বর্ধমান–দুর্গাপুর আসনে তৃণমূলের প্রেস্টিজ লড়াইয়ে কীর্তি আজাদ

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান): রবিবার ব্রিগেড থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ এবং বিশেষ করে অন্যতম প্রেস্টিজিয়াস সিট হিসাবে পরিচিত বর্ধমান–দুর্গাপুর লোকসভা আসনে প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তিবর্ধন…

Kirti Azad

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান): রবিবার ব্রিগেড থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ এবং বিশেষ করে অন্যতম প্রেস্টিজিয়াস সিট হিসাবে পরিচিত বর্ধমান–দুর্গাপুর লোকসভা আসনে প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তিবর্ধন ভগত ঝা আজাদকে তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করার পর শুরু হয়ে গেল তীব্র চর্চা। এদিন ব্রিগেডের সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করে উপস্থিত জনতার কাছে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে চান ভূমিপুত্র নাকি বহিরাগত কাদের বিশ্বাস করবেন? আর তার কিছুক্ষণ পরেই বর্ধমানের এই আসনে কীর্তি আজাদকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করার পর বিরোধীরা রীতিমতো হাতিয়ার করেছেন অভিষেকের বক্তব্যকেই।

বর্ধমানের বিশিষ্ট ক্রিকেটার এবং ক্রীড়া সংগঠক ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক সুধীররঞ্জন সাউ জানিয়েছেন, কীর্তি আজাদের বাবা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তাই বাবার প্রভাব খাটিয়ে ইন্ডিয়া দলে ঢুকেছিলেন। খেলোয়াড় কীর্তি আজাদের পারফরম্যান্সও ভাল নয়। তার ওপর বহিরাগত। বাংলা জানেন না। কীভাবে বাংলার ভোটারদের সঙ্গে খাপ খাওয়াবেন? যে তৃণমূল বিজেপিকে বহিরাগত বলে গালাগাল দিচ্ছে, সেখানে কীভাবে বিহারীবাবুকে টিকিট দিল তৃণমূল? তিনি জানিয়েছেন, দুই বর্ধমানকেই তুলে দেওয়া হল বিহারীবাবুদের হাতে। উল্লেখ্য, আসানসোলে এবারও তৃণমূল প্রার্থী করেছে বিহারীবাবু শত্রুঘ্ন সিনহাকে। এর পাশাপাশি সুধীররঞ্জন সাউ বলেন, বর্ধমান জেলা ক্রীড়া সংস্থা বর্ধমানে রানি স্টেডিয়াম ছাড়া আর দ্বিতীয় ক্রিকেট খেলার মাঠই পেল না। লিগের খেলা ছাড়া খেলাই হয় না। সেখানে একজন ক্রিকেটারকে এনে ক্রিকেটের উন্নতির খোয়াব দেখা ছাড়া আর কিছু নয়।

অন্যদিকে, লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস – ওয়ার রুমের পূর্ব বর্ধমান জেলার কো-অর্ডিনেটর গৌরব সমাদ্দার জানিয়েছেন, কীর্তি আজাদকে প্রার্থী করায় বর্ধমানের ক্রিকেটের কোনো উন্নতি হবে না। উন্নতি হওয়ার হলে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারে আগেই হত। ওরা ক্লাবকে টাকা দিয়েছে মচ্ছব করার জন্য। কিন্তু খেলার পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য আজ পর্যন্ত কিছু করেনি। তিনি জানিয়েছেন, ওদের নেতারা চোরের তকমা পেয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে দাঁড় করানোর মুখ নেই। তাই অন্য রাজ্য থেকে মুখ আনতে হচ্ছে। উল্লেখ্য, বর্ধমান-দুর্গাপুর এই লোকসভা আসনে কংগ্রেস-সিপিএমের যৌথ প্রার্থী হিসাবে ইতোমধ্যেই ব্যাপকভাবে আলোচনা চলছে প্রাক্তন সাংসদ তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী প্রদীপ ভট্টাচার্য্যের নাম। এব্যাপারে গৌরব সমাদ্দার জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত কিছুই নয়, তবে প্রদীপবাবু প্রার্থী হলে তাঁর জয় সময়ের অপেক্ষা ছাড়া আর কিছু হবে না। কারণ কংগ্রেস আমলে রাজ্যের মন্ত্রী হিসাবে প্রদীপবাবু বর্ধমানের জন্য যে কাজ করেছিলেন তা এখনও বর্ধমানবাসীর হৃদয়ে গাঁথা আছে। তাঁকে সাংসদ করে পাঠালে আখেরে বর্ধমানবাসীর উপকার হবে সেটা সকলেই বোঝেন।

জানা গেছে, আগামী ১৩ মার্চ বামেদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হতে পারে। এখন সেই প্রার্থী তালিকার দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন অনেকেই। উল্লেখ্য, কীর্তিবর্ধন ভগত ঝা আজাদ বিহারের পূর্ণিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভগত ঝা আজাদের সন্তান তিনি। প্রথমে বিজেপি, পরে কংগ্রেস এবং বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে গোয়ায় সংগঠনের দায়িত্বে কাজ করছেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ সময়কালে ভারতের পক্ষে ৭ টেস্ট ও ২৫টি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশ নিয়েছেন। ডানহাতি অফ ব্রেক বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ব্যাটিং করতেন কীর্তি আজাদ। আক্রমণাত্মক ঢংয়ে ডানহাতে ব্যাটিং করতেন ও দ্রুতগতিসম্পন্ন অফ স্পিনার হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছিলেন। এখন দেখার পালা এই নির্বাচনে তিনি কীভাবে ব্যাটিং করেন। অপরদিকে, বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনে প্রার্থী করা হয়েছে সুনীল মণ্ডলের পরিবর্তে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর শর্মিলা সরকারকে। বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহরের বাসিন্দা শর্মিলা সরকার।