চাকরিহারাদের কে সুপ্রিমকোর্টের আবেদনে সাড়া দেওয়ার অনুরোধ ব্রাত্যর

পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya) স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) নিয়োগ মামলায় চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আশ্বাস…

Bratya urges to the teachers

পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya) স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) নিয়োগ মামলায় চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে, রাজ্য সরকার এবং এসএসসি যোগ্য প্রার্থীদের পাশে থাকবে এবং তাঁদের সব ধরনের সাহায্য প্রদান করবে।

সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে ব্রাত্য বসু (Bratya) বলেন, “আপনারা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে চলুন। এসএসসি আপনাদের জন্য লড়ছে এবং আমরা সবরকম সাহায্য করব। আমাদের কাজ করতে দিন, আপনারাও আপনাদের কাজ করুন।” এই বক্তব্য ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের পর সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং চাকরিহারা শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এসেছে।

   

এসএসসি নিয়োগ মামলার পটভূমি

২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে সুপ্রিম কোর্ট গত এপ্রিল মাসে সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করে। এই রায়ে প্রায় ২৫,৭৫২ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয় যে, যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করতে হবে।

তবে, যোগ্য শিক্ষকদের ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত পড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যদি তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকে। এই রায়ের পর চাকরিহারা শিক্ষকরা কলকাতার কসবায় এসএসসি অফিসের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন, যোগ্য-অযোগ্য তালিকা প্রকাশের দাবিতে।

ব্রাত্য বসুর বক্তব্য (Bratya)

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya) সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “আমরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। এসএসসি এবং রাজ্য সরকার যোগ্য প্রার্থীদের পাশে আছে। আমরা কোনো বলপ্রয়োগ করছি না, তবে বিক্ষোভের নামে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করা উচিত নয়।” তিনি আরও বলেন, “সিবিআই-এর তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের কাছে যোগ্য-অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা রয়েছে, কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট আমাদের সেই তালিকা প্রকাশ করতে বলেনি। তাই আমরা আইনি পরামর্শ নিয়ে এগোচ্ছি।”

তিনি চাকরিহারাদের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের জন্যই এসএসসি লড়ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন, যোগ্য প্রার্থীদের বেতন নিশ্চিত করা হবে। আমি নিজে এই দায়িত্ব নিচ্ছি।” তিনি বিক্ষোভকারীদের আইনি প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করার আহ্বান জানান এবং বলেন, “আন্দোলন করুন, তবে তাতে যেন কারও জীবন বিপন্ন না হয়। গোটা শিক্ষা দফতর আপনাদের জন্য কাজ করবে।”

চাকরিহারাদের বিক্ষোভ

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা কলকাতার কসবায় এসএসসি অফিসের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের প্রধান দাবি, যোগ্য-অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা এবং যোগ্যদের দ্রুত নিয়োগপত্র দেওয়া। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেছেন, তালিকা থাকা সত্ত্বেও এসএসসি এবং রাজ্য সরকার তা প্রকাশ করছে না, যা তাঁদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। একজন বিক্ষোভকারী শিক্ষক বলেন, “আমরা যোগ্য, তবু আমাদের চাকরি গেছে। তালিকা থাকলে কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না?”

কসবায় বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটেছে। শিক্ষামন্ত্রী (Bratya) এ বিষয়ে বলেন, “পুলিশ ইতিমধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছে, তাদের কাজে বাধা দেওয়া আইনসম্মত নয়। আমরা কাউকে বলপ্রয়োগ করছি না, তবে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।”

প্রস্তুত ভারতীয় দল, মুখোমুখি হচ্ছে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের

Advertisements

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই মামলা এবং চাকরিহারাদের বিক্ষোভ রাজ্যের রাজনীতিতে বড় বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং সিপিআই(এম) তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে(Bratya)। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “তৃণমূল সরকার শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি করেছে, যার ফলে যোগ্য প্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন তারা তালিকা প্রকাশে গড়িমসি করছে।”

সিপিআই(এম) নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “যোগ্য শিক্ষকদের নিয়োগ দ্রুত করা উচিত। সরকারের উচিত স্বচ্ছতা বজায় রাখা।” তৃণমূলের পক্ষ থেকে কুনাল ঘোষ বলেন, “বিজেপি এই ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ব্রাত্য বসু যোগ্য প্রার্থীদের পাশে আছেন। আমরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে চলব।”

এসএসসি-র ভূমিকা

এসএসসি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিল যে, যোগ্য শিক্ষকদের আপাতত পড়ানোর অনুমতি দেওয়া হোক। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, কোনো অভিযোগ না থাকলে শিক্ষকরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পড়াতে পারবেন। তবে, যোগ্য-অযোগ্য তালিকা প্রকাশ না হওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, “আমরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছি। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মামলায় যোগ্য প্রার্থীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যোগ্য শিক্ষকদের বেতন নিশ্চিত করা হবে। আমরা তাঁদের পাশে আছি।” তবে, তিনি তালিকা প্রকাশের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি, যা বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার আইনি পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, “আমরা একটি কমিটি গঠনের কথা ভাবছি, যারা যোগ্য প্রার্থীদের চিহ্নিত করে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবে।” তবে, বিক্ষোভকারীরা দাবি করেছেন, কমিটি গঠনের আগে তালিকা প্রকাশ করা হোক।

ব্রাত্য বসুর (Bratya) এই বক্তব্য এসএসসি নিয়োগ মামলায় চাকরিহারা শিক্ষকদের আশার আলো দেখিয়েছে। তিনি স্পষ্ট করেছেন, রাজ্য সরকার এবং এসএসসি যোগ্য প্রার্থীদের পাশে আছে এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে কাজ করবে।

তবে, যোগ্য-অযোগ্য তালিকা প্রকাশ না হওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে বিভ্রান্তি এবং ক্ষোভ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। আগামী দিনে এই ইস্যু কীভাবে সমাধান হয়, তা বাংলার শিক্ষাক্ষেত্র এবং রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।