বিশ্বের জনবহুল শহরগুলোর তালিকা (Most Populous Cities) প্রতি বছর নতুন তথ্য এবং গবেষণার আলোকে পরিবর্তিত হয়। ২০২৫ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ভারতের রাজধানী দিল্লি বিশ্বের জনসংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু প্রথম স্থানটি কার? এই প্রশ্নের উত্তর হলো জাপানের টোকিও। গ্লোবাল স্ট্যাটিসটিক্স (@Globalstats11) এর সাম্প্রতিক পোস্ট অনুযায়ী, টোকিওর জনসংখ্যা ৩৭.১ মিলিয়ন, যা দিল্লির ৩৩.৮ মিলিয়নকে পিছনে ফেলে। এই তথ্যটি বিশ্বের শহরায়নের গতি ও ভারতের দ্রুত আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের একটি প্রতিবিম্ব।
টোকিও: বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহর
টোকিও, জাপানের রাজধানী, এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহর হিসেবে পরিচিত। ৩৭.১ মিলিয়ন জনবাহুল্য এই শহরকে একটি মহাশহরে রূপান্তরিত করেছে। এই সংখ্যাটি শুধুমাত্র শহরের কেন্দ্রীয় অঞ্চল নয়, বরং এর বিস্তৃত মেট্রোপলিটন এলাকাকে বিবেচনা করে গণনা করা হয়েছে। জাপানের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ টোকিওতে বসবাস করে, যা শহরের অবকাঠামো, পরিবহন ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক গতিশীলতার একটি পরিচায়ক। টোকিওর এই অবস্থান শহরায়নের ফলে জনসংখ্যার কেন্দ্রীকরণের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
দিল্লি: ভারতের গর্ব, বিশ্বের দ্বিতীয় স্থান
দিল্লি, ভারতের জাতীয় রাজধানী অঞ্চল (এনসিটি), এখন বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে জনবহুল শহর। ৩৩.৮ মিলিয়ন জনবসতি সঙ্গে দিল্লি শুধুমাত্র টোকিওর পরেই রয়েছে। এই জনসংখ্যা ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিয়ন (এনসিআর)-এর অংশ, যেখানে গাজিয়াবাদ, ফরিদাবাদ, গুরগাঁও, নয়েডা এবং গ্রেটার নয়েডার মতো উপগ্রহ শহরগুলোও অন্তর্ভুক্ত। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী দিল্লির শহরের কেন্দ্রীয় জনসংখ্যা ১১ মিলিয়ন ছিল, কিন্তু বর্তমানে এটি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ৩৩.৮ মিলিয়ন ছুঁয়েছে। এই বৃদ্ধির পেছনে গ্রামীণ থেকে নগরে অভিবাসন, চাকরির সুযোগ এবং শিক্ষার সুযোগের সন্ধান প্রধান কারণ।
শহরায়নের গতি: ভারত ও বিশ্বের পরিস্থিতি
২০২৫ সালের আলোকে বিশ্বব্যাপী শহরায়নের গতি অসাধারণভাবে বেড়েছে। জাতিসংঘের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের ৫৮% জনসংখ্যা শহরে বসবাস করে। ভারতেও এই প্রতিশত বাড়ছে, বিশেষ করে দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু এবং কলকাতার মতো শহরগুলোতে। দিল্লির জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো কৃষি অঞ্চল থেকে শহরে চলে আসা শ্রমিক বর্গ। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভারতের শহরায়নের হার ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০% ছাড়িয়ে যাবে, যা দিল্লির মতো শহরগুলোর জনসংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
অপর জনবহুল শহরগুলো
টোকিও ও দিল্লির পরে তালিকায় চীনের শাংহাই (২৯.৮ মিলিয়ন), বাংলাদেশের ঢাকা (২৩.৯ মিলিয়ন), এবং ব্রাজিলের সাও পাওলো (২২.৮ মিলিয়ন) রয়েছে। এই তালিকায় আফ্রিকান শহরগুলোর উত্থানও লক্ষণীয়। লাগোস (১৬.৫ মিলিয়ন) এবং কিনশাসা (১৭ মিলিয়ন) এখন বিশ্বের শীর্ষ ২০ শহরের মধ্যে রয়েছে। আইওসিডি-২০২৫ তথ্য অনুযায়ী, আফ্রিকার শহরায়নের হার ২০৫০ সালের মধ্যে ৪০০% বৃদ্ধি পাবে, যা ভবিষ্যতে এই মহাদেশের শহরগুলোর গুরুত্ব আরও বাড়াবে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
এতো বড় জনসংখ্যার সঙ্গে শহরগুলোর সম্মুখীন হওয়া চ্যালেঞ্জগুলো অসংখ্য। দিল্লিতে বায়ু দূষণ, যানবাহন ভিড়, এবং পানি সরবরাহের সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। টোকিওর মতো শহরেও জনসংখ্যার চাপে অবকাঠামোর উন্নতি প্রয়োজন। তবে এই শহরগুলো অর্থনৈতিক বৃদ্ধির কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করছে। দিল্লি তৃতীয় খাতে ৭০.৯৫% অবদান রাখে, যা এটিকে ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট
জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ প্রক্ষাপণ অনুযায়ী, ২১০০ সালে ভারতের জনসংখ্যা ১.৫৩৩ বিলিয়ন হতে পারে, যেখানে দিল্লির অবদান উল্লেখযোগ্য হবে। টোকিওর জনসংখ্যা কিন্তু কমতে পারে, কারণ জাপানের জন্মহার কমছে। এই পরিস্থিতিতে দিল্লি ভবিষ্যতে প্রথম স্থান দখল করতে পারে।
টোকিও এখন প্রথম, কিন্তু দিল্লির দ্রুত উত্থান বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। শহরায়নের এই যাত্রা চ্যালেঞ্জ ও সুযোগের সমন্বয়। ভারত ও বিশ্বের জনগোষ্ঠী পরিচালনায় সরকারি ও বৈশ্বিক প্রচেষ্টা বাড়তে হবে, যাতে এই শহরগুলো স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ থাকে।