ROSCOSMOS: সাইট বন্ধ! নাসার প্রতিদ্বন্দ্বী সেই সোভিয়েত ‘রসকসমস’ নিয়ে রহস্যজনক নীরব রাশিয়া

মহাকাশ অভিযানে  সোভিয়েত বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে লড়াই শুরু হয়েছিল সেটি এখনও চলেছে। কমিউনিস্ট সোভিয়েত নেই। তবে রাশিয়া-আমেরিকার লডাই অর্থাৎ ROSCOSMOS বনাম NASA যুদ্ধ থেকে…

ROSCOMOS বনাম NASA

মহাকাশ অভিযানে  সোভিয়েত বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে লড়াই শুরু হয়েছিল সেটি এখনও চলেছে। কমিউনিস্ট সোভিয়েত নেই। তবে রাশিয়া-আমেরিকার লডাই অর্থাৎ ROSCOSMOS বনাম NASA যুদ্ধ থেকে গেছে। চাঁদের মাটিতে রুশ মহাকাশযান লুনা-২ অভিযান সেই লড়াইকে সামনে এনে দিল ফের।

লুনা ২ মহাকাশযান চাঁদে পাঠিয়েছে রসকসমস। অথচ তাদের তরফে তেমন কোনও উচ্চবাচ্য নেই। এর কারণ কী? আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সোভিয়েত জমানায় যেমন আঁটোসাটো কমিউনিস্ট বাঁধন ছিল সেরকমই কিছু রীতি এখনও থেকে গেছে রসকসমস সংস্থার অন্দরে। এই জন্য এর তেমন চর্চা নেই।  রহস্যময় রুশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস (Roscosmos)। বিশ্ববিখ্যাত সংস্থাটি নিয়ে তেমন চর্চা হয়না এখন। মহাকাশ বিজ্ঞানের খাতায় ১৯৫০ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট সরকারের উদ্যোগে এটি তৈরি হয়।

রসকসমস নাম অনেকে বলতে পারবেন না। গুটিকয় মহাকাশ গবেষকের নজরে থাকে এর কার্যকলাপ। প্রতিদিন যেভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাসা আপডেট আসে তার ধারে কাছেও নেই রসকসমস কর্তৃপক্ষের আপডেট। অথচ তাদের প্রতিদিন কাজ হয়। লক্ষাধিক কর্মী! তার পরেও অদ্ভুত নীরবতা রসকসমস নিয়ে। এক রহস্যজনক মোড়কে নিজেদের মুড়ে রেখেছে রুশ মহাকাশ বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থাটি। রসকসমস সাইট বন্ধ আছে। দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ। অথচ তাদের তৈরি লুনা ২ নিয়ে প্রবল চর্চা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রুশ সংস্থা রসকসমসের (ROSCOSMOS) তুলনায় ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো (ISRO) বেশি চর্চিত। এই সংস্থার চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দেশে অভিযান করছে। আচমকা চন্দ্রযানের সাথে টেক্কা দিতে নেমেছে রাশিয়ার লুনা-২।  তখন থেকে চর্চায় রসকসমস।

মহাকাশ বিজ্ঞান ও মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে সোভিয়েত কমিউনিস্ট জমানার অবদান সর্বকালীন সেরা বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।১৯৫০ সালে সেভিয়েত সরকারের তৈরি হয় রসকসমস। ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবরে রসকসমস নির্মিত স্পুটনিক ১ কৃত্রিম উপগ্রহ মহাবিশ্বে প্রদক্ষিণ করে। এক ঝটকায় আমেরিকাকে পিছনে ফেলে সোভিয়েত ঢুকে পড়েছিল মহাকাশের রহস্য সমাধানের পথে। ১৯৫৭ সালের ৩ নভেম্বর ফের চমক। রসকসমস মহাকাশে পাঠায় প্রথম জীবন্ত প্রাণী। লাইকা নামে কুকুরের সেই অভিযানে গোটা বিশ্ব চমকে গেছিল। শুরু হয়েছিল মানুষকে মহাকাশ অভিযানে পাঠানো প্রথম পদক্ষেপ। সোভিয়েতের কাছে ধাক্কা খেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৫৮ সালে তৈরি করে নাসা। শুরু হল মহাকাশে রসকসমস বনাম নাসার যুদ্ধ।

রসকসমসের উদ্যোগে বিশ্বে প্রথম সফল মানব মহাকাশযাত্রা হয় ১৯৬১ সালের ১২ই এপ্রিলে। ভস্টক ১ মহাকাশযানে ইউরি গ্যাগারিন মহাবিশ্ব প্রদক্ষিণ করলেন। ১৯৬৩ সালে সোভিয়েতের ফের চমক। প্রথম নারী মহাকাশচারী হলেন ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা।  রসকসমসের কাছে ত্রমাগত ধাক্কা খেয়ে ক্ষিপ্ত নাসা। শুরু হলো চাঁদে মানুষ পাঠানোর গবেষণা। নাসার উদ্যোগে ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদে পা রাখলেন মার্কিন মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রং। দ্বিতীয় নভোচারী হিসেবে চাঁদে নামেন অলড্রিন। অ্যাপোলো ১১ মিশনের তিন নভোচারীর তৃতীয়জন ছিলেন মাইকেল কলিন্স। তিনি চাঁদে নামেননি। বিশ্বজুড়ে ঘোষিত হল মানুষের চন্দ্র বিজয় বার্তা।

নাসার উদ্যোগে মানুষ কি চাঁদে গেছিল? বারবার উঠেছে এমন প্রশ্ন। অভিযোগ, নাসার চন্দ্রাভিযান সম্পূর্ণ ধোঁকাবাজি। কারণ, সেই সফল চন্দ্রাভিযানের পর আর কেন অভিযান করেনি নাসা? এমন অভিযোগেও নীরব থেকেছে নাসা। প্রশ্ন উঠেছে, সোভিয়েত জমানাতেও চাঁদে মানুষ পাঠানো হয়নি। নীরব রসকসমস।

নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা আফগানিস্তানের মতো একটি দেশকে মহাকাশে পাঠানোর নজির গড়েছিল সোভিয়েত সরকার। নব্বই দশকে সোভিয়েত বিলুপ্ত হয়। এর পর রাশিয়া তাদের মহাকাশ গবেষণা নিয়ে আরও নীরব হয়ে যায়। রসকসমস-কে রহস্যের চাদরে মুড়ে দেওয়া হয়।