পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার দাবিতে আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (congress)। কালীগঞ্জে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচন প্রক্রিয়া সুনিশ্চিত করার দাবিতে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করেছে।
এই স্মারকলিপি প্রদানের জন্য গঠিত কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির (এআইসিসি) নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী, কংগ্রেস নেতা প্রশান্ত দত্ত এবং রাজ্য কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়। এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
নির্বাচনী সংস্কারের দাবি ও স্মারকলিপির তাৎপর্য
পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলোচনা ও বিতর্ক চলছে। বিশেষ করে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্যে রাজনৈতিক সহিংসতা ও ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠেছিল, যা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল।
এই প্রেক্ষাপটে কংগ্রেসের (congress) এই স্মারকলিপি প্রদান একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। স্মারকলিপিতে কংগ্রেস দল কালীগঞ্জ এবং রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ করার জন্য বেশ কিছু নির্দিষ্ট প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভোটার তালিকার নির্ভুলতা নিশ্চিত করা, নির্বাচনী সহিংসতা রোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি।
প্রতিনিধি দলের ভূমিকা ও বক্তব্য (congress)
প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা শুভঙ্কর সরকার স্মারকলিপি প্রদানের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন(congress)। কিন্তু গত কয়েকটি নির্বাচনে আমরা দেখেছি যে, ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম অন্তর্ভুক্তি, সহিংসতা এবং নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগ বারবার উঠেছে।
আমরা চাই, কালীগঞ্জসহ রাজ্যের প্রতিটি নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষিত থাকুক এবং কোনো ধরনের সন্ত্রাস বা ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হোক।” তিনি আরও জানান, কংগ্রেস দল নির্বাচন কমিশনের কাছে এই বিষয়ে তদন্ত ও কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে।
এআইসিসি নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে বলেন, “নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কালীগঞ্জে যে সমস্যাগুলি লক্ষ্য করেছি, তা শুধু এই অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি রাজ্যের অন্যান্য অংশেও প্রতিফলিত হচ্ছে।
ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম, নির্বাচনী সহিংসতা এবং প্রশাসনের একাংশের পক্ষপাতমূলক ভূমিকা আমাদের উদ্বেগের কারণ। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।” কংগ্রেস (congress) নেতা প্রশান্ত দত্ত এবং রাজ্য কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়ও এই স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রশান্ত দত্ত বলেন, “কালীগঞ্জের মানুষ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তারা চায় তাদের ভোটাধিকার সুরক্ষিত থাকুক। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যে ধরনের অস্বচ্ছতা ও সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে, তা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। আমরা চাই, নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করুক।”
আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় জোর দিয়ে বলেন, “নির্বাচনী সংস্কার ছাড়া গণতন্ত্রের প্রকৃত চেতনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আমরা আশা করছি, নির্বাচন কমিশন আমাদের দাবিগুলি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে।”
নির্বাচনী সমস্যা ও পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপট
পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ নতুন নয়। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্যের বিভিন্ন অংশে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল, যা রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। বিশেষ করে, ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম অন্তর্ভুক্তি এবং নির্বাচনী সহিংসতার অভিযোগ বারবার উঠেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে, কাকদ্বীপ মহকুমায় একজন নির্বাচনী আধিকারিকের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম যুক্ত করার অভিযোগ উঠেছিল, যার ফলে তাকে সাসপেন্ড করা হয়। এই ধরনের ঘটনা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাস করে এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে।
কংগ্রেস (congress) দল তাদের স্মারকলিপিতে এই সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভোটার তালিকার নিয়মিত পরীক্ষা ও নির্ভুলকরণ, নির্বাচনী সহিংসতা রোধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ, এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি। এছাড়াও, কংগ্রেস দল নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছে যে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হোক।
জাতীয় সড়ক ভ্রমণে সুখবর, টোল ট্যাক্সের ঝামেলা এড়াতে চালু হচ্ছে বার্ষিক পাস
জনগণ ও রাজনৈতিক মহলের প্রতিক্রিয়া
কালীগঞ্জে কংগ্রেসের (congress) এই উদ্যোগ স্থানীয় জনগণের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হলে তাদের ভোটাধিকার আরও সুরক্ষিত হবে। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা চাই আমাদের ভোট সঠিকভাবে গণনা হোক এবং কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন হোক। কংগ্রেসের এই পদক্ষেপ আমাদের আশা জাগিয়েছে।”
রাজনৈতিক মহলেও এই ঘটনা আলোচনার সৃষ্টি করেছে। অনেকে মনে করছেন, কংগ্রেসের এই স্মারকলিপি রাজ্যের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলিকেও নির্বাচনী সংস্কারের দাবি তুলতে উৎসাহিত করবে। তবে, কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন যে, নির্বাচনী সংস্কার একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং এর জন্য সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য প্রয়োজন।
কালীগঞ্জে কংগ্রেসের (congress) স্মারকলিপি প্রদান পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। শুভঙ্কর সরকার, অমিতাভ চক্রবর্তী, প্রশান্ত দত্ত এবং আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গঠিত প্রতিনিধি দলের এই উদ্যোগ গণতন্ত্রের প্রতি কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি পুনরায় নিশ্চিত করেছে। নির্বাচন কমিশন এই স্মারকলিপির প্রতি কীভাবে সাড়া দেয়, তা আগামী দিনে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর গভীর প্রভাব ফেলবে।