কলকাতা: বর্ষা এখনও জোরেশোরে না নামলেও রাজ্য প্রশাসন বন্যা মোকাবিলায় আগে থেকেই কোমর বেঁধে নামছে। বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ও মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাজ্যের চার মন্ত্রীকে চারটি বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে মোতায়েন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই বৈঠকে মূলত বর্ষাকালে সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি ও তার মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়। রাজ্যের বন্যা প্রবণ এলাকাগুলিতে যাতে আগে থেকেই তৎপরতা থাকে এবং পরিস্থিতি হাতের বাইরে না যায়, তার জন্য এই বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর।
কোন মন্ত্রী কোথায় থাকবেন?
পুলক রায় থাকবেন হাওড়ার আমতা ও উদয়নারায়ণপুরে, যা বর্ষাকালে ঘন ঘন জলের তলায় চলে যায়।
মানষ ভূঁইয়াকে পাঠানো হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে, যেখানে বর্ষা এলেই জলস্ফীতির আশঙ্কা থাকে।
ফিরহাদ হাকিম নজর রাখবেন হুগলির আরামবাগ, খানাকুল ও গোঘাটে, এলাকাগুলি প্রতি বছরই ঘরবাড়ি ভাসিয়ে দেয় বৃষ্টি।
মলয় ঘটক যাবেন পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলায়, যেখানে পাহাড়ি ঢল ও নদী উপচে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ও প্রস্তুতি
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বৈঠকে স্পষ্ট করে জানান, “প্রাকৃতিক দুর্যোগকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। আগেভাগে প্রস্তুতি থাকলেই বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব।” সেইসঙ্গে তিনি বলেন, জেলাগুলিতে মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে প্রশাসনিক সমন্বয় আরও মজবুত হবে এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে সুবিধা হবে।
রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী বলেন, “প্রতি বছর বর্ষার সময় রাজ্যের বহু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এবার আমরা আগেই সতর্কতা নিচ্ছি। এই চারজন মন্ত্রী নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত অঞ্চলে প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন।”
জরুরি পরিষেবা ও অন্যান্য পদক্ষেপ
সরকার ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলায় বাঁধ মেরামত, জল নিষ্কাশনের দিক নজরদারি এবং ত্রাণশিবির প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) ও রাজ্যের বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দফতরের সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, প্রতিটি বন্যাপ্রবণ জেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে, যেখানে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালানো হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি, জেলাভিত্তিক হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে স্টক করে রাখা হচ্ছে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও খাদ্যসামগ্রী।
রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বার্তা
রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ প্রশাসনিক প্রস্তুতির পাশাপাশি রাজনৈতিক বার্তাও বহন করে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নির্বাচনের প্রাক্কালে জনমানসে বিশ্বাস তৈরি করাই এই পদক্ষেপের অন্যতম লক্ষ্য।
ফলত, রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে পরিষ্কার বার্তা: বন্যা পরিস্থিতি হোক বা দুর্যোগ—তৃণমূল সরকার সব সময় পাশে থাকবে।