ভারতীয় ফুটবল (Indian Football) মানচিত্রে কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি (Kerala Blasters FC) এক অবিচ্ছেদ্য নাম। আইএসএলের (ISL) জন্মলগ্ন থেকেই এই ক্লাব হয়ে উঠেছে আবেগ, রং ও উত্তেজনার প্রতীক। কেরালার ফুটবলপ্রেমীদের উন্মাদনা আর সমর্থনে গড়ে ওঠা এই দল আজ শুধুমাত্র এক ক্লাব নয়, বরং আবেগের নাম। যাকে বলা হয় ‘ইয়েলো আর্মি’।
২০১৪ সালে আইএসএলের প্রথম মরসুমেই আত্মপ্রকাশ করে কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি। ডেভিড জেমসের কোচিংয়ে প্রথম মরসুমেই তারা পৌঁছে যায় ফাইনালে। যদিও ট্রফি জেতা হয়নি, তবুও দল সেই থেকে কেরালার ঘরে ঘরে এক আলাদা জায়গা করে নেয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু বদলেছে, তবে যেটা বদলায়নি তা হল সমর্থকদের ভালোবাসা। কোচ বদলেছে, খেলোয়াড় এসেছে-গেছে, কিন্তু ‘মান্য়া কোচি’ গ্যালারির সেই উৎসাহ আজও অটুট।
সেরা একাদশের সন্ধানে
কেরালা ব্লাস্টার্সের মতো আবেগময় ক্লাবের সেরা একাদশ বেছে নেওয়া মোটেই সহজ কাজ নয়। নতুন প্রতিভা আর পুরনো কিংবদন্তিদের মধ্যে বেছে নেওয়ার লড়াইটা যেমন কঠিন, তেমনি রোমাঞ্চকরও। ক্লাবের ইতিহাসে পারফরম্যান্স, আবেগ এবং অবদানের ভিত্তিতে গঠিত সেরা একাদশের বিবরণ দেওয়া হল।
গোলরক্ষক: প্রভসুখন সিং গিল
ডেভিড জেমস, অলবিনো গোমেজ বা সাচিন সুরেশকে ছাপিয়ে গিলের জায়গা নিশ্চিত হয় তার অসাধারণ ধারাবাহিকতার জন্য। ২০২১-২২ মরসুমে সাতটি ক্লিন শিট এবং গোল্ডেন গ্লাভ জিতে তিনি দলকে ফাইনালে তুলেছিলেন। আজ তিনি ইস্টবেঙ্গল এফসির সদস্য হলেও, কেরালার ইতিহাসে তাঁর অবদান অমলিন।
রাইট-ব্যাক: সন্দীপ সিং
পাঁচ মরসুম ধরে নিরলস খেটে যাওয়া এই ডিফেন্ডার ছাপিয়ে গিয়েছেন অনেক নামকরা খেলোয়াড়কে। দলের প্রয়োজনে সর্বস্ব দিয়ে খেলার মানসিকতা সন্দীপকে এই একাদশে স্থান দিয়েছে।
লেফ্ট-ব্যাক: জেসেল কার্নেইরো
২০১৯-এ যোগ দিয়ে দলের আত্মা হয়ে ওঠা এই ফুটবলার অধিনায়কের দায়িত্বও কাঁধে নিয়েছিলেন। অসাধারণ লড়াকু মানসিকতা ও লয়ালিটির কারণে তিনি এই জায়গা পাওয়ার যোগ্য দাবিদার।
সেন্টার-ব্যাক: সন্দেশ ঝিঙ্গান ও সেড্রিক হেংবার্ট
সন্দেশ ঝিঙ্গান ক্লাবের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। ছয় মরসুমে ৭৬ ম্যাচ, দুইবার ফাইনালে নেতৃত্ব। তাঁর পাশেই রয়েছেন ফরাসি ডিফেন্ডার হেংবার্ট, যিনি দুই মরসুমে দুইবার ফাইনালে নিয়ে যান দলকে। নেতৃত্ব আর সংগঠনের গুণে তিনি মার্কো লেস্কোভিচকে পেছনে ফেলেন।
ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার: জিকসন সিং
কেরালা ব্লাস্টার্স রিজার্ভ দল থেকে উঠে এসে আজ দেশের সেরা মিডফিল্ডারদের একজন। ইভান ভুকোমানোভিচের অধীনে তাঁর উন্নতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ৭৮ ম্যাচে তাঁর অবদান অতুলনীয়।
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার: অ্যাড্রিয়ান লুনা
উরুগুয়ের এই প্লেমেকার ‘মিস্টার কেরালা ব্লাস্টার্স’ বললে অত্যুক্তি হয় না। ৭০-র বেশি ম্যাচে ২৩ অ্যাসিস্ট ও ১৩ গোল, দর্শকদের হৃদয়ে রাজ করছেন তিনি। ফুটবলের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও ক্লাবের প্রতি নিষ্ঠা তাঁকে কিংবদন্তির আসনে বসিয়েছে।
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার: সাহাল আব্দুল সামাদ
কেরালার ঘরের ছেলে। তার জাদুকরী ফুটওয়ার্ক আর সাহসী খেলার জন্য সহাল খুব অল্প সময়েই হয়ে ওঠেন সমর্থকদের নয়নের মনি। ৯২ ম্যাচ, ১০ গোল, ৮ অ্যাসিস্ট – পরিসংখ্যান যেমন বলছে, আবেগের দিক থেকেও তাঁর অবস্থান অনন্য।
রাইট ফরোয়ার্ড: সি.কে. বিনীত
কেরালার নিজস্ব সন্তান। ২০১৬ সেই চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে লেট ব্রেস আজও ভোলেনি কেউ। ৪২ ম্যাচে ১১ গোল, ২ অ্যাসিস্ট। বিনীত ছিলেন, আছেন, থাকবেন কেরালা ব্লাস্টার্সের ইতিহাসে।
লেফ্ট ফরোয়ার্ড: আয়ান হিউম
কেরালার প্রথম গোলদাতা, প্রথম তারকা। কানাডিয়ান স্ট্রাইকারটির ডিটারমিনেশন এবং স্টাইল তাঁকে দ্রুত জনপ্রিয় করে তোলে। পরিসংখ্যান হয়তো মাঝারি, কিন্তু আবেগের দিক দিয়ে তিনি কিংবদন্তি।
সেন্টার ফরোয়ার্ড: দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস
কেরালা ব্লাস্টার্সের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও একমাত্র গোল্ডেন বুট জয়ী। ৩৮ ম্যাচে ২৩ গোল, ৬ অ্যাসিস্ট এই গ্রিক স্ট্রাইকার ইতিহাস গড়েছেন ও ভুকোমানোভিচের যুগে ব্লাস্টার্সকে প্লে-অফে পৌঁছে দিয়েছেন।
কেরালা ব্লাস্টার্স এফসির এই সেরা একাদশ শুধুমাত্র পরিসংখ্যান নয়, এটি প্রতিটি ম্যাচ, মুহূর্ত এবং আবেগের প্রতিফলন। এই একাদশের পিছনে রয়েছে কোটি কোটি ‘ইয়েলো আর্মি’ সমর্থকের ভালোবাসা, যাঁরা ক্লাবকে শুধু সমর্থন নয়, নিজেদের জীবনের অংশ করে নিয়েছেন।