অয়ন দে, আলিপুরদুয়ার: প্যারেড গ্রাউন্ড (Alipurduar Parade Ground) নিয়ে বিতর্ক ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। এই ঐতিহাসিক মাঠের সবুজায়ন ধ্বংস এবং পরিবেশগত ক্ষতির অভিযোগে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবার পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল। অন্যদিকে, বিজেপি অভিযোগ তুলেছে যে তৃণমূল কংগ্রেস এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ‘নোংরা রাজনীতি’ করছে। এই ঘটনা নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র চর্চা চলছে।
Read Hindi: पैराड ग्राउंड विवाद पर पर्यावरण अदालत पहुंचे कार्यकर्ता संगठन
গত ২৯ মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আলিপুরদুয়ারের প্যারেড গ্রাউন্ডে একটি জনসভায় অংশ নিয়েছিলেন। এই জনসভার পর এক সপ্তাহেরও বেশি সময় কেটে গেলেও মাঠের অবস্থা এখনো বেহাল। লাগাতার বৃষ্টির কারণে মাঠের বিভিন্ন জায়গায় জল জমে আছে। এছাড়া, জনসভার জন্য স্থাপিত পেভার ব্লকের রাস্তা, কংক্রিটের নির্মাণ এবং অন্যান্য অস্থায়ী কাঠামো এখনো অপসারণ করা হয়নি। এই পরিস্থিতি মাঠের সবুজায়নের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি এই ক্ষতির জন্য প্রশাসনের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল এই বিষয়ে বলেন, “প্যারেড গ্রাউন্ড আমাদের আবেগের সঙ্গে জড়িত। এই মাঠ শুধু একটি খোলা জায়গা নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। আমরা চাই এই মাঠ তার পূর্বের সবুজ রূপ ফিরে পাক। আগামী দিনে যাতে এই মাঠের আর কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন।” তিনি আরও জানান, মাঠের পরিবেশ পুনরুদ্ধারের জন্য সবুজায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং এই বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
অন্যদিকে, বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, তৃণমূল কংগ্রেস এই ইস্যুকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এক বিজেপি নেতা বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস প্যারেড গ্রাউন্ডের ইস্যুকে নিয়ে নোংরা রাজনীতি করছে, শুধুমাত্র তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব জাহির করার জন্য। এই মাঠের ক্ষতি কেউ চায় না, তবে এটিকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার হাতিয়ার করা ঠিক নয়।” তিনি আরও জানান, প্রশাসন মাঠ পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ শুরু করেছে এবং শীঘ্রই এটি আগের অবস্থায় ফিরবে।
পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। তারা জানিয়েছে, প্যারেড গ্রাউন্ডের সবুজায়ন ধ্বংসের ফলে স্থানীয় পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। একটি সংগঠনের প্রতিনিধি বলেন, “এই মাঠ শুধু খেলাধুলা বা জনসভার জন্য নয়, এটি স্থানীয় জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জনসভার জন্য করা নির্মাণকাজ মাঠের মাটি এবং গাছপালার ক্ষতি করেছে। আমরা পরিবেশ আদালতে এই বিষয়ে মামলা দায়ের করার কথা ভাবছি।”
আলিপুরদুয়ার জেলা, যা ২০১৪ সালে জলপাইগুড়ি থেকে বিভক্ত হয়ে গঠিত হয়েছিল, তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বনজ সম্পদের জন্য পরিচিত। প্যারেড গ্রাউন্ড এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যা শুধুমাত্র স্থানীয়দের জন্য নয়, পর্যটকদের জন্যও আকর্ষণের কেন্দ্র। তবে, জনসভার পর মাঠের বর্তমান অবস্থা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “এই মাঠ আমাদের গর্ব। এটির এমন অবস্থা দেখে আমরা মর্মাহত। প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে মাঠ পুনরুদ্ধার করা।”
পরিবেশ আদালতের ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। সম্প্রতি, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন সংশোধনের জন্য বিভিন্ন সংগঠন এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা নাগরিকদের মামলা দায়েরের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে, প্যারেড গ্রাউন্ডের ক্ষতির বিষয়টি পরিবেশ আদালতে উঠলে এটি একটি নজির স্থাপন করতে পারে।
প্যারেড গ্রাউন্ডের বর্তমান পরিস্থিতি আলিপুরদুয়ারের স্থানীয় বাসিন্দা এবং পরিবেশবাদীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত এবং রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এই ইস্যুকে আরও জটিল করেছে। আগামী দিনে প্রশাসন কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং মাঠের সবুজায়ন পুনরুদ্ধারে কী পদক্ষেপ নেয়, তা নিয়ে সকলের দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে।