Bangladesh: ‘সবাই বলে হিজড়া, আমি একজন ব্যাংকার’… সঞ্জীবনী সুধা নিজেই এক চমক

সঞ্জীবনী সুধা! শুধু একটা নাম নয়। নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সমাজের সঙ্গে লড়াইয়ের গল্প। জীবনযুদ্ধে প্রতিদিন জিতে যাওয়ার গল্প। সঞ্জীবনী সুধা বাংলাদেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার নারী…

সঞ্জীবনী সুধা! শুধু একটা নাম নয়। নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সমাজের সঙ্গে লড়াইয়ের গল্প। জীবনযুদ্ধে প্রতিদিন জিতে যাওয়ার গল্প। সঞ্জীবনী সুধা বাংলাদেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার নারী যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম ফিল করতে যাচ্ছেন। সঞ্জীবনী গোটা দেশের কাছে একটি নজির স্থাপন করেন। তবে এই পথ মোটেই সহজ ছিল না। কঠিন পরিশ্রম এবং সংকল্পের মাধ্যমে তিনি আজ এই পৌঁছোতে পেরেছেন। তিনি হয়ে উঠেছেন অনেকের অনুপ্রেরণা।

বাংলাদেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার নারী সঞ্জীবনী সুধা। কেমন ছিল তার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনযুদ্ধের দিনগুলো? তথাকথিত সমাজে সঞ্জীবনীকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। জানা যায়, প্রথম শ্রেণীর কক্ষের একটা আলাদা বেঞ্চে সঞ্জীবনী সুধাকে বসিয়ে দেওয়া হতো। এবং তাঁকে কড়া ভাষায় বলে দেওয়া হয়েছিল যে ছেলে বা মেয়ে কারুর সঙ্গেই তিনি বসতে পারবেন না। সেই দিন মনে বড় আঘাত লাগে সঞ্জীবনীর। আজও তিনি ভোলেননি সেই কথাগুলো। তবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ সাফল্যের সঙ্গে শেষ করেন সঞ্জীবনী।

   

সাফল্যের সঙ্গে পড়াশোনা শেষ করে তিনি কর্মজীবনে প্রবেষ করেন। তিনি নিজেকে বাংলাদেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার নারী ব্যাংকার। সম্প্রতি সঞ্জীবনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম ফিল কোর্সে ভর্তির আবেদন করেছেন। সঞ্জীবনী জানিয়েছেন, “তথাকথিত এই সমাজ ছোটবেলা থেকে আমাকে পদে পদে বুঝিয়ে দিয়েছে, আমি আর দশজন মানুষের মতো নই। আমার স্বাভাবিকভাবে বাঁচার অধিকার নেই। সম্মান পাওয়ার অধিকার নেই। শিক্ষার অধিকার নেই। এই কঠিন প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে নিরন্তর লড়াই করতে করতে আজ আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম ফিল করার যোগ্যতা অর্জন করেছি। এটা আমার গর্ব, আমার সম্প্রদায়ের গর্ব, পুরো দেশের গর্ব। আমার মধ্য দিয়ে উচ্চতর গবেষণায় ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে একটা দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, শিক্ষায় কোনো জাতপাত-লিঙ্গগত বাধা থাকা উচিত নয়।“

অনেক অল্প বয়স থেকেই সঞ্জীবনীর স্বপ্ন যে তিনি উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করবেন। তিনি বলেন, “মানুষের আচরণে নিজেকে মানুষ বলে মনে হতো না। তাই আমি মনে মনে ঠিক করেছিলাম, আমাকে পড়ালেখা দিয়ে এই অবহেলা-অবজ্ঞার জবাব দিতে হবে। পড়াশোনার সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত আমাকে যেতে হবে।“

সঞ্জীবনী আরও জানান, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধীন অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীনের তত্ত্বাবধানে এম ফিল করতে যাচ্ছেন। তাঁর এমফিলের প্রস্তাবনার বিষয় ‘রিফ্রেমিং জেন্ডার ইন পলিটিকস অব বাংলাদেশ’। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে তিনি এম ফিল প্রোগ্রামে যুক্ত হবেন।

এম ফিলের পর পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টরেট করার ইচ্ছে রয়েছে সঞ্জীবনীর। তিনি জানান, “আমি আমার সম্প্রদায়ের জন্য সমাজের রুদ্ধ দ্বারগুলো খুলে দিতে সহায়তা করতে চাই। আমি আমার যোগ্যতা দিয়ে এই সমাজকে বলতে চাই, জেন্ডার দিয়ে মানুষকে বিচার করো না। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখো, তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্মানটুকু দাও।“