আরএসএসের ‘স্বাভিমান যাত্রা’ বাংলায়, বিধানসভা ভোটের আগে নয়া উদ্যোগ

আরএসএস (RSS) বাংলায় ‘স্বাভিমান’কে জাগানোর উদ্দেশ্যে এক বিশাল কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি সংঘ প্রধান মোহন ভাগবত ১০ দিনের বঙ্গ সফর শেষে জানিয়েছেন, তারা বিশেষভাবে পাঁচটি…

RSS's 'Swabhiman Yatra' in Bengal, a New Initiative Ahead of Assembly Elections

short-samachar

আরএসএস (RSS) বাংলায় ‘স্বাভিমান’কে জাগানোর উদ্দেশ্যে এক বিশাল কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি সংঘ প্রধান মোহন ভাগবত ১০ দিনের বঙ্গ সফর শেষে জানিয়েছেন, তারা বিশেষভাবে পাঁচটি বিষয়ে জোর দিচ্ছেন। এই পাঁচটি হল: ‘স্ব’, ‘সামাজিক সমরসতা’, ‘কুটুম্ব প্রবোধন’, ‘পর্যাবরণ’ (পরিবেশ সচেতনতা) এবং নাগরিক কর্তব্য।

   

এখন, তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো হিন্দু জনগণের মধ্যে এই বার্তাগুলো ছড়িয়ে দেওয়া এবং তাদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ ও আত্মনির্ভরতার চেতনা জাগানো। মোহন ভাগবত জানিয়েছেন, ‘স্ব’ বা স্বতন্ত্রতা সম্পর্কে তারা পুরনো স্বাধীনতা আন্দোলনের ‘স্বদেশি ভাবনা’-কে সামনে এনে কাজ করবেন। এর মধ্যে স্ব-ভাষা, স্ব-ভূষা এবং স্বনির্ভরতা প্রসারে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হলো গড়ে তোলা এক আত্মনির্ভর ভারত।

আরএসএস (RSS) এই কর্মসূচিতে ঘর ঘরে প্রচারের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে মাইক্রো ইন্ডাস্ট্রি গড়ে কর্মসংস্থানের প্রসার ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। এজন্য তারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রযুক্তি সংস্থার সাথে সমন্বয় করছে। এর মাধ্যমে তারা গ্রামাঞ্চলে শিল্প এবং প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে চায়।

সামাজিক সমরসতা কর্মসূচিতে, জাতপাতহীন সমাজ গড়ে তোলার প্রচার করা হচ্ছে। আদিবাসী অধ্যুষিত রাঢ়বঙ্গে বিশেষভাবে এই কর্মসূচির প্রচার চলছে। অন্যদিকে, পরিবেশ সচেতনতা এবং কুটুম্ব প্রবোধন কর্মসূচির মাধ্যমে গোটা গ্রাম বাংলার মধ্যে আত্মীয়তা ও সামাজিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করা হবে।

তবে, সবচেয়ে বেশি বিতর্ক সৃষ্টি করেছে ‘নাগরিক কর্তব্য’ কর্মসূচি। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলায় হিন্দুদের ভোটদানের হার বাড়ানো, যা পরোক্ষভাবে বিজেপির ভোটব্যাংক বাড়ানোর লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ৪৮.৪৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, কিন্তু বিজেপি পেয়েছিল ৩৭.৯৮ শতাংশ। লোকসভা ভোটের পরেও বিজেপির ভোটের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি ‘নাগরিক কর্তব্য’ কর্মসূচি সফলভাবে চালানো যায়, তাহলে হিন্দু ভোটের প্রভাব বাড়ানো সম্ভব হবে। এতে করে বিজেপি বাংলায় আরও শক্তিশালী হতে পারে। এই কর্মসূচি মূলত বাংলায় হিন্দু জনগণের মধ্যে একতা সৃষ্টি করার জন্য, যা তাদের আগামী নির্বাচনের জন্য কার্যকর হতে পারে।

অন্যদিকে, আরএসএসের (RSS) পক্ষ থেকে এই কর্মসূচির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অস্বীকার করা হয়েছে। সরকারি ভাবে এই নাগরিক কর্তব‌্য কর্মসূচির সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক উড়িয়ে দিয়েছেন। ড. জিষ্ণু বসু জানিয়েছেন, ‘নাগরিক কর্তব‌্য পালনের কথা বলতে গেলে দিল্লির এইমস হাসপাতাল ও কলকাতার পিজি হাসপাতালের তুলনা টানতে হয়। দিল্লি এইমসে সারা ভারতের একটা বড় অংশ থেকে গরিব মানুষ যায়। কিন্তু সেখানে কাউকে কোথাও থুতু ফেলতে দেখবেন না। কিন্তু কলকাতার এসএসকেএম বা মেডিক‌্যাল কলেজের অবস্থা দেখুন! এটাই নাগরিক কর্তব‌্য শেখানোর জায়গা।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের কর্মসূচি রাজ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। তারা মনে করছেন, আরএসএসের এই উদ্যোগ কার্যক্ষেত্রে বিজেপির ভোটব্যাংক শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। তবে, সরকারিভাবে এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালানো হচ্ছে না বলে দাবি করা হলেও, রাজনৈতিক মহলে এর উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

এখন দেখার বিষয় হলো, আরএসএসের (RSS) এই কর্মসূচি বাংলায় কতটা কার্যকরী হতে পারে এবং এর মাধ্যমে বিজেপি ভোটে কোনও সুবিধা পায় কিনা।