হাসিমারা স্টেশনে অগ্নিকাণ্ড মকড্রিল, আরপিএফ-দমকলের তৎপরতা

অয়ন দে, উত্তরবঙ্গ: বুধবার সকালে হাসিমারা রেলস্টেশনে (Hasimara Station) হঠাৎ সাইরেনের শব্দে চমকে ওঠেন যাত্রীরা। দমকলের ইঞ্জিন, অ্যাম্বুলেন্স, আরপিএফ (রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স), জিআরপি (গভর্নমেন্ট রেলওয়ে…

Hasimara Station Conducts Fire Mock Drill, RPF and Disaster Team Shine

অয়ন দে, উত্তরবঙ্গ: বুধবার সকালে হাসিমারা রেলস্টেশনে (Hasimara Station) হঠাৎ সাইরেনের শব্দে চমকে ওঠেন যাত্রীরা। দমকলের ইঞ্জিন, অ্যাম্বুলেন্স, আরপিএফ (রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স), জিআরপি (গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশ) এবং কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবেলা দলের সদস্যদের ছুটোছুটি দেখে প্রথমে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কাউকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কারও স্টেশনেই চলছে প্রাথমিক চিকিৎসা। এই দৃশ্য দেখে যাত্রীরা প্রথমে ভেবেছিলেন, কোনও দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই জানা যায়, এটি ছিল একটি মকড্রিল—ট্রেনে অগ্নিকাণ্ড বা অন্য কোনও জরুরি পরিস্থিতির মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে এই মহড়া আয়োজিত হয়েছিল। এই ঘটনায় যাত্রীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও, এই মকড্রিল রেল কর্তৃপক্ষের তৎপরতা ও প্রস্তুতির একটি উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

হাসিমারা রেলস্টেশনে এই মকড্রিল শুরু হয় সকাল ১০টা নাগাদ। এই মহড়ায় অংশ নিয়েছিলেন আরপিএফ, জিআরপি, স্থানীয় পুলিশ, দমকল বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবেলা দলের সদস্যরা। মকড্রিলের মূল উদ্দেশ্য ছিল ট্রেনে অগ্নিকাণ্ড বা অন্য কোনও দুর্ঘটনার সময় কীভাবে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করা যায়, তা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো। এছাড়াও, যদি কোনও যাত্রী পদপিষ্ট হন বা আহত হন, তাঁদের কীভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হবে এবং নিরাপদে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে, তা নিয়েও এই মহড়ায় অনুশীলন করা হয়।

   

এই মকড্রিলের সময় স্টেশনে উপস্থিত যাত্রীরা প্রথমে আতঙ্কিত হলেও পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে স্বস্তি পান। একজন যাত্রী বলেন, “আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম, সত্যিই কোনও দুর্ঘটনা ঘটেছে। সাইরেনের শব্দ, দমকলের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স—সব দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পরে যখন জানলাম এটা মকড্রিল, তখন মনে হলো এটা খুবই প্রয়োজনীয়। এরকম প্রস্তুতি থাকলে আমরা যাত্রীরা নিরাপদ বোধ করি।”

আরপিএফ আধিকারিক রুনু মণ্ডল জানান, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এই মকড্রিল আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো এই ধরনের জরুরি পরিস্থিতিতে কীভাবে দ্রুত এবং সঠিকভাবে কাজ করতে হবে, তা নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা। এই মহড়ায় বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয় কীভাবে কাজ করে, তা পরীক্ষা করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের মকড্রিল নিয়মিত করা হলে যাত্রীদের নিরাপত্তা আরও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”

Advertisements

হাসিমারা রেলস্টেশন উত্তরবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন, যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করেন। এই স্টেশনে এমন মকড্রিলের মাধ্যমে রেল কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দিয়েছে। এই ধরনের মহড়া শুধু কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতিই নিশ্চিত করে না, বরং যাত্রীদের মধ্যেও নিরাপত্তার বোধ জাগায়। বিশেষ করে, অগ্নিকাণ্ডের মতো জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেওয়া এবং উদ্ধারকার্য পরিচালনা করার ক্ষেত্রে এই মকড্রিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই মকড্রিলে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয় ছিল চোখে পড়ার মতো। দমকল বিভাগ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের কৌশল প্রদর্শন করে। অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া অনুশীলন করা হয়। এছাড়াও, আরপিএফ এবং জিআরপি সদস্যরা ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং যাত্রীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজে দক্ষতা দেখিয়েছে। বিপর্যয় মোকাবেলা দলের সদস্যরা উদ্ধারকার্যে তাদের প্রশিক্ষণের প্রয়োগ ঘটিয়েছে।

এই ধরনের মকড্রিল ভারতীয় রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধু কর্মীদের প্রশিক্ষণই নিশ্চিত করে না, বরং যাত্রীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করে। হাসিমারার এই ঘটনা প্রমাণ করে যে ভারতীয় রেল জরুরি পরিস্থিতির জন্য সবসময় প্রস্তুত। ভবিষ্যতে এই ধরনের মহড়া আরও নিয়মিতভাবে আয়োজন করা হলে, রেলযাত্রা আরও নিরাপদ ও সুরক্ষিত হবে।