আলিপুরদুয়ার জেলার জয়গাঁওয়ে এক চাঞ্চল্যকর শিক্ষক হত্যা মামলায় (Teacher Murder Case) গ্রেপ্তার হলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রাক্তন ডুয়ার্স আহ্বায়ক পাসাং লামা এবং তার সহযোগী রোহিত থাপা। তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও খুনের অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার করেছে জয়গাঁও থানার পুলিশ। মঙ্গলবার তাদের আলিপুরদুয়ার আদালতে পেশ করা হলে বিচারক দুই অভিযুক্তকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
খুনের ঘটনার বিবরণ
গত শনিবার সকালে জয়গাঁওয়ের মেচিয়া বস্তির শুক্রজোট এলাকায় এক মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় শান্তবীর তামাং নামে এক বেসরকারি স্কুল শিক্ষকের দেহ উদ্ধার হয়। ৩৮ বছর বয়সী ঐ শিক্ষকের দেহের পাশে রক্তের দাগ ও জখমের চিহ্ন দেখে প্রাথমিকভাবে খুনের সম্ভাবনা অনুমান করে পুলিশ।
জানা যায়, শান্তবীর তামাং জুয়া খেলার নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং এর ফলে তার আর্থিক পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হয়ে পড়ছিল। তার এই অভ্যাসই তাকে শেষ পর্যন্ত খুনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশের তদন্ত ও গ্রেপ্তারি
শিক্ষকের খুনের ঘটনায় তার ভাই হিরিং তামাং পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। নিহত শিক্ষকের ঘনিষ্ঠ সাত বন্ধুকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
সোমবার সন্ধ্যায় পান্ডু রাই এবং বিজয় সুব্বা নামে দুই সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার প্রাক্তন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা পাসাং লামা এবং তার সহযোগী রোহিত থাপাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
তদন্তের অগ্রগতি
জয়গাঁও থানার এসডিপিও প্রশান্ত দেবনাথ বলেন, “গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা শান্তবীর তামাংকে খুন করার মূল ষড়যন্ত্রকারী। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আরও কেউ এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কিনা, তা জানতে আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।”
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র এবং অন্যান্য প্রমাণ সংগ্রহের জন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুনর্নির্মাণ করা হতে পারে। এর পাশাপাশি খুনের পেছনে আর্থিক লেনদেনের কোনো যোগসূত্র আছে কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
শিক্ষক খুনের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার স্থানীয় নেতৃত্ব এই ঘটনার সঙ্গে দলের প্রাক্তন সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।
শিক্ষক হত্যা মামলা ঘিরে উঠে আসা বিভিন্ন তথ্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। পাসাং লামার মতো প্রাক্তন রাজনৈতিক নেতার জড়িত থাকার ঘটনায় স্থানীয় রাজনীতি এবং সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য উদঘাটন হবে বলেই প্রত্যাশা করছেন সবাই।