আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাংলার এক নতুন তারার উত্থান—মালদহের তরুণ তিরন্দাজ জুয়েল সরকার (Juyel Sarkar) সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ আর্চারি স্টেজ-২ প্রতিযোগিতায় রুপোর পদক জিতে গোটা রাজ্যবাসীর গর্বের কারণ হয়ে উঠেছেন। ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে পুরুষদের রিকার্ভ ইভেন্টে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে তিনি দেশের হয়ে একটি রুপো জেতেন।
জুয়েল বর্তমানে ঝাড়গ্রামের বেঙ্গল আর্চারি অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাঁর কঠোর পরিশ্রম এবং প্রতিভার ফলেই এই আন্তর্জাতিক সাফল্য এসেছে বলে কোচ ও অ্যাকাডেমি সূত্রে জানা গিয়েছে। উল্লেখযোগ্য যে, এবারের এশিয়া কাপের দ্বিতীয় পর্বে ভারতের জুনিয়র তিরন্দাজরা মোট ন’টি পদক নিয়ে ফিরেছেন, যার মধ্যে রয়েছে দু’টি সোনা, ছ’টি রুপো ও একটি ব্রোঞ্জ। এর মধ্যেই অন্যতম উজ্জ্বল নাম হয়ে উঠেছেন জুয়েল।
এই অসাধারণ সাফল্যের জন্য জুয়েল সরকারকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি তাঁর এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “জুয়েল সরকার আজ আর্চারি এশিয়া কাপ স্টেজ ২-এ রুপোর পদক জিতেছেন। এটা অত্যন্ত গর্বের মুহূর্ত। পুরুষদের রিকার্ভ দলের সদস্য জুয়েলকে অভিনন্দন। তাঁর পরিবার এবং কোচেদেরও অভিনন্দন।” মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তা আরও একবার স্পষ্ট করে দেয় রাজ্যের তরুণ খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক পরিসরে কেমন দাপট দেখাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, রাজ্য থেকে এশিয়া কাপে একমাত্র জুয়েলই ভারতের মূল দলে সুযোগ পান। তাঁর এই যাত্রার পিছনে রয়েছে দীর্ঘ প্রস্তুতি ও কঠিন প্রতিযোগিতামূলক ট্রায়াল প্রক্রিয়া। আর্চারি অ্যাকাডেমি সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ মে থেকে ২৫ মে পুণের আর্মি স্পোর্টস ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এশিয়া কাপ স্টেজ-২ ও ওয়ার্ল্ড আর্চারি ইউথ প্রতিযোগিতার ট্রায়াল। সেখানেই জুয়েল সরকার দুর্দান্তভাবে ১৯৮৪ পয়েন্ট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন এবং জাতীয় দলের জন্য নির্বাচিত হন।
তাঁর কোচ জানান, জুয়েলের মধ্যে অসম্ভব ধৈর্য, মনসংযোগ ও টেকনিক্যাল দক্ষতা রয়েছে। খুব অল্প বয়সেই তার লক্ষ্য স্থির ছিল—দেশের হয়ে খেলার। ছোট শহর মালদহ থেকে উঠে এসে এখন তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন, যা বহু তরুণ তিরন্দাজের অনুপ্রেরণা হতে পারে।
এদিন জুয়েলের সাফল্যে তাঁর পরিবারও আবেগাপ্লুত। জুয়েলের বাবা বলেন, “ছেলেকে সবসময় স্বপ্ন দেখিয়েছি বড় কিছু করার। আজ সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ আমরা দেখতে পাচ্ছি।”
এই অর্জন বাংলা তথা ভারতের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য একটি বড় দৃষ্টান্ত। ভবিষ্যতে আরও বড় মঞ্চে জুয়েল তাঁর সাফল্যের ধারা বজায় রাখবেন, এই আশা রাখেন সবাই। রাজ্য ক্রীড়া দপ্তর এবং আর্চারি অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকেও জুয়েলের জন্য বিশেষ প্রশংসা ও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
সফল এই তিরন্দাজের লক্ষ্য এবার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সোনা জয়। নিজের প্রতিভা ও অধ্যবসায়ে জুয়েল সরকার নিঃসন্দেহে আগামী দিনে ভারতীয় আর্চারির এক উজ্জ্বল নাম হয়ে উঠতে পারেন।