লোকসভা নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুরের ফলাফল নিয়ে মোটেও খুশি নন মমতা (Mamata Banerjee)। গতবারের দুটো জেতা আসনই এবার হাতছাড়া হয়েছে। তুলনায় অনেক ভালো পারফরম্যান্স পাশের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের (Mamata Banerjee)। ঘাটাল তো জেতাই ছিল, জুন মাসের নির্বাচনে মেদিনীপুরেও সবুজ ম্যাজিক দেখিয়েছেন জুন মালিয়া।
অথচ পাশের জেলায় দু-দুটো মন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও কেন ফলাফল খারাপ হল, তা নিয়ে সাংগঠনিক স্তরে তদন্ত শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এবার কাঁথির রামনগরের বিধায়ককে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে নতুন করে। রাজ্যের কারামন্ত্রী তথা রামনগরের অখিল গিরি বিতর্কের শিরোনামে বহুবার এসেছেন। একসময় স্বয়ং রাষ্ট্রপতিকে গায়ের রং নিয়ে কটাক্ষ করে রীতিমতো জাতীয় স্তরে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন। কোনওভাবে সেযাত্রায় সাফাই দিয়ে, ক্ষমা চেয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু এবার যে বিতর্ক শুরু হয়েছে তার মূলে রয়েছে ‘লালবাতি’।
সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে কাঁথি থেকে তৃণমূলের প্রার্থী উত্তম বারিক পরাজিত হয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারীর ভাই বিজেপি প্রার্থী সৌমেন্দু অধিকারীর কাছে। প্রেস্টিজ ফাইটে মমতা (Mamata Banerjee) আবারও হেরেছেন শুভেন্দুর কাছে। তা সত্ত্বেও কাঁথি কেন্দ্রে উত্তমের লড়াইকে ‘অতি-উত্তম’ বলেছেন মমতা। শুধু তাই নয়, শোনা যাচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে আরও বড় কোনও পদও পেতে চলেছেন উত্তম।
সৌন্দর্য বাড়াবার জন্য আনা রঙ-ই শেষ করে দিল হলং বাংলোকে? চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট
কিন্তু সূত্রের খবর কাঁথির পাশের তমলুকের মতো, কাঁথিতেও অন্তর্ঘাতের সন্দেহ রয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের। অনেকের মতে রাজ্যের মন্ত্রী অখিলের লোকসভা নির্বাচনে পারফরম্যান্স মোটেও ভালো ছিল না। তিনি নাকি সেভাবে প্রচারে ঝড়ই তোলেন নি। ফলে নির্বাচনের প্রচার শুরু হওয়ার আগেই অখিল ফ্যাক্টরে কিছুটা হলেও মাইনাসে চলে গিয়েছিল তৃণমূল এমনটাও মত অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের। এলাকায় কান পাতলে শোনা যায়, কারামন্ত্রী অখিল নাকি নিজের ছেলে সুপ্রকাশ কে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা না হওয়ায়, মুখে কিছু না বললেও ভিতরে ভিতরে তাঁর বেশ রাগ হয়েছে। সে জন্যই নির্বাচনে অখিলের প্রায় বসে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
কিন্তু এবার গিরি মহাশয়ের গাড়িতে লালবাতি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এমনিতেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী লালবাতি একেবারেই পছন্দ করেন না। মন্ত্রীদের মমতার কড়া নির্দেশ,সাধারণের অসুবিধা যেন না হয়, সেরকম ভাবেই যাতায়াত করতে। ২০২০ সালে গাড়িতে লালবাতির ব্যবহার এবং রাস্তায় ভিভিআইপিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে একটি মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে। তারপরই রাজ্যের পরিবহন দপ্তর গাড়িতে লাল এবং নীল বাতির ব্যবহার নিয়ে বিশেষ একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করে।
এরপর রাজ্যের বেশিরভাগ হাই প্রোফাইল মন্ত্রী লালবাতি এবং হুটারের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধই করে দিয়েছেন। সেখানে কাঁথি হোক বা কলকাতা, অখিল কিন্তু দিব্যি গাড়িতে লালবাতি লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন! এই নিয়ে কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান তথা তা অখিলপুত্র সুপ্রকাশের সাফাই,তাঁর বাবা সরকারি নিয়ম মেনেই কাজ করছেন। অপরদিকে কাঁথির সদ্য পরাজিত উত্তম বারিকের মতে দলনেত্রীকে অনুসরণ করেই চলা উচিত সবার।
মমতার কৌশলী চালে চিন্তা বাড়ল মোদীর!
যেখানে খোদ মুখ্যমন্ত্রী লাল বাতি লাগানো গাড়িতে চড়েন না সেখানে তাঁর প্রতিমন্ত্রী দিব্যি লালবাতি গাড়িতে চেপে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তৃণমূলের অন্দরে এই নিয়ে এখন বিতর্ক শুরু হয়েছে । তবে এর আগেও একাধিক বিতর্কে জড়ানো তৃণমূলের পুরনো দিনের সৈনিক অখিল গিরিকে এরপর রক্তচক্ষু দেখানো শুরু করবেন কি মমতা? সম্ভাবনা কিন্তু পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।