এও যেন এক হুল-বিদ্রোহ ! বিদ্রোহী আদিবাসীরা ঘিরে রেখেছেন প্রকৃতির অনবদ্য সৃষ্টি গ্রানাইট পাথরের খাজানা তিলাবনী পাহাড় (Tilabani Hill)। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন একপ্রকার কাঁপছে। কারণ, আদিবাসী বিক্ষোভ বাড়ছে। কোনওভাবেই জল-জমি জঙ্গলের অধিকার ছাড়তে রাজি নন আদিবাসীরা। বিদ্রোহের আগুন যেন কাঠফাটা চৈত্রের রোদকে টেক্কা দিচ্ছে।
‘জান থাকতে তিলাবনী কাইটে লাইরবি’, (জীবন থাকতে তিলাবনী কাটতে দেব না) হুঁশিয়ারি আসছে পুরুলিয়া জেলার আদিবাসী মহল থেকে। তাৎপর্যপূর্ণ, একইভাবে বীরভূমের দেউচা পাঁচামিতে কয়লা খনি তৈরি করতে গিয়েও তৃণমূল কংগ্রেস সরকার বিপাকে পড়েছে। সেখানেও চলছে বিক্ষোভ।
আদিবাসী সমাজের পারস্পরিক সংযোগ নিবিড়। ফলে যে বীরভূমই হোক বা পুরুলিয়া অথবা বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামের জঙ্গল মহলের বেষ্টিত সর্বত্র ধিকিধিকি করে জ্বলছে ক্ষোভের আগুন। এই আদিবাসী সমাজের বিস্তৃতি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। সেইদিকেও ছড়াচ্ছে পাহাড় কেটে কর্পোরেট সংস্থার কাছে পাথর বিক্রি করার সরকারি পদক্ষেপের কথা।
পুরুলিয়ার তিলাবনি পাহাড় পাথুরে টিলা সমৃদ্ধ ছোটনাগপুর মালভূমি শৃঙ্খলার অংশ। ছোট নদী, জঙ্গল ও প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব বৈচিত্রের আধার। অভিযোগ, এই পাহাড় কেটে পাথর বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার।
তিলাবনী পাহাড় বাঁচাও আন্দোলন শুরু এখান থেকেই। পুরুলিয়া জেলার হুড়া ব্লকের কলাবনী পঞ্চায়েত এলাকার তিলাবনী পাহাড়। এই পাহাড়ের গ্রানাইট পাথর তোলার বরাত একটি বেসরকারি সংস্থা পেয়েছে। প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দারা একজোটে। ‘পাহাড় বাঁচাও গণ আন্দোলন’ শুরু হয়েছে।
তিলাবনী পাহাড় রক্ষায় জান দিতেও রাজি আদিবাসীরা। এমনই হুঙ্কার আসছে। আরও অভিযোগ, পুরুলিয়ার বেড়ো, জয়চণ্ডী পাহাড়ের পাথর কাটা চলছে। সেখানেও প্রতিবাদ চলছে বিভিন্ন প্রকৃতি প্রেমী সংগঠন।
দক্ষিণবঙ্গের প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ জঙ্গলগুলিতে লাগাতার আগুন লাগার পিছনে রয়েছে ষড়যন্ত্র। এমনই অভিযোগ করছে বিভিন্ন শখের রোমাঞ্চকর পর্যটন ক্লাব ও সংগঠন। আরও অভিযোগ, ছোট ছোট টিলা পাহাড়গুলিকে ধংস করার চেষ্টা চলেছে। রাজ্য সরকার নির্বিকার। অভিযোগ, বামফ্রন্ট আমলে পাথর চুরি হলেও তেমন বড় আকার নেয়নি। এখন একেবারে কর্পোরেট সংস্থা ডেকে বরাত দেওয়া হচ্ছে।
<
p style=”text-align: justify;”>আরও অভিযোগ পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার মধ্যে ছড়িয়ে থাকা, বাঘমুন্ডি, অযোধ্যা, বিহারিনাথের মতো বড় পাহাড়ের বনাঞ্চলেও নজর পড়েছে কর্পোরেট সংস্থার। সেই কারণে কৃত্রিম দাবানল ছড়ানো হচ্ছে। জীব বৈচিত্র ধংসের পথে। এর মাঝে তিলাবনী পাহাড় কাটার প্রতিবাদ জমাট।