Bankura: যেন ইজরায়েলে বোমা পড়ছে, কামান গর্জনে কাঁপল বিষ্ণুপুর

রাতভর টিভিতে ইজরায়েলের বোমারু বিমান হামলা ও যু্দ্ধের ছবি দেখে সকালে কামান গর্জনে ঘুম ভাঙন বিষ্ণপুরবাসীর। যেন ঘরের পাশে ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইনের যুদ্ধ চলছে। পরপর…

রাতভর টিভিতে ইজরায়েলের বোমারু বিমান হামলা ও যু্দ্ধের ছবি দেখে সকালে কামান গর্জনে ঘুম ভাঙন বিষ্ণপুরবাসীর। যেন ঘরের পাশে ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইনের যুদ্ধ চলছে। পরপর বিস্ফোরণ শব্দ। কামান থেকে গোলা দাগা চলছে। যুদ্ধ নয়, বহু প্রচীন রীতি মেনে কামান দেগে দুর্গা বরণের সূচনা হলো বিষ্ণুপুরে।

পুজো শুরু হতে এখন দু সপ্তাহ বাকি। মন্ডপে মন্ডপে এখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা। তার মাঝেই আজ থেকে বিষ্ণুপুর মল্লরাজ পরিবারে ধুমধামে শুরু হয়ে গেল দেবীপুজো। এক হাজার সাতাশ বছরের রীতি রেওয়াজ মেনেই স্নানপর্ব সেরে রাজ মন্দিরে এলেন বড়ো ঠাকুরানী। স্থানীয় পাহাড় থেকে কামানের শব্দ ঘোষণা করল দেবীর আগমন বার্তা।

৯৯৭ বছর আগে ছোটো এলাকায় বিস্তৃত ছিল মল্ল রাজত্ব। রাজধানী ছিল জয়পুর এলাকায়।মল্ল শিকারের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পথ হারিয়ে ফেলেন। একসময় ক্লান্ত হয়ে বট গাছের তলায় বসে পড়েন। পরে রাজা দৈববাণী পান ওই বটগাছের তলায় মা মৃন্ময়ীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। রাজা জগৎ মল্ল দেবীর সুবিশাল মন্দির তৈরি করেন। পাশাপাশি জঙ্গল কেটে রাজধানী সরিয়ে আনেন বিষ্ণুপুরে।

১২৭ বছর ধরে চলছে এই পুজো। কথিত আছে আগে নরবলি হত, পরে মল্ল রাজারা বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হওয়ায় তোপধ্বনির প্রচলন শুরু হয়। সেই প্রথা আজও চলে আসছে। পুজোর নির্দিষ্ট নির্ঘন্ট ঘোষিত হয় তোপধ্বনির মাধ্যমে। সারা রাজ্যে দুর্গাপুজো কালিকাপুরাণ মতে হলেও। এই পুজো করা হয় বিশেষ বলি নারায়ণ পুঁথি মেনে। তাই পুজোর নিয়ম কানুন ভিন্ন ধরনের।

প্রাচীণ প্রথানুযায়ী, দেবী পক্ষের চতুর্থীর দিন থেকে রাজপরিবারের মেজ ঠাকরুন অর্থাৎ দেবী সরস্বতী ও সপ্তমীর দিন থেকে ছোটো ঠাকরণী অর্থাৎ দেবী মহাকালীর পুজো শুরু হয়। বড়, মেজো ও ছোটো ঠাকরুণী এই তিনজনকেই দেবী মহামায়ার রুপ হিসেবে মল্লরাজাদের হস্ত লিখিত বলীনারায়নী পুথি অনুযায়ী পূজিতা হন।এদিন সকালে রাজবাড়ি সংলগ্ন রঘুনাথ সায়রে বড়ঠাকুরাণীর পটের স্নান পর্ব শেষে মন্দিরে প্রবেশের পর প্রথানুযায়ী তিন বার মূর্চ্ছা পাহাড়ে কামানের তোপধ্বণি দেওয়া হয়। পরে গর্ভগৃহে প্রবেশের মুহূর্তেও তোপধ্বণি দেওয়া হয়। পরে দেবীকে অন্নভোগ নিবেদনের সময় আরো তিনবার কামানের তোপধ্বণি দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে বড় ঠাকুরাণীর পুজোর দিন থেকেই মল্ল রাজাদের প্রাচীণ এই রাজধানীতে শারদোৎসবের সূচনা হয়।

তোপধ্বণির শব্দকে ব্রহ্ম হিসেবে ধরে সেই সময় থেকেই পাহাড়ের উপর কামানের তোপধ্বণির চালু বলে জানা গেছে। প্রাচীণ রীতি অনুযায়ী প্রতি বছর অষ্টমীর দিন থেকেই মন্দিরের গর্ভগৃহে অষ্ট ধাতু নির্মীত বিশালাক্ষ্মী ও নবমীর রাতে খচ্চরবাহিনী দেবীর পুজো হয়। বিজয়া দশমীতে দেবী মৃন্ময়ীর ঘট বিসর্জনের পর বড় ঠাকুরাণী, মেজ ঠাকুরাণী ও ছোট ঠাকুরাণীর ঘট বিসর্জন হয়। সব শেষে এই তিন ঠাকুরাণীর পট রাজবাড়ির অন্দর মহলে নিয়ে যাওয়া হয়।

সারা বছরের পাশাপাশি পুজোর এই দিন গুলিতে মন্দির নগরীতে বিষ্ণুপুরে পর্যটকদের ঢল নামে। প্রাচীন ঐতিহ্য আর পরম্পরার সাক্ষী থাকতে আজও জেলা, রাজ্য, দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশ থেকেও প্রচুর মানুষ ভীড় করেন। সব মিলিয়ে মল্লরাজারা থাকলেও তাঁদের কীর্তির জেরে বিষ্ণুপুর আছে বিষ্ণুপুরেই।