CPIM ঘুমোচ্ছে…ওদের বিরক্ত করো না

জাতিস্মর পাশে বসে, গুপ্তধনের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার সময়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন ডাঃ হাজরা। যা দেখে সন্দেহ জাগে ফেলুদার। তাঁর মনে প্রশ্ন ঘুরতে থাকে যে ডাঃ হাজরা…

জাতিস্মর পাশে বসে, গুপ্তধনের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার সময়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন ডাঃ হাজরা। যা দেখে সন্দেহ জাগে ফেলুদার। তাঁর মনে প্রশ্ন ঘুরতে থাকে যে ডাঃ হাজরা কী তাহলে হতাশ? পরে জানা যায় গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়া ব্যক্তি ছদ্মবেশী ডাঃ হাজরা।ফেলুদা সিরিজের ‘সোনার কেল্লা’ ছবিতে এই দৃশ্য ছিল।  কিন্তু রাজ্য সম্মেলন চলার সময়ে ঘুমিয়ে পড়লেন কেন সিপিআইএম (CPIM) বঙ্গজ শীর্ষ নেতারা? তাঁরাও কী হতাশ? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

অথচ গত কয়েকটি ভোটের ফলে রাজ্যে বিরোধী দল বিজেপিকে টপকে দ্বিতীয় সিপিআইএম। এমনকি পুরসভা ভোটে বিরোধী দল একটিও বোর্ড পায়নি। আর সিপিআইএম দখল করেছে একটি গোটা পুরসভা। বঙ্গ বাম উত্তেজিত ভোটের ফলে। কিন্তু রাজ্য সম্মেলনে তাদের চোখে ঘুমপরী নেমে এসেছে। যেমনটা বারবার হয়।

কলকাতায় চলছে সিপিআইএমের ২৬ তম রাজ্য সম্মেলন। সম্মেলন চলার সময়ের ঘুম-ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। দেখা গিয়েছে যে ঝিমিয়ে পড়েছেন বিমান বসু সহ একাধিক প্রবীণ নেতারা। তবে সেটা ঝিমুনি নাকি ঘুম তা অবশ্য স্পষ্ট বোঝা যায়নি।

আপাতভাবে ওই ঝিমুনি থেকেই ট্রোল শুরু হয়ে গিয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। রাজ্য সম্মেলনের মতো মঞ্চে ঝিমিয়ে যাওয়া যেন রূপক অর্থে দলের অবস্থা ফুটিয়ে তুলছে বলেও ভেসে আসছে কটাক্ষ। যা সামাল দিতে এখনও পর্যন্ত কোনও বাম নেতা বা কর্মীদের আসরে নামতে দেখা যায়নি। যার মাধ্যমে সার্বিকভাবে সংগঠনের ঝিমুনি ভাবটাও যেন প্রকাশ্যে আসছে।

মেহনতি মানুষের স্বার্থ, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব, শ্রেণী সাম্য, পুঁজিবাদ নিপাত যাক, গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা, সাম্রাজ্যবাদ- এই সকল শন্দ সাধারণত শোনা যায় সিপিআইএমের সম্মেলনে। যা শুনতে গিয়ে অনেক নতুন কমরেড ঘুমিয়ে পড়েন স্থানীয় বা জেলাস্তরের কার্যালয়ে। এমন ছবি নতুন নয়।

রাজ্য সম্মেলনেও এমনটা হয়েছে খোদ বাম আমলেই। ঘুমিয়ে পড়তেন অনেকেই। এই ঘুম নিয়ে অনেকের কটাক্ষ, “বামেদের মুখে শুনতে থাকা তত্ত্ব কথা এখন পুরনো। ভাতা, কাটমানি, ছাপ্পার যুগে এইসব তাত্ত্বিক আলোচনায় আর কারোর কোনও আগ্রহ নেই। এসব শুনতে শুনতে বাংলার মানুষও ক্লান্ত। এবার কলকাতায় রাজ্য সম্মেলনে খোদ সিপিআইএম নেতারাও মঞ্চে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন।”

১৯৭৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত, পশ্চিমবঙ্গ শাসন করেছে বামফ্রন্ট। ৩৪ বছরে পশ্চিমবঙ্গে ১০টা বিধানসভার নির্বাচন হয়েছে। ২০১১ পর্যন্ত বামফ্রন্ট কখনো ৪০ শতাংশের কম ভোট পায়নি। অথচ এখন তাদের ভোটের শতকরা হার এক অঙ্কে এসে ঠেকেছে এই বাংলায়। বিধানসভায় শূন্য। ২০২৪ এর লোকসভায় যে খাতা খুলবে, সেই বিশ্বাস এখনও পর্যন্ত কারোর নেই। ২০১২ সাল থেকে চলতে থাকা ‘লালবৈশাখী আসছে’ স্লোগানও এখন আর শোনা যায় না।

পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত বুড়োদের সরিয়ে নতুনদের দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, “সত্তর শতাংশ ভারতীয়র বয়স ৪০ বছরের নিচে। যুবা ছাড়া কারও ভবিষ্যত থাকে না। সিপিআইএম এরও ভবিষ্যৎ নেই।” এই বিলম্বিৎ বোধদয় নিয়েও উড়ে আসছে কটাক্ষ। কারণ ২০২১ নির্বাচনের আগের ২০ বছরে পশ্চিমবঙ্গে সিপিআইএম নেতৃত্বে সেভাবে কোন তরুণ-তরুণীরই অভিষেক ঘটেনি। একটা ঋতব্রত আর একটা শতরুপ, ব্যাস। যাদের একজন আবার এখন তৃণমূল কংগ্রেসের বড় নেতা। অন্য বাম মতাদর্শের তরুণেরাও ভিন্ন শিবিরে। প্রয়াত সিপিএম নেতার মেয়ে তৃণমূলের কাউন্সিলর হয়ে ‘ভুল জায়গায় শ্রম না দেওয়ার’ তত্ত্ব দেখিয়েছেন।

কিন্তু সুদীর্ঘ সময় বাংলা শাসন করা সিপিআইএম দলটির যাত্রা শুরু হয়েছিল তরুণদের মাধ্যমেই। পরে সেই বক্তিরাই নতুনদের জায়গা দিলেন না। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ১৯৫৩ সালে যখন দলের সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩৯ বছর। সেই সময় দলীয় নেতৃত্বের গড় বয়স ছিল ৪০ বছর। ২৪ বছর পরে সেই প্রজন্ম বাংলার ক্ষমতায় এলেন। আর তারাই রয়ে গেলেন আরও ৪০-৫০ টা বছর। এটাও একটা ঐতিহাসিক ভুল! তবে আচমকা অনেক নতুন বা তরুণ মুখ কতটা ক্ষত মেরামত করতে পারবে তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।