ব্র্যান্ডন ফার্নান্দেজের সামনে ভবিষ্যতের লড়াই!

ভারতীয় ফুটবল দলের (Indian Football Team) অন্যতম সৃজনশীল মিডফিল্ডার ব্র্যান্ডন ফার্নান্দেজ (Brandon Fernandes) বর্তমানে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তার প্রতিভা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই,…

Brandon Fernandes step to revive Indian Football Team

ভারতীয় ফুটবল দলের (Indian Football Team) অন্যতম সৃজনশীল মিডফিল্ডার ব্র্যান্ডন ফার্নান্দেজ (Brandon Fernandes) বর্তমানে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তার প্রতিভা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই, চোখধাঁধানো পাস, নিখুঁত সেট-পিস ডেলিভারি ও অসাধারণ ভিশন তাকে আলাদা করে তোলে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চোট, ফর্মে ওঠানামা এবং ধারাবাহিকতার অভাব তার জাতীয় দলের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

২০২৫ সালের জুন মাসে ভারতীয় দল থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে একক প্রীতি ম্যাচ এবং এরপর হংকং বিরুদ্ধে এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭ বাছাইপর্বে খেলবে। এই সময়টাই ব্র্যান্ডনের জন্য আদর্শ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তিনি নিজেকে আবার জাতীয় দলে অবিচ্ছেদ্য হিসেবে প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন।

   

১. সৃষ্টিশীল হুমকির ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা

ব্র্যান্ডন ফার্নান্দেজের সবচেয়ে বড় শক্তি তার সৃষ্টিশীলতা। কিন্তু শুধুমাত্র প্রতিভা যথেষ্ট নয়, মাঠে নিয়মিতভাবে গোল বা অ্যাসিস্টের মাধ্যমে অবদান রাখা দরকার। ভারতীয় দলের হয়ে তার ৩০টি ম্যাচে ৮টি অ্যাসিস্ট রয়েছে প্রতি চার ম্যাচে একটি করে। তবে তার সর্বশেষ ১০ আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাত্র একটি গোল অবদান রয়েছে, যা একজন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের জন্য যথেষ্ট নয়।

২০২৪-২৫ আইএসএল মরসুমে মুম্বই সিটির হয়ে ২৫টি ম্যাচ খেলে মাত্র দুটি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। এটি তার ক্লাব ফর্মেও একটি স্পষ্ট পতন নির্দেশ করে। ব্র্যান্ডনের উচিত হবে ওপেন প্লে ও সেট-পিস দু’টো থেকেই আরো কার্যকর পাস দেওয়া এবং গোলের সুযোগ তৈরি করা। বেশি নির্ভুল পাস, ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং আক্রমণে আরও প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করলে তিনি জাতীয় দলে নিজের জায়গা নিশ্চিত করতে পারবেন।

২. ফিটনেসের উন্নতি ও ইনজুরি রোধ

ফর্মের পাশাপাশি ফিটনেসও একজন ফুটবলারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে বিশাল ভূমিকা রাখে। ব্র্যান্ডন বহুবারই ছোটখাটো ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে থেকেছেন, যার ফলে তার ধারাবাহিকতা বিঘ্নিত হয়েছে। মালদ্বীপের বিরুদ্ধে একটি দুর্দান্ত অ্যাসিস্ট দেওয়ার পর ইনজুরির কারণে তাঁকে প্রথমার্ধেই মাঠ ছাড়তে হয়। এরপর বাংলাদেশ ম্যাচে খেলতে পারেননি।

Advertisements

আইএসএলে তিনি শুধুমাত্র পাঁচটি ম্যাচ মিস করলেও পুরো ৯০ মিনিট খেলার সক্ষমতা দেখিয়েছেন মাত্র সাতটি ম্যাচে। এর মানে হচ্ছে, ম্যাচের গতি ও চাপ সামলানোর ক্ষেত্রে তার ফিটনেসে ঘাটতি রয়েছে। তাঁর উচিত হবে শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানো, খেলার ধরণে কিছু পরিবর্তন আনা এবং জিম ও রিকভারি সেশনে আরও মনোযোগী হওয়া।

৩. জাতীয় দলের মিডফিল্ডে নেতৃত্ব নেওয়া

ব্র্যান্ডন সাধারণত ভারতের হয়ে অ্যাডভান্সড মিডফিল্ড পজিশনে খেলে থাকেন, যেখানে তাকে সৃজনশীল স্বাধীনতা দেওয়া হয়। কিন্তু এই স্বাধীনতার সদ্ব্যবহার করতে হলে তাঁকে খেলায় আরও ভারসাম্য আনতে হবে। প্রতিটি পজিশনে ভুল পাসের ঝুঁকি না নিয়ে, বল কিপিং ও পজিশনিং বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে।

যদি তিনি মাঝমাঠে একটি কমান্ডিং উপস্থিতি তৈরি করতে পারেন, সেক্ষত্রে তার সতীর্থরা চাপের সময় তার দিকেই বল বাড়াতে পারবে। এতে ভারতের দখলে বল বেশি থাকবে, প্রতিপক্ষ ক্লান্ত হবে এবং ব্র্যান্ডন আরও বেশি বল পাবে, যার মাধ্যমে সে ম্যাচের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

ব্র্যান্ডন ফার্নান্দেজ এখনও ভারতের সবচেয়ে প্রতিভাবান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারদের একজন। কিন্তু প্রতিভার পাশাপাশি ধারাবাহিকতা, ফিটনেস ও কৌশলগত বুদ্ধিমত্তারও প্রয়োজন। যদি তিনি এই তিনটি মূল দিকের উন্নতি ঘটাতে পারেন, তাহলে ২০২৭ এশিয়ান কাপের (AFC Asian Cup 2027 Qualifier) মূলপর্বে ভারতীয় দলের একজন অপরিহার্য সদস্য হিসেবে জায়গা করে নিতে পারবেন।