হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন, তারপরই রথযাত্রা উপলক্ষে ভক্তদের ঢল নামবে ওড়িশার শ্রীক্ষেত্র পুরীতে (Puri)। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন জগন্নাথদেবের রথ টানতে। সেই ভিড় সামাল দিতে পূর্ব উপকূল রেল (East Coast Railway) বড় সিদ্ধান্ত নিল। চলতি বছরে মোট ৩৬৫টি রথযাত্রা স্পেশাল ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত বছর এই সংখ্যাটা ছিল ৩১৫টি। এবার সেই তুলনায় আরও ৫০টি বেশি ট্রেন চালানো হবে। উদ্দেশ্য একটাই— ভক্তদের নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিত করা, ট্রেন টিকিটের হাহাকার কমানো এবং ভিড়ের কারণে যাতে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে, তা রোখা।
রেলের তরফে জানানো হয়েছে, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, প্রতিবেশী আরও একাধিক রাজ্য থেকেও এই বিশেষ ট্রেন চালানো হবে। হাওড়া ও সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে পুরীর উদ্দেশে ছাড়বে একাধিক এক্সপ্রেস ও সুপারফাস্ট ট্রেন। বাংলার যাত্রীদের সুবিধার্থে এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
দক্ষিণ পূর্ব রেল সূত্রে খবর, আগামী ২৫ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত আরও একজোড়া অতিরিক্ত স্পেশাল লোকাল ট্রেন চলবে পাঁশকুড়া থেকে দিঘা এবং দিঘা থেকে পাঁশকুড়ার মধ্যে। এই ট্রেন পাঁশকুড়া থেকে সকাল ৭টায় ছেড়ে দিঘা পৌঁছবে সকাল ন’টা বেজে কুড়ি মিনিটে। ওই একই ট্রেন দিঘা থেকে সকাল ন’টা বেজে ৩০ মিনিটে ছেড়ে পাঁশকুড়া পৌঁছবে সকাল ১১টা বেজে ৫০ মিনিটে।
শুধু হাওড়া বা কলকাতা নয়, বিশাখাপত্তনম (আন্ধ্রপ্রদেশ), গোন্দিয়া (ছত্তিশগড়), গুনুপুর, বালেশ্বর, বীরমিত্রপুর, জুনাগড় রোড, আঙ্গুল, বাদামপাহাড়, জগদ্দলপুর, রায়গড়-সহ ওড়িশার বহু জায়গা থেকেও স্পেশাল ট্রেন চালানো হবে।
রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, রথ উৎসব উপলক্ষে যাত্রীদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে এবং অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতে প্রতিটি ট্রেনে থাকবে পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা। ট্রেনগুলোয় বাড়ানো হবে রেক সংখ্যা এবং বিশেষ মেডিকেল সাপোর্ট টিমও প্রস্তুত থাকবে দীর্ঘ যাত্রার জন্য।
গত কয়েক বছর ধরে রথযাত্রার সময় ট্রেনের টিকিট ঘিরে চরম বিশৃঙ্খলার ছবি উঠে এসেছে। বহু যাত্রী টিকিট না পেয়ে শেষ মুহূর্তে ভুগেছেন। এমনকি অসংখ্য দুর্ঘটনার কথাও সামনে এসেছে যেখানে ভিড়ের চাপে ট্রেন থেকে পড়ে যাওয়া, স্টেশনে ধাক্কাধাক্কি কিংবা অনলাইন টিকিট বুকিংয়ে ত্রুটি ঘটেছে।
এই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার অনেক আগে থেকেই পদক্ষেপ নিল রেল কর্তৃপক্ষ। পূর্ব উপকূল রেল জানিয়েছে, রথযাত্রার প্রধান দিন ২৭ জুন শুক্রবার। তবে এই বিশেষ ট্রেনগুলি ঠিক কবে থেকে চালু হবে বা তার সময়সূচী কেমন হবে, তা এখনও বিস্তারিতভাবে ঘোষণা করা হয়নি। শীঘ্রই সমস্ত সূচি রেলওয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ও নোটিস বোর্ডে প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।
এছাড়াও, IRCTC-এর পক্ষ থেকেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে অনলাইন টিকিট বুকিং নির্বিঘ্ন করতে। সিস্টেম আপগ্রেড করা হয়েছে যাতে অতিরিক্ত চাপেও সার্ভার না ক্র্যাশ করে। এমনকি তীর্থযাত্রীদের জন্য বিশেষ ট্যুর প্যাকেজও আনা হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
সব মিলিয়ে এবছরের রথযাত্রা ঘিরে রেলের প্রস্তুতি তুঙ্গে। এই বিশাল আয়োজন সফল হলে আগামী বছরগুলোতেও একই মডেল অনুসরণ করা হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।