Ukraine War: স্বেচ্ছায় পরমাণু অস্ত্র নষ্ট করেছে ইউক্রেন

তিন দশক আগে ১৯৯১ সালে ভেঙে গিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। সে সময় সোভিয়েত রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রগুলি তিনটি জায়গায় মজুত ছিল। সেগুলি যেখানে ছিল, আজ সেখানে কাজাখস্তান,…

তিন দশক আগে ১৯৯১ সালে ভেঙে গিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। সে সময় সোভিয়েত রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রগুলি তিনটি জায়গায় মজুত ছিল। সেগুলি যেখানে ছিল, আজ সেখানে কাজাখস্তান, বেলারুশ ও ইউক্রেন। সেসময় ইউক্রেনের চেরনোবিল পরমাণু কেন্দ্র ছিল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পরমাণু অস্ত্র ভান্ডার।

ফেডারেশন অফ আমেরিকান সায়েন্টিস্টের দেওয়া বিবৃতি থেকে জানা যায়, সোভিয়েতের পতনের পর ইউক্রেনে তিন হাজার পরমাণু অস্ত্র ছিল। ওই সমস্ত পরমাণু অস্ত্রগুলি মূলত নৌবহর, সাঁজোয়া গাড়ি ও সেনাঘাঁটি ধ্বংসের কাজে ব্যবহার করা যেত। একইসঙ্গে ইউক্রেনে এমন দু’হাজার পরমাণু অস্ত্র ছিল যেগুলি দিয়ে যে কোন শহরকে ধ্বংস করা যেত। এসএস-১৯ এবং এসএস-২৪ নামে দুই ধরনের আন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রর সঙ্গে ওই পরমাণু অস্ত্রগুলি যুক্ত ছিল বলে জানা যায়।

   

যুদ্ধ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সোভিয়েতের পতনের পর রাশিয়ার চেয়েও বেশি সংখ্যক টিইউ-১৬০ যুদ্ধবিমান ছিল ইউক্রেনের অস্ত্র ভাণ্ডারে। এখন প্রশ্ন হল, ইউক্রেনে থাকা এই বিপুল পরিমাণ পরমাণু অস্ত্র কোথায় গেল? সোভিয়েতের থেকে বেরিয়ে আসার পর প্রথম দিকে ইউক্রেনের আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। ফলে ওই সমস্ত পরমাণু অস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ করা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাছাড়া ওই পরমাণু অস্ত্রগুলি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ছিল মস্কোর হাতে। আমেরিকা ও আন্তর্জাতিক মহল ইউক্রেনের এই পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিল। কারণ তারা মনে করেছিল, অর্থ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে ইউক্রেন ওই পরমাণু অস্ত্র গোপনে বিক্রি করতে পারে।

কিন্তু ইউক্রেন যাতে পরমাণু অস্ত্র গোপনে বিক্রি না করে সেজন্য রাশিয়া, আমেরিকা ও ব্রিটেনের সঙ্গে একটি চুক্তিতে সই করে ইউক্রেন। ওই চুক্তি অনুযায়ী পশ্চিমে দেশগুলি জানায়, ইউক্রেন যদি তার পরমাণু অস্ত্র অকেজো করে দেয় তাহলে তাকে অর্থ সাহায্য করা হবে। একই সঙ্গে বুদাপেস্ট চুক্তিতে রাশিয়া, আমেরিকা ও ব্রিটেন জানায়, আগামী দিনে তারা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে যথাযথ সম্মান দেবে এবং কখনও এই দেশকে হুমকি দেবে না। ওই চুক্তির পরেই ইউক্রেন তার সমস্ত পরমাণু অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করে দেয়। বেশ কয়েক দফা আলোচনার পর ইউক্রেনের বহু পরমাণু অস্ত্র চলে যায় রাশিয়ার হাতে। বিনিময়ে মস্কো ইউক্রেনকে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস দেওয়া শুরু করে।

রুশ হামলা শুরু হওয়ার পর ইউক্রেনের রাজনীতিবিদ আলেক্সেই গোনচারেঙ্কো বলেছেন, বিশ্বের ইতিহাসে সম্ভবত ইউক্রেনই একমাত্র দেশ যে স্বেচ্ছায় নিজের পরমাণু অস্ত্র অকেজো করেছে বা অন্যের হাতে তুলে দিয়েছে। যে চুক্তি মেনে ইউক্রেন এই কাজ করেছিল তাতে আমেরিকা ব্রিটেন ও রাশিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা কখনও ইউক্রেনকে আক্রমণ করবে না। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি কোথায় পালন করল রাশিয়া। এখন তো মস্কো আমাদের উপর নির্বিচারে বোমা ফেলেছে।