অয়ন দে, আলিপুরদুয়ার: জেলার পাটকাপাড়া চা বাগান এলাকায় একটি মৃত চিতাবাঘ (Dead leopard) উদ্ধারের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। রবিবার সকালে চা পাতা তুলতে গিয়ে শ্রমিকরা চা গাছের ফাঁকে একটি চিতাবাঘকে শুয়ে থাকতে দেখেন। প্রথমে ভয়ে দূর থেকে লক্ষ্য করলেও, পরে সাহস করে কাছে গিয়ে তারা দেখেন চিতাবাঘটি মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এই ঘটনা এলাকায় আতঙ্কের পাশাপাশি দুঃখের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। বনদপ্তর ঘটনাস্থলে পৌঁছে চিতাবাঘটির দেহ উদ্ধার করেছে এবং মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, রবিবার সকালে পাটকাপাড়া চা বাগানের শ্রমিকরা তাদের নিত্যদিনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ তাঁদের একজন চা গাছের মাঝে অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পান। প্রথমে তারা ভেবেছিলেন এটি কোনো জীবন্ত প্রাণী হতে পারে, তাই ভয়ে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তারা বুঝতে পারেন যে এটি একটি চিতাবাঘ, এবং তা নড়াচড়া করছে না। সাহস করে কাছে গিয়ে তারা নিশ্চিত হন যে চিতাবাঘটি মৃত। এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। শ্রমিকরা তৎক্ষণাৎ চা বাগান কর্তৃপক্ষকে জানান, এবং তারা বনদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
নিমটি রেঞ্জের বনকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং চিতাবাঘটির দেহ উদ্ধার করেন। বনদপ্তরের এক আধিকারিক জানান, “চিতাবাঘটির দেহে কোনো স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। তবে এর মৃত্যুর কারণ জানতে আমরা দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই আমরা মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে পারব।” তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে চিতাবাঘটির মৃত্যু এক থেকে দুই দিন আগে হয়েছে।
আলিপুরদুয়ারের দুয়ার্স অঞ্চল বন্যপ্রাণী ও চা বাগানের জন্য বিখ্যাত। এই অঞ্চলে চিতাবাঘ, হাতি, গণ্ডার এবং রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো বন্যপ্রাণী প্রায়ই দেখা যায়। বক্সা টাইগার রিজার্ভ এবং জলদাপাড়া ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির নৈকট্যের কারণে এই অঞ্চল বন্যপ্রাণীদের বিচরণ ক্ষেত্র। তবে, চা বাগানের মধ্যে চিতাবাঘের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনা এলাকাবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা রমেশ ওরাঁও বলেন, “আমরা প্রায়ই জঙ্গলের কাছাকাছি কাজ করি। চিতাবাঘের মতো প্রাণী এখানে দেখা যায়, কিন্তু এভাবে মৃত অবস্থায় দেখে আমরা ভয় পেয়েছি। এর মৃত্যুর কারণ জানা দরকার।”
এই ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে দুঃখের পরিবেশও তৈরি করেছে। চিতাবাঘের মতো বিরল প্রজাতির প্রাণী হারানো পরিবেশের জন্য বড় ক্ষতি। স্থানীয় পরিবেশবিদ সুজয় সরকার বলেন, “চিতাবাঘের মৃত্যু প্রাকৃতিক কারণে হতে পারে, তবে বিষক্রিয়া বা মানুষের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আমরা বনদপ্তরের কাছে এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, চা বাগান ও জঙ্গলের মধ্যে মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সংঘাত এড়াতে আরও সচেতনতা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন।
এর আগেও আলিপুরদুয়ারে বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত আগস্ট মাসে কালচিনি ব্লকের রায়মাটাং চা বাগানে একটি মৃত হাতি উদ্ধার হয়েছিল, যার মৃত্যু নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ের কারণে হয়েছিল বলে বনদপ্তর জানিয়েছিল। এই ধরনের ঘটনাগুলো বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য আরও কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয়।
বনদপ্তর এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং স্থানীয়দের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। বনকর্মীরা চা বাগান এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে, যাতে অন্য কোনো বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি থাকলে তা শনাক্ত করা যায়। পাটকাপাড়া চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যেও সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে। বনদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা এলাকাবাসীকে জঙ্গলের কাছাকাছি একা না যাওয়ার এবং কোনো বন্যপ্রাণী দেখলে তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের জানানোর অনুরোধ করছি।”
পাটকাপাড়া চা বাগানে মৃত চিতাবাঘ উদ্ধারের এই ঘটনা আলিপুরদুয়ারের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও মানুষ-প্রাণী সংঘাতের বিষয়টিকে আবারও সামনে এনেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশের পর এই ঘটনার পেছনের কারণ স্পষ্ট হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ততক্ষণ পর্যন্ত, এলাকায় আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার পরিবেশ বিরাজ করছে।