দুর্নীতির হদিশ পেতে প্রাইমারি বোর্ডের অফিসে হানা দিল CBI

আদালতের নির্দেশে ২৬৯ জনকে প্রাথমিক শিক্ষকের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে৷ দুর্নীতির শিকড়ে পৌঁছাতে রাজ্য প্রাইমারি বোর্ডের (Primary Board) সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য এবং পর্ষদ সেক্রেটারি…

CBI searched the SSC building

আদালতের নির্দেশে ২৬৯ জনকে প্রাথমিক শিক্ষকের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে৷ দুর্নীতির শিকড়ে পৌঁছাতে রাজ্য প্রাইমারি বোর্ডের (Primary Board) সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য এবং পর্ষদ সেক্রেটারি রত্না চক্রবর্তী বাগচিকে নিজাম প্যালেসের দফতরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই । এরপর বুধবারেই আদালতের নির্দেশে প্রাইমারি বোর্ডের অফিসে হানা দিল সিবিআই (CBI)।

বুধবার রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সার্ভার রুমে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন সিবিআই আধিকারিকরা। সিবিআই সূত্রে খবর, সেখানেই নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য মজুত রয়েছে। এই খবর পায় সিবিআই। তাই সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখার জন্যই উপস্থিত হন সিবিআই কর্তারা।

এদিন প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে সশরীরে হাজিরা দেন প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস। অভিযুক্ত চন্দন মণ্ডল-ই যে রঞ্জন তা আদালতকে জানিয়েছেন উপেন বিশ্বাস।

তখন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, উপেন বিশ্বাসকে প্রশ্ন করেন, আপনি খুব শ্রদ্ধেয়। কেন রঞ্জন গ্রেফতার হয়নি? কেন পুলিশকে জানালেন না? আপনি তো নিজে মন্ত্রী ছিলেন। জবাবে উপেনবাবু বলেন, আমি অসহায় ছিলাম। লোকবল ছিল না। আমি চাই এই মামলার তদন্তে স্পেশাল অফিসার নিয়োগ করা হোক। একটি সিট গঠন করে সিবিআই তদন্ত করুক। যাঁরা তদন্তের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, তাঁদের বদলি করা যাবে না। আদালতের নজরদারিতে তদন্ত হোক। তাতে প্রধানমন্ত্রীও হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।

তিনি আরও বলেন, আমার কাছে বহু অভিযোগ এসেছিল। কিন্ত আমি এতটাই অসহায় ছিলাম যে পুলিশের কাছে অভিযোগ করব তারও উপায় ছিল না। একজন পুলিশ কনস্টেবলকেও কোন নির্দেশ দিতে পারিনি। কারণ তারা জেলা সভাপতির কথা ছাড়া একপা এগোয় না

তাঁর কথায়, রঞ্জনকে গ্রেফতার না করতে পারলে তদন্ত এগোবে না। রঞ্জন একটা সিরিজ অফ পিপিলের বিন্দুমাত্র। সে মাকড়শার মত জালের মাঝে আছে। আজ শপথ নিয়ে বলছি রঞ্জন আসলে চন্দন মণ্ডল। আমি এতটা হেল্পলেস ছিলাম কিছু করতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, সিবিআইয়ের লোকবল কম। আরও বেশি লোক নিয়োগ করা প্রয়োজন। নাহলে কিংপিন কেন সাধারণ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা যাবে না। এখানেই শেষ নয়, হাইকোর্টের নজরদারিতে তদন্ত করার কথাও বলেন তিনি।

উপেন বিশ্বাসের কথায় মান্যতা দিল আদালত। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের তদন্তে এবার সিবিআইয়ের সিট গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের নজরাদারিতে এই মামলার তদন্ত হবে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এইধরনের মামলার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় অন্তর রিপোর্ট জমা দেবে সিবিআইয়ের সিট।

বুধবার প্রাথমিক শিক্ষক মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলায় সিবিআই আধিকারিকদের নিয়ে এসআইটি গঠন করা হবে। এই ধরনের টিমে থাকা সদস্যরা শিক্ষক নিয়োগ মামলা ছাড়া অন্য কোনও মামলার সঙ্গে যুক্ত হবেন না। এমনকি এসআইটির সদস্যদের কোনও ভাবেই বদলি করা চলবে না।

যেটা বলা হচ্ছে কলকাতা শাখার একজন যুগ্ম অধিকর্তা এই সিটেড় দায়িত্ব থাকবেন। তদন্ত শেষ না হওয়া অবধি বদলি করা যাবে না। এই সিটে কারা থাকবেন তা আগামী সপ্তাহের মধ্যে সিবিআইয়ের আইনজীবীকে আদালতের কাছে পেশ করতে হবে। বিচারপতির মন্তব্য, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সিবিআই এক সপ্তাহে যে কাজ করেছে, স্কুল আর্ভিস কমিশনের ক্ষেত্রে কোনও অগ্রগতি হচ্ছে না। সিবিআইয়ের কর্মকাণ্ডে তিনি যেন আশাহত না হন।

একইসঙ্গে এদিন বিচারপতি বলেন, তিনি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সিবিআই এবং পর্ষদের রিপোর্ট দেখেছেন। এতে একেবারে স্পষ্ট, যে বেছে বেছে নিয়োগ হয়েছে। নিয়োগে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট।