহুল কে, বলেন, “আদর্শ এম সাজির নেতৃত্বে আমরা দক্ষিণ ভারতে এসএফআই-এর প্রভাব আরও বাড়াতে চাই।”
সৃজন ভট্টাচার্য এবং আদর্শ এম সাজির নেতৃত্বে এসএফআই একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে। তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক—শিক্ষার অধিকার, ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র এবং হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই। সৃজনের সংযত নেতৃত্ব এবং আদর্শের গতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি এসএফআই-কে নতুন প্রজন্মের কাছে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই নতুন নেতৃত্ব কীভাবে বাম ছাত্র আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যায়, তা আগামী দিনে ভারতের ছাত্র রাজনীতির দিকনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।