ইসরায়েলের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত (Israeli-Ambassador) রিউভেন আজার সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছেন, যা থেকে জানা যায় যে ইরান মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। এই দাবির সমর্থনে ইসরায়েলের কাছে কঠিন প্রমাণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এই ঘটনায় এ,আমেরিকার সামরিক ও কূটনৈতিক ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠেছে। রিউভেন আজারের (Israeli-Ambassador) বক্তব্য এই গুরুতর পরিস্থিতির পটভূমি এবং ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের দিক নির্দেশ করে। রিউভেন আজার জানিয়েছেন, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির উপর নজর রেখেছে।
তিনি বলেন, “ইরান গোপনে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ রয়েছে যে তারা মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে পারত।”
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ইরানের পারমাণবিক কার্যকলাপে সন্দেহজনক অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি (এনপিটি) লঙ্ঘনের ইঙ্গিত দেয়। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ইরান ফোর্ডো, নাতানজ, এবং ইসফাহানের গোপন স্থাপনায় উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করছিল।
ইসরায়েলের (Israeli-Ambassador) এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকা কীভাবে এই ঘটনায় জড়িয়ে পড়ল? রিউভেন আজার জানান, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক হুমকির বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। তিনি বলেন, “ইসরায়েল এবং আমেরিকা সম্পূর্ণ সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছে।
আমরা মার্কিন প্রশাসনের কাছে ইরানের পারমাণবিক অগ্রগতির প্রমাণ পেশ করেছি।” জেরুজালেম পোস্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও আমেরিকা যৌথভাবে একটি ‘কূটনৈতিক প্রতারণা’ পরিকল্পনা করেছিল, যার মাধ্যমে ইরানকে পারমাণবিক আলোচনায় ব্যস্ত রেখে আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
২০২৫ সালের ১৩ জুন ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর অধীনে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় প্রাক-আক্রমণ চালায়। এরপর ২১ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান ব্যবহার করে ফোর্ডো, নাতানজ, এবং ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা “সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস” করা হয়েছে।
তবে, ইরান দাবি করেছে, তাদের স্থাপনাগুলো অক্ষত রয়েছে এবং সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। আজার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “ইরানীরা হামলার প্রভাব কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে। ইসরায়েল ও মার্কিন হামলা অত্যন্ত নিখুঁত ছিল।”
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির হুমকি সম্পর্কে আজার (Israeli-Ambassador) বলেন, “ইরান একটি সন্ত্রাসবাদী দেশ, যারা বারবার ইসরায়েলকে ধ্বংস করার হুমকি দিয়েছে। তারা পারমাণবিক অস্ত্রের মাধ্যমে এই হুমকি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছিল।”
তিনি আরও বলেন, ইরানের আগ্রাসী নীতি এবং চরমপন্থী মতাদর্শ এটিকে অন্যান্য পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর তুলনায় আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে। ইসরায়েলের দাবি, ইরান শুধু পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে এগোচ্ছিল না, বরং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের একটি বিশাল মজুত গড়ে তুলছিল, যা ইসরায়েলের জন্য “অস্তিত্বের হুমকি” সৃষ্টি করেছিল।
আমেরিকার ভূমিকা সম্পর্কে আজার বলেন, (Israeli-Ambassador) “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হুমকি দূর করতে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমরা তাঁর এই সিদ্ধান্তের জন্য কৃতজ্ঞ।” তিনি আরও জানান, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ৯ জুন ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পরিকল্পনার রূপরেখা তুলে ধরেন। ট্রাম্প গোয়েন্দা তথ্য সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন, যা পরে সরাসরি সামরিক হামলায় রূপ নেয়।
ইরান অবশ্য এই হামলাকে “অবৈধ” এবং “যুদ্ধের কাজ” বলে নিন্দা করেছে। ইরানের রাষ্ট্রসংঘের রাষ্ট্রদূত(Israeli-Ambassador) আমির সাঈদ ইরাভানি জানিয়েছেন, এই হামলার জন্য ইরান “সমানুপাতিক প্রতিক্রিয়া” দেবে। তিনি ইসরায়েলকে মার্কিন নীতি হাইজ্যাক করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
আজার ভারতের ভূমিকা নিয়েও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে ভারত পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।” তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক কথোপকথনের উল্লেখ করে বলেন, ভারতের উদ্বেগ বৈধ এবং এটি কূটনৈতিক সমাধানে সহায়ক হতে পারে।
আচমকা বন্ধ চা বাগান, আন্দোলনের হুঁশিয়ারি বিজেপির
এই ঘটনা পশ্চিম এশিয়ায় (Israeli-Ambassador) উত্তেজনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। রিউভেন আজার জোর দিয়ে বলেন, “ইসরায়েল কখনোই মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক অস্ত্র প্রবর্তনের পক্ষে নয়। আমরা শুধু আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছি।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই হামলা ইরানকে পারমাণবিক আলোচনায় ফিরিয়ে আনবে।
এই সংঘাতের ফলে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বাড়ছে। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এই হামলাকে “বিপজ্জনক” বলে নিন্দা করেছেন। তবে, ইসরায়েল ও আমেরিকার দাবি, এই পদক্ষেপ বিশ্বকে পারমাণবিক সন্ত্রাসের হুমকি থেকে রক্ষা করেছে।