মুর্শিদাবাদ: ময়ূরেশ্বর থানার রসুনপুর অঞ্চলে আবারও অস্বাভাবিক মৃত্যুর (Rosunpur unnatural death) ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল। বৃহস্পতিবার সকালে রসুনপুরের নয়নজুলি অঞ্চলে এক ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দূর থেকেই প্রথমে মনে হয়েছিল তিনি হয়তো অসুস্থ হয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। কিন্তু কাছাকাছি গিয়ে বুঝতে পারেন পরিস্থিতি গুরুতর। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় ময়ূরেশ্বর থানায়।
পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার করে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে। মৃত ব্যক্তিকে দেখে অনেকেই চিনে ফেলেন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মৃত ব্যক্তির বাড়ি লোকপাড়ার মুদিপাড়া গ্রামে এবং বয়স আনুমানিক ৪২ বছর। তিনি প্রতিদিনের মতোই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, তবে কী কারণে তিনি রসুনপুরের নয়নজুলির ধারে গেলেন তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এই অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে গ্রামবাসীদের মধ্যে শুরু হয়েছে নানান ধরনের আশঙ্কা। কারও মতে, তিনি রাতে বাড়ি ফেরার পথে কোনও দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। কেউ আবার মনে করছেন, হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে জুলির ধারে পড়ে গিয়েছেন। তবে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলছেন এই মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা নয়, এর পেছনে অন্য কোনও রহস্য থাকতে পারে।
পুলিশ মৃতদেহটিকে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে যাতে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যায়। তদন্তকারী অফিসারদের মতে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই অনেকটা নিশ্চিত হওয়া যাবে তিনি স্বাভাবিকভাবে মারা গেছেন, নাকি এটি কোনও অপরাধের ফল।
মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, বুধবার রাত পর্যন্ত তার কোনো অস্বাভাবিক আচরণ চোখে পড়েনি। তিনি নিয়মিত কাজকর্ম করতেন এবং পরিবারের সঙ্গেও স্বাভাবিকভাবে সময় কাটাতেন। তাই হঠাৎ করে তার মৃত্যু পরিবারকেও অবাক করে দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রসুনপুরের নয়নজুলি এলাকাটি রাতে প্রায় নির্জন থাকে। রাস্তার ধারে আলো কম থাকায় যদি কোনও অপরাধ ঘটে থাকে, তা সহজেই আড়ালে থেকে যেতে পারে। এই কারণেই পুলিশও ঘটনাস্থলের আশপাশ তল্লাশি করে কোনও প্রমাণ বা সন্দেহজনক চিহ্ন পাওয়া যায় কি না, তা খতিয়ে দেখছে।
এছাড়াও, নিকটবর্তী এলাকায় যদি কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা থাকে, সেগুলোর ফুটেজও খতিয়ে দেখার পরিকল্পনা রয়েছে। কারণ মৃত ব্যক্তি কীভাবে সেখানে পৌঁছলেন, কারও সঙ্গে কোনও ধরনের বিবাদ বা ঝামেলায় জড়িয়েছিলেন কি না এসব প্রশ্নের উত্তর প্রয়োজন পুলিশ তদন্তের অগ্রগতির জন্য।
ময়ূরেশ্বর থানার এক আধিকারিক জানান, “ঘটনাটি এখনও রহস্যে মোড়া। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছি না। সমস্ত সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এই ঘটনার জেরে রসুনপুর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। গ্রামবাসীরা মনে করছেন, যদি এটি অপরাধ হয়, তাহলে এর নেপথ্যে কারা রয়েছে তা খুঁজে বের করা জরুরি। অন্যদিকে, কেউ কেউ আবার মনে করছেন এটি স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে। সব মিলিয়ে এখন তদন্তের ফলাফলের প্রতীক্ষায় রয়েছে স্থানীয়রা।
পুলিশ সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে আসতে পারে, যা এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর রহস্য অনেকটাই উন্মোচন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
