সৌন্দর্য বাড়াবার জন্য আনা রঙ-ই শেষ করে দিল হলং বাংলোকে? চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট

নতুন রঙে রঙিন করে সাজিয়ে তোলার কাজ চলছিল। কিন্তু সেই রংই যে সমস্ত রং কেড়ে নিয়ে কালো ছাইয়ের ধ্বংসস্তূপে পরিণত করবে হলং বাংলোকে (Holong Bunglow),…

holong bunglow fire cause সৌন্দর্য বাড়াবার জন্য আনা রঙ-ই শেষ করে দিল হলং বাংলোকে? চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট

নতুন রঙে রঙিন করে সাজিয়ে তোলার কাজ চলছিল। কিন্তু সেই রংই যে সমস্ত রং কেড়ে নিয়ে কালো ছাইয়ের ধ্বংসস্তূপে পরিণত করবে হলং বাংলোকে (Holong Bunglow), সেটা বোধহয় দুঃস্বপ্নেও কেউ ভাবেনি। কিন্তু এখনও সেই দুঃস্বপ্নের রাতকে ভুলতে পারেননি বনকর্মীরা। সাধের এবং গর্বের হলং বন বাংলো (Holong Bunglow) আর নেই। তার পরিবর্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে তার পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া কঙ্কালসার অবশেষ।

দুর্নীতি ঠেকাতে নয়া দাওয়াই! রাতারাতি হাজার হাজার কর্মীর বদলির নির্দেশ নবান্নর

   

কি হয়েছিল সেই রাতে? এবার তদন্তে উঠে এসেছে বিস্ফোরক তথ্য। আপাতত যাকে কেউই প্রথমে ধর্তব্যের মধ্যে রাখেনি, খুব সম্ভবত সেই জিনিসটাই হতে চলেছে ধ্বংসলীলার মূল ভিলেন। তরল রং, যা দিয়ে সৌন্দর্যায়ন করা হচ্ছিল হলং বাংলোর (Holong Bunglow), সেটাকেই তার ধ্বংসের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। প্রতিবছরই ১৫ই জুন থেকে শুরু করে তিন মাস টানা বন্ধ থাকে এই বাংলো। সে সময় জঙ্গলে সাফারিও বন্ধ থাকে। আর তাই এই সময়টাকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল বাংলো মেরামতি করবার জন্য।

বনদপ্তর সূত্রে খবর বন্ধ হবার তিন দিনের মধ্যেই রংয়ের কাজ শুরু হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে দরজা এবং জানালায় রং করা শুরু হয়। পরবর্তীকালে ঘরের অন্যান্য অংশ রংয়ের কাজ হবে এরকমটাই পরিকল্পনা ছিল। সেই হিসেবে বাংলোর ভিতরে প্রচুর তরল রঙও মজুত করা ছিল। রং করবার জন্য মেঝেতে এদিক ওদিক রঙের ছিটেও পড়েছিল। সেই সঙ্গে রঙের বিভিন্ন খোলা কৌটো, ব্যবহার করা ব্রাশ এসবও ছিল।

ফরেনসিক দফতরের আধিকারিকদের ধারণা, কোনওভাবে কোথাও কোনও ছেঁড়া তারের শর্ট-সার্কিট হয়। সেখান থেকেই ফুলকি গিয়ে পড়ে কোনও রঙের খোলা কৌটো বা ব্রাশের উপর। যদিও বলা হচ্ছে সেই সময় এসি বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রিক লাইনগুলি বন্ধ ছিল। কিন্তু কাজের সুবিধার্থে কয়েকটি বাল্ব জ্বালানো ছিল। ফলে বন্ধ থাকলেও বাংলোর বিদ্যুৎ সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিল না। আর সেখানেই ঘটে সর্বনাশ। কোনভাবে ফুলকি এসে পড়ে আগুন ধরে যায় অতি দাহ্য রঙে।

মমতার নির্দেশই সার, সাতসকালে বুলডোজার দিয়েই চলছে হকার উচ্ছেদ

শিশু সেগুন মেহগনিসহ আরও অনেক অতি মূল্যবান কাঠে তৈরি হয়েছিল এই বাংলো। একেতেই কাঠের তৈরি, তার উপরে বেশ পুরনো। ফলে কাঠের কাঠামোতেও আগুন ধরতে খুব একটা সময় নেয়নি। তার উপরে এসি ডাক্টে আগুন লেগে, এসির মধ্যে থাকা গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হওয়ার সম্ভবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। সে ক্ষেত্রে আগুন আরো হু হু করে বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে এক সময় মজুত রঙে আগুন লেগে একেবারে শেষ হয়ে যায় এই ঐতিহ্যের স্মারক।

ঘটনার সময় বাংলোর বাইরে দুজন ফরেস্ট রেঞ্জার উপস্থিত ছিলেন। বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনে তারা ভেতরে ঢোকার চেষ্টাও করেন বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু বিস্ফোরণের তীব্রতা এবং আগুনের ভয়াবহতা, সেই সাথে বন্ধ দরজার কারণেই তাঁরা আর ভেতরে পৌঁছতে পারেন নি। সেই রাতে বাংলকে বাঁচাবার শেষ চেষ্টা করতে না পারার আফসোস তাদের এখনও যাচ্ছে না।

হলং বাংলো আর নেই, পুরো ছাই হয়ে গিয়েছে তার সমস্ত অংশটাই। কিন্তু এই বাংলোকে ঘিরে প্রচুর মানুষের প্রচুর স্মৃতি, প্রচুর সুন্দর মুহূর্ত রয়েছে। যা কখনো মুছে যাবে না। হলং আবার নতুন করে তৈরি হবে কি হবে না, সেটা তো সময় বলবে। কিন্তু বহু মানুষের হলংকে ঘিরে থাকা এই স্মৃতিগুলি হয়ত তাঁদের জীবনের শেষ সময় অব্দি তাদের মনের মণিকোঠায় থেকেই যাবে অমলিন ভাবে।