রাজ-উদ্ধব জোটে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহলে নতুন জোশ

মহারাষ্ট্রের (maharashtra) রাজনীতিতে একটি নতুন সমীকরণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে) নেতা উদ্ধব ঠাকরে এবং তাঁর খুড়তুতো ভাই রাজ ঠাকরে, যিনি মহারাষ্ট্র (maharashtra)…

maharashtra political news

মহারাষ্ট্রের (maharashtra) রাজনীতিতে একটি নতুন সমীকরণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে) নেতা উদ্ধব ঠাকরে এবং তাঁর খুড়তুতো ভাই রাজ ঠাকরে, যিনি মহারাষ্ট্র (maharashtra) নবনির্মাণ সেনার (এমএনএস) প্রধান, তাঁদের মধ্যে সম্পর্কের জটিলতা দূর করার জন্য ঠাকরে পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও বন্ধুরা মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন। এই সম্ভাব্য মিলন মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।

রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক কৌতূহল

তবে এখনও পর্যন্ত দুই নেতার মধ্যে সরাসরি কোনও যোগাযোগ বা আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব বিনিময় হয়নি। প্রতিবেদন অনুসারে, ঠাকরে পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা উদ্ধব ও রাজের মধ্যে সংলাপ শুরু করার জন্য উভয়ের সঙ্গে আলোচনা করছেন।

   

তাঁদের লক্ষ্য দুই ভাইয়ের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা—হয় ফোনে কথোপকথনের মাধ্যমে, নয়তো মুখোমুখি বৈঠকের মাধ্যমে। এই প্রচেষ্টা মহারাষ্ট্রের (maharashtra) রাজনৈতিক পরিস্থিতির পটভূমিতে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, যেখানে মারাঠি পরিচয় এবং ভাষার ইস্যু সম্প্রতি বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে।

রাজ ঠাকরে সম্প্রতি একটি পডকাস্টে বলেছেন 

রাজ ঠাকরে সম্প্রতি একটি পডকাস্টে বলেছেন, তাঁর এবং উদ্ধবের মধ্যে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক মতপার্থক্য মহারাষ্ট্রের (maharashtra) মারাঠি মানুষের স্বার্থের তুলনায় তুচ্ছ। উদ্ধবও এই বক্তব্যের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন, তবে শর্ত দিয়েছেন যে, রাজকে অবশ্যই বিজেপি বা এন্টি-মহারাষ্ট্র শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।

এই সম্ভাব্য মিলনের প্রেক্ষাপটে মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছেন। তিনি এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে হিন্দি প্রবাদ ‘বেগানি শাদি মে আবদুল্লাহ দিওয়ানা’ ব্যবহার করে বলেন, তিনি অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে আগ্রহী নন।

ফড়নবিস বলেন

ফড়নবিস বলেন, “এটা দুই ভাইয়ের এবং দুটি ভিন্ন দলের বিষয়। এটি তাঁদের সিদ্ধান্ত। তাঁরা যখন কোনও পদক্ষেপ নেবেন, তখন আমরা তার জবাব দেব। ততক্ষণ পর্যন্ত মিডিয়া তাদের জল্পনার পতঙ্গ উড়াক।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা জানি না তাঁদের মধ্যে সত্যিই কোনও সংলাপ হচ্ছে কিনা, তবে মিডিয়া এই বিষয়ে দুই পক্ষের চেয়েও বেশি সক্রিয়।”

এদিকে, এনসিপি (শরদচন্দ্র পাওয়ার) সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে এই সম্ভাব্য জোটকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রে যে কেউ যার সঙ্গে ইচ্ছা জোট বাঁধতে পারে। বেশি মিত্র মানে মহারাষ্ট্রের জন্য বেশি শক্তি।” তিনি ঠাকরে পরিবারের এই সম্ভাব্য মিলনকে ‘খুব ভালো’ বলে বর্ণনা করেন এবং বলেন, “যদি দুই ভাই মহারাষ্ট্রের স্বার্থে একসঙ্গে আসেন, তবে তা পুরো মন থেকে স্বাগত জানানো উচিত।” সুপ্রিয়া আরও বলেন, যদি শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরে বেঁচে থাকতেন, তিনি এই মিলন দেখে খুব খুশি হতেন।

Advertisements

মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় (maharashtra)

এই ঘটনা মহারাষ্ট্রের (maharashtra) রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। উদ্ধব ও রাজ ঠাকরে প্রায় দুই দশক আগে, ২০০৬ সালে, শিবসেনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাজ ঠাকরে এমএনএস গঠন করেন। তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে চলছে। তবে সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে হিন্দি ভাষাকে স্কুলে বাধ্যতামূলক তৃতীয় ভাষা হিসেবে চালু করার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মারাঠি পরিচয় ও ভাষার ইস্যুতে উভয় নেতা একই মঞ্চে দাঁড়িয়েছেন। এই ইস্যু তাঁদের মধ্যে মিলনের সম্ভাবনাকে উসকে দিয়েছে।

শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা সঞ্জয় রাউত এই বিষয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, “উদ্ধব ও রাজের মধ্যে মধ্যস্থতার জন্য কোনও বহিরাগতের প্রয়োজন নেই। আমি তাঁদের পারিবারিক সম্পর্ক ও আবেগ বুঝি। রাজনীতি একমাত্র সম্পর্ক ভাঙার কারণ হতে পারে না। উদ্ধব মহারাষ্ট্র ও মারাঠি মানুষের স্বার্থে মিলনের জন্য ইতিবাচক।”

ইংল্যান্ড সফরে বড় বদল টিম ইন্ডিয়ায়, সোহম দেশাইয়ের জায়গায় এলেন আদ্রিয়ান

একনাথ শিন্ডের জন্য চ্যালেঞ্জ

এই সম্ভাব্য মিলন শিবসেনার বর্তমান নেতা এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ২০২২ সালে শিন্ডের বিদ্রোহের ফলে শিবসেনায় বিভাজন ঘটে এবং উদ্ধবের সরকার পতন হয়। শিন্ডে বিজেপির সঙ্গে জোট গঠন করে মুখ্যমন্ত্রী হন এবং শিবসেনার নাম ও প্রতীক দখল করেন। উদ্ধব ও রাজের মিলন শিন্ডের রাজনৈতিক প্রভাবকে দুর্বল করতে পারে, বিশেষ করে আসন্ন মুম্বই পৌরসভা নির্বাচনে।

এই মিলনের সম্ভাবনা মহারাষ্ট্রের (maharashtra) রাজনীতিতে নতুন গতিশীলতা আনতে পারে। উদ্ধবের শিবসেনা (ইউবিটি) ২০২৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র ২০টি আসন পেয়েছে, যেখানে এমএনএস কোনও আসন জিততে পারেনি। তবে রাজ ঠাকরের দল মুম্বইয়ের মারাঠি ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে। উদ্ধব ও রাজের জোট মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক সমীকরণে পরিবর্তন আনতে পারে এবং মহা বিকাশ আঘাডি জোটকে শক্তিশালী করতে পারে।

এই পরিস্থিতি মহারাষ্ট্রের (maharashtra) রাজনীতিতে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ঠাকরে পরিবারের এই সম্ভাব্য পুনর্মিলন কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং মহারাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত পরিচয়ের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ। আগামী মাসগুলোতে এই মিলন বাস্তবে রূপ নেয় কিনা, তা দেখার বিষয়।