সুকান্ত (Sukanta) অবিচল, একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্যে করে বিতর্কে জড়াচ্ছেন তিনি। আজ জরুরি অবস্থার ৫০ বছর পূর্তি এবং মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিবৃতিকে কেন্দ্র করে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন সুকান্ত (Sukanta)। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কীভাবে জরুরি অবস্থার দিবস পালন করতে পারেন? যখন জয়প্রকাশ নারায়ণ কলকাতায় এসেছিলেন, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর গাড়ির উপর উঠে দাঁড়িয়েছিলেন।”
এই বিস্ফোরক মন্তব্যে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের সূচনা হয়েছে। সুকান্ত মজুমদারের এই অভিযোগ জরুরি অবস্থার সময়কার মমতার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, যা তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে চলমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে আরও উত্তপ্ত করেছে।
জরুরি অবস্থার প্রেক্ষাপট
১৯৭৫ সালের ২৫ জুন থেকে ১৯৭৭ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত ভারতে জরুরি অবস্থা জারি ছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার সংবিধানের ৩৫২ অনুচ্ছেদের অধীনে এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে, যা অভ্যন্তরীণ অশান্তির কারণে বলে দাবি করা হয়েছিল। এই সময়ে নাগরিক অধিকার স্থগিত করা হয়, সংবাদমাধ্যমের উপর সেন্সরশিপ আরোপ করা হয় এবং বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
জয়প্রকাশ নারায়ণ,(Sukanta) যিনি জেপি নামে পরিচিত, এই জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর কলকাতা সফরের সময় তরুণী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ির উপর উঠে দাঁড়ানোর ঘটনা বিজেপি নেতারা বারবার উল্লেখ করে তৃণমূল নেত্রীর গণতান্ত্রিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগ (Sukanta)
বালুরঘাটে একটি সভায় সুকান্ত মজুমদার (Sukanta) বলেন, “জরুরি অবস্থার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জয়প্রকাশ নারায়ণের গাড়ির উপর উঠে দাঁড়িয়ে পড়েন। তিনি সেই সময় কংগ্রেসের সমর্থক ছিলেন। এখন তিনি গণতন্ত্রের কথা বলেন, কিন্তু তাঁর অতীত এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার পশ্চিমবঙ্গে একটি ‘জরুরি অবস্থার মতো পরিস্থিতি’ সৃষ্টি করেছে। তিনি দাবি করেন, রাজ্যে গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের উপর আক্রমণ চলছে।
সাম্প্রতিক সময়ে কলকাতায় তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার প্রেক্ষাপটে সুকান্ত মজুমদারের (Sukanta) এই মন্তব্যগুলি সামনে এসেছে। গত ২০ জুন, কলকাতার ভবানীপুরে তিনি একজন এনআরআই চিকিৎসক রজত শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় পুলিশ তাঁকে আটক করে।
এই চিকিৎসক লন্ডনের কেলগ কলেজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতার সময় প্রশ্ন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। সুকান্ত দাবি করেন, পুলিশ তাঁকে এবং চিকিৎসককে লালবাজার পুলিশ সদর দফতরে নিয়ে যায়, যা তিনি মমতা সরকারের ‘গণতন্ত্রবিরোধী’ আচরণের প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া
তৃণমূল কংগ্রেস সুকান্ত মজুমদারের (Sukanta) এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছে। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ প্রণোদিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করেছেন।
জরুরি অবস্থার সময় তিনি ছিলেন একজন তরুণী, এবং তাঁর বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ।” তৃণমূল নেতারা আরও দাবি করেন যে, বিজেপি রাজ্যে অশান্তি সৃষ্টির জন্য উসকানিমূলক মন্তব্য করছে।
তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য সুকান্তের (Sukanta) একটি বিতর্কিত মন্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “সুকান্ত মজুমদার পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার তুলনা সোনাগাছির সঙ্গে করেছেন। এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং অপমানজনক।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “অনুব্রত মণ্ডলের মন্তব্যকে অপরাধ বলা হয়, আর সুকান্তের মন্তব্য কি ঠিক?” এই মন্তব্যের জন্য সুকান্তের বিরুদ্ধে কলকাতার বড়তলা থানায় একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক ঘটনা ও বিতর্ক
সুকান্ত মজুমদার (Sukanta) সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনায় বিতর্কের কেন্দ্রে এসেছেন। গত ১৯ জুন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ এলাকায় তাঁর কনভয়ের উপর ইট-পাথর এবং জুতো নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। তিনি দাবি করেন, এটি তৃণমূল কংগ্রেসের ষড়যন্ত্র এবং রাজ্যে ‘জরুরি অবস্থার মতো পরিস্থিতি’ চলছে। তিনি এই ঘটনার জন্য পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে ‘নিষ্ক্রিয়’ বলে সমালোচনা করেন এবং লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে চিঠি লিখে এই আক্রমণকে ‘সংসদের অধিকার লঙ্ঘন’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে, তৃণমূল মন্ত্রী শশী পঞ্জা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য অত্যন্ত নিন্দনীয়। তিনি মহিলাদের জিহাদি বলেছেন, যারা তাদের এমজিএনআরইজিএ বকেয়া মজুরির দাবিতে প্রতিবাদ করছিলেন।” তিনি আরও বলেন, সুকান্তের মন্তব্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।
Rath Yatra 2025: রথযাত্রা ২০২৫: উৎসবের আমেজ দিঘায়, রইল অনুষ্ঠানের সময়সূচি
জনমত ও রাজনৈতিক প্রভাব
সুকান্ত মজুমদারের (Sukanta) এই মন্তব্য এবং তাঁর সাম্প্রতিক কার্যকলাপ রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিজেপি দাবি করছে, মমতা সরকার বিরোধী দলের কণ্ঠরোধ করছে এবং গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে। অন্যদিকে, তৃণমূল দাবি করছে, বিজেপি রাজ্যে অশান্তি সৃষ্টির জন্য উসকানিমূলক মন্তব্য করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিতর্ক নিয়ে তীব্র আলোচনা চলছে। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষও সুকান্তের সমর্থনে বলেন, “জরুরি অবস্থার সময় মমতা ইন্দিরা গান্ধীর পাশে ছিলেন। তাঁর হাতেও সেই রক্ত লেগে আছে।”
জরুরি অবস্থার ৫০ বছর পূর্তির প্রেক্ষাপটে সুকান্ত মজুমদারের এই মন্তব্য পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অতীত এবং তাঁর বর্তমান শাসনের গণতান্ত্রিক অবস্থান নিয়ে বিজেপির এই আক্রমণ তৃণমূলের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছে। আগামী দিনে এই বিতর্ক কোন দিকে যায়, তা রাজ্যের রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।