১৮ বছরের অপেক্ষার শেষে সবরমতীর তটে শাপমুক্তি বেঙ্গালুরুর

১৮ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষা, অসংখ্য হৃদয়ভাঙা মুহূর্ত, শেষ মুহূর্তে হারের হতাশা সবকিছুকে পেছনে ফেলে অবশেষে আইপিএলের শিরোপা (IPL Trophy) ছুঁল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB)। ২০২৫…

RCB win IPL 2025 Final beat Punjab Kings

১৮ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষা, অসংখ্য হৃদয়ভাঙা মুহূর্ত, শেষ মুহূর্তে হারের হতাশা সবকিছুকে পেছনে ফেলে অবশেষে আইপিএলের শিরোপা (IPL Trophy) ছুঁল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB)। ২০২৫ আইপিএল ফাইনালে (IPL 2025 Final) ৬ রানে হারাল শ্রেয়স আইয়ারের নেতৃত্বাধীন পাঞ্জাব কিংসকে (Punjab Kings)। এই জয়ের মধ্য দিয়ে ইতিহাসে প্রথমবার ট্রফির স্বাদ পেল কোহলির (Virat Kohli) দল, আর আইপিএল ইতিহাসের এক নতুন চ্যাম্পিয়নের জন্ম হল।

ফাইনাল ম্যাচের আবহ ছিল উত্তাল। আমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিল ১ লাখের বেশি দর্শক, যার বেশিরভাগই এসেছিল কোহলি ও বেঙ্গালুরুর জয় দেখতে। গোটা স্টেডিয়াম যেন রূপ নিয়েছিল লাল সমুদ্রে—সমর্থকদের গর্জনে বারবার কেঁপে উঠছিল মাঠ। “আরসিবি! আরসিবি! কোহলি! কোহলি!”—এই স্লোগানে মুহুর্মুহু মুখর ছিল আকাশ।

   

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বেঙ্গালুরু সংগ্রহ করে ১৯০ রান ৯ উইকেট হারিয়ে। ইনিংসের শুরুটা ছিল ধীরগতির। ওপেনার ফিল সল্ট ১৬ রান করে দ্রুত বিদায় নেন। তবে এরপর ময়াঙ্ক আগরওয়াল (২৪) ও বিরাট কোহলি (৪৩) মিলে ইনিংসকে সামাল দেন। ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে স্কোরবোর্ড। কোহলি বরাবরের মতো ধৈর্য ও দায়িত্ব নিয়ে খেলেন, কিন্তু তিনিও ইনিংসের মাঝপথে ফিরে যান। এরপর অধিনায়ক রাজত পতিদার (২৬), লিয়াম লিভিংস্টোন (২৫) ও জিতেশ শর্মা (২৪) ঝড়ো ইনিংস খেলেন, বিশেষ করে শেষ দিকে রোমারিও শেফার্ড (১৭ রানে ৯ বল) কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন ছক্কা হাঁকিয়ে দলের স্কোর ১৯০-এ পৌঁছে দেন।

পাঞ্জাব কিংসের হয়ে আর্শদীপ সিং ছিলেন সবচেয়ে সফল বোলার। তিনি ৩ উইকেট তুলে নেন, কাইল জেমিসন নেন আরও ৩টি। তারা বারবার বেঙ্গালুরুর রানের গতি থামিয়ে দিয়েছেন, নইলে ২০০ পেরিয়ে যেতে পারত স্কোর।

১৯১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পাঞ্জাব কিংসের ইনিংস ছিল চাপপূর্ণ। শুরুতেই উইকেট হারায় তারা। তবে প্রিয়াংশ আর্যা, প্রভসিমরন সিং ও জশ ইংলিস কিছুক্ষণ লড়াই চালান। কিন্তু চাপ ও আরসিবির দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি। শেষদিকে শশাঙ্ক সিং একা লড়াই চালালেও ততক্ষণে আরসিবি জয় নিশ্চিত করে ফেলেছে। ভুবনেশ্বর কুমার ও ক্রুনাল পান্ডিয়া অসাধারণ বোলিং করেন—দুজনই ২টি করে উইকেট নেন এবং রান চেপে রাখেন পুরো ইনিংসজুড়ে।

শেষ ওভারে পাঞ্জাবের দরকার ছিল ১৫ রান, হাতে মাত্র দুটি উইকেট। কিন্তু রানের গতি না বাড়তে পারায় শেষ পর্যন্ত তারা থামে ১৮৪ রানে। ৬ রানে জিতে ইতিহাস গড়ল বেঙ্গালুরু।

Advertisements

এই ম্যাচ শুধুমাত্র একখানা ট্রফির জন্য ছিল না। এটি ছিল আবেগের, লড়াইয়ের, এক অজেয় স্বপ্নের জয়। বিরাট কোহলি, যিনি ২০০৮ সাল থেকে এই দলের সঙ্গে যুক্ত, যিনি RCB-র হয়ে একনিষ্ঠভাবে খেলেছেন এত বছর, তার চোখে জল ছিল ম্যাচ শেষ হবার আগেই। চার বল বাকি থাকতেই মাঠে দাঁড়িয়ে চোখ ঢেকে ফেললেন তিনি, যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না—স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে।

কোহলি তাঁর ক্যারিয়ারে প্রায় সবকিছু জিতেছেন—বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল পর্যন্ত খেলেছেন। কিন্তু আইপিএল ছিল তাঁর জন্য অধরা। অবশেষে সেই স্বপ্নপূরণ হল। তাঁর নেতৃত্বের ছাপ ছিল পুরো দলের পারফরম্যান্সে—চাপের সময়েও দল হাল ছাড়েনি, একত্রে খেলেছে, আর সেই টিম স্পিরিটই নিয়ে এসেছে জয়।

বেঙ্গালুরুর এই জয় শুধু একটি দলের সাফল্য নয়, এটি লক্ষ লক্ষ সমর্থকের জয়। যারা ১৭ বছর ধরে “ই সালা কাপ নামদে” বলে গলা ফাটিয়েছেন, যাঁরা বারবার ভেঙে পড়েছেন, আবার নতুন আশায় মাঠে ফিরেছেন—তাঁদের ধৈর্যের জয়।