অয়ন দে, কোচবিহার: কোচবিহারের (Cooch Behar ) সিতাই বিধানসভার ব্রহ্মত্তর চাত্রা অঞ্চলের ঢেকিয়াজান গ্রামে রাস্তার বেহাল দশার জেরে ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঢেকিয়াজান প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গাবুয়া ডেরার পাড় পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তা কাদা, গর্ত আর ভাঙাচোরা অবস্থায় রূপ নিয়েছে। ফলে দৈনন্দিন যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে, যখন হাঁটুসমান কাদায় ডুবে যায় পথ। এই অবস্থায় স্কুলগামী শিশু, কর্মজীবী মানুষ এবং অসুস্থ রোগীদের পরিবহন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই রাস্তার কোনো সংস্কার হয়নি। বারবার স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবেদন জানানো সত্ত্বেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সোমবার বিকেল তিনটে নাগাদ এলাকাবাসী সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলে তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। স্থানীয় বাসিন্দা রমেশ বর্মন বলেন, “এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা এখন জীবনের ঝুঁকি নেওয়ার সমান। বর্ষায় তো হাঁটাই যায় না, স্কুলের বাচ্চারা পড়ে যায়, রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। আমরা আর কত ধৈর্য ধরব?”
ঢেকিয়াজান গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য অমল অধিকারী রাস্তার শোচনীয় অবস্থা স্বীকার করে বলেন, “এই রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজন। আমরা বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি।” তবে তিনি আক্ষেপ করে জানান, “নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক নেতারা বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু ভোটের পর তাঁদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না।” এই অবহেলার জন্য স্থানীয়দের মধ্যে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে।
এলাকার আরেক বাসিন্দা মিনতি রায় বলেন, “এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ চলাচল করেন। কিন্তু বর্ষায় গর্তে জল জমে, কাদা হয়ে যায়। আমাদের বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না, বাজারে যাওয়াও দুঃসাধ্য। প্রশাসন কেন এত উদাসীন?” তিনি আরও জানান, এই রাস্তার বেহাল দশার কারণে এলাকার অর্থনৈতিক কার্যকলাপও ব্যাহত হচ্ছে।
ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী অবিলম্বে রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, যদি দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটতে বাধ্য হবেন। স্থানীয় যুবক সুজন বর্মন বলেন, “আমরা আর প্রতিশ্রুতি শুনতে চাই না। কাজ চাই। প্রয়োজনে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করব।”
এই ঘটনা সিতাইয়ের অন্যান্য এলাকাতেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এই সমস্যা কেবল ঢেকিয়াজানের নয়, বরং গ্রামীণ এলাকার অবহেলিত রাস্তাগুলির একটি সাধারণ চিত্র। এখন দেখার বিষয়, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা এই দাবির প্রতি কতটা গুরুত্ব দেন এবং কবে নাগাদ রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু হয়। এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে।