স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগ (SSC Teacher Recruitment) প্রক্রিয়ায় এক বড় পরিবর্তনের পথে হাঁটল রাজ্য সরকার। নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে বড়সড় সংশোধন আনল SSC। সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে কমিশন জানিয়ে দিল, ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আর কোনও কাস্ট ভিত্তিক আবেদন নেওয়া হবে না।
❖ কাস্ট ভিত্তিক আবেদন আপাতত বন্ধ
বর্তমানে যেসব প্রার্থী আবেদন করবেন, তাঁদেরকে সাধারণ (General) প্রার্থী হিসেবেই আবেদন করতে হবে। অর্থাৎ, প্রার্থী SC, ST না OBC—সেই ভিত্তিতে কোনও পৃথক বিভাগে আবেদন করা যাবে না। কাস্ট ক্যাটাগরি অনুযায়ী আলাদা করে ফর্ম পূরণের সুযোগ দেওয়া হবে পরে, মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার পর। স্কুল সার্ভিস কমিশনের স্পষ্ট বক্তব্য—‘‘ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলার রায় না আসা পর্যন্ত আবেদনপত্রে কোনও জাতি (Caste) বা ক্যাটাগরি উল্লেখ করতে পারবেন না প্রার্থীরা।’’
❖ কেন এই সিদ্ধান্ত?
বর্তমানে কলকাতা হাইকোর্টে ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত একাধিক মামলা বিচারাধীন। অভিযোগ উঠেছে, ২০১০ সালের পর রাজ্য সরকার কিছু সম্প্রদায়কে ওবিসি ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করেছিল রাজনৈতিক সুবিধার জন্য। এর বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা (PIL) দায়ের হয়। মামলাটি এখন বিচারাধীন এবং সম্ভাব্য সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
SSC জানিয়েছে, আদালতের চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত কোনও রকম বিভ্রান্তি বা আইনি জট এড়াতে তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদি পরে হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, তবে পূর্বে কাস্ট উল্লেখ করে যারা আবেদন করেছেন, তাঁদের তথ্য সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হবে।
❖ আগেই যারা কাস্ট উল্লেখ করে আবেদন করেছেন?
SSC-এর বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, যারা ইতিমধ্যেই কাস্ট বা ক্যাটাগরি উল্লেখ করে আবেদন করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও এই নির্দেশিকা প্রযোজ্য। আদালতের নির্দেশ এলে তাঁদের ফর্ম সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হবে। ফলে এই বিষয়ে কেউ যাতে ভয় না পান বা বিভ্রান্ত না হন, সেই বার্তা দিচ্ছে SSC।
❖ SSC-এর বিজ্ঞপ্তির মূল পয়েন্ট:
1. আপাতত কোনও কাস্ট বা ক্যাটাগরি অনুযায়ী আবেদন নেওয়া হবে না।
2. সাধারণ প্রার্থী হিসেবেই সকল আবেদনকারীকে ফর্ম পূরণ করতে হবে।
3. ওবিসি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর SSC নতুন করে একটি উইন্ডো খুলে দেবে, যেখানে আবেদনকারীরা তাঁদের প্রকৃত ক্যাটাগরি বা কাস্ট উল্লেখ করতে পারবেন।
4. যাঁরা ইতিমধ্যেই কাস্ট উল্লেখ করে আবেদন করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও ভবিষ্যতে সংশোধনের সুযোগ থাকবে।
❖ কী বলছেন শিক্ষাজগৎ?
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একাংশ মনে করছে, SSC-এর এই পদক্ষেপ আইনি সতর্কতার অংশ এবং এতে ভবিষ্যতের জটিলতা অনেকটাই কমবে। তবে অন্যপক্ষের মত, কাস্ট ভিত্তিক আবেদন না নেওয়ায় অনেক প্রার্থী বিভ্রান্ত হবেন, কারণ সংরক্ষণের সুবিধা নেওয়া তাঁদের পক্ষে আপাতত সম্ভব নয়।
বিশেষ করে গ্রামীণ এবং পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের প্রার্থীরা এই প্রক্রিয়ার জটিলতা বুঝে উঠতে পারবেন না বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। তাই SSC-এর তরফে বিশদ ব্যাখ্যা সহ একটি তথ্য সহায়তা হেল্পলাইন চালু করা দরকার বলেও অনেকে পরামর্শ দিচ্ছেন।
❖ ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ
ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলার ফলাফল এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বড় প্রভাব ফেলতে পারে। রাজ্য সরকার এবং SSC চাইছে যাতে কোনওরকম আইনি বাধা ছাড়াই নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে যায়। তাই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্যাটাগরি ভিত্তিক আবেদন স্থগিত রেখে একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কমিশনের এই সিদ্ধান্তে আপাতত নিয়োগপ্রার্থীদের মধ্যে কিছুটা ধোঁয়াশা থাকলেও, ভবিষ্যতে ক্যাটাগরি সংশোধনের সুযোগ পাওয়া যাবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের এই উদ্যোগকে অনেকেই দায়িত্বশীল এবং ভবিষ্যৎমুখী সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন। তবে, আবেদনকারীদের সঠিক তথ্য দেওয়া এবং প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখার দিকে প্রশাসনকে আরও নজর দিতে হবে—এই মত বিশেষজ্ঞদের। এখন নজর থাকবে হাইকোর্টের রায়ের দিকে এবং SSC কবে সেই কাস্ট ফিল আপ উইন্ডো খোলে তার দিকেও।