মোদীর সিদ্ধান্তে LIC শেয়ার বিক্রি করে সরকারের ক্ষতি ৫৪ হাজার কোটি টাকা

ভারতীয় জীবন বিমা নিগম বা এলআইসির (LIC) প্রথম শেয়ার বাজারে আসার আগেই শুরু হল তীব্র বিতর্ক। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে প্রাক্তন আমলা ও বিজেপি…

ভারতীয় জীবন বিমা নিগম বা এলআইসির (LIC) প্রথম শেয়ার বাজারে আসার আগেই শুরু হল তীব্র বিতর্ক। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে প্রাক্তন আমলা ও বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের প্রায় সব নেতাই অভিযোগ করেছেন, নরেন্দ্র মোদী সরকার জলের দরে এলআইসির শেয়ার বিক্রি করছে। এভাবে নিতান্তই কম দামে এলআইসির শেয়ার বিক্রি করার ফলে সরকারের প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকা লোকসান হবে।

আর্থিক বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক লগ্নিকারীদের চাপের কাছে মাথা নুইয়ে জলের দরে এলআইসির শেয়ার বিক্রি করছে মোদী সরকার। তাঁরা জীবন বিমার শেয়ার বিক্রির সময় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা বলেছেন, এই মুহূর্তে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গোটা বিশ্বেই শেয়ার বাজারে একটা টালমাটাল চলছে। এই পরিস্থিতিতে মোদী সরকার কেন তাড়াহুড়ো করে এলআইসির শেয়ার বিক্রি করতে চাইছে?

সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বলেছে, অর্থমন্ত্রকের বিলগ্নীকরণ দফতরের ঘোষিত নীতি হল, শেয়ার বাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার ছাড়া হবে না। তাহলে এলআইসির ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হল না কেন? এর পেছনে নরেন্দ্র মোদী সরকারের কী উদ্দেশ্য রয়েছে?

দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, এলআইসির ব্যবসা ও মুনাফার পরিমাণের উপর ভিত্তি করে এর মোট মূল্য ধরা হয়েছে ৫ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা। এই টাকার উপর ভিত্তি করে এলআইসির শেয়ারের ন্যূনতম মূল্য হওয়ার কথা ৮৫৩ টাকা। সরকার এলআইসির গ্রাহকদের জন্য শেয়ারের দাম ঠিক করেছে ৮৮৯ টাকা। কিন্তু খুচরো ও দীর্ঘমেয়াদি লগ্নিকারীদের জন্য প্রতিটি শেয়ারের দাম ধার্য হয়েছে ৯০৪ থেকে ৯৪৯ টাকা। যা আদৌ যুক্তিসঙ্গত নয়।

অর্থনীতিবিদরা স্পষ্ট বলেছেন, বাস্তবে এলআইসির শেয়ার দর ঠিক করতে হলে বিমা সংস্থার বাজারমূল্যকে আড়াই থেকে চার গুণ করে তবেই তার শেয়ারের দাম নির্ধারণ করা উচিত। ফেব্রুয়ারি মাসেও মোদী সরকার এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিল। কিন্তু মাস দুয়েকের মধ্যে কী কারণে পর্দার আড়ালে হঠাৎই সেই সিদ্ধান্ত বদলে গেল তা নিয়েই প্রশ্ন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলআইসির বাজারমূল্যকে আড়াই গুণ করে যদি তার শেয়ার দর ঠিক করা হত তাহলে প্রতিটি শেয়ারের দাম হত ২১৩২ টাকা। সংস্থার ৩.৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেই সরকারের আয় হত ৪৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। সেখানে মোদী সরকার মাত্র ২১ হাজার কোটি টাকায় শেয়ার বিক্রি করতে চাইছে। অর্থাৎ সরকারের লোকসান হচ্ছে ২৬ হাজার কোটি টাকা।

অন্যান্য বিমা সংস্থার সঙ্গে তুলনা করে এলআইসির বাজারদর চারগুণ করে শেয়ার মূল্য নির্ধারণ করা উচিত ছিল। সে ক্ষেত্রে সরকারের আয় হত প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসেবে দেখতে গেলে সরকারের লোকসান হচ্ছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা।

আর্থিক বিশেষজ্ঞরা জানতে চেয়েছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে সরকার এলআইসির মূল্যায়ন করেছিল ১২ থেকে ১৪ লক্ষ কোটি টাকা। দু’মাসের মধ্যে কোন কারণে তা ৬ লক্ষ টাকায় নামিয়ে আনা হল সরকারের উচিত সেটা স্পষ্ট করে জানান। কেন সরকার এই চূড়ান্ত অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে এলআইসি শেয়ার বিক্রি করতে উঠে পড়ে লেগেছে?

দেশি-বিদেশি কিছু লগ্নিকারী সংস্থার সঙ্গে বৈঠকের পরই কেন এলআইসির মূল্য কমানো হল এবং ৫ শতাংশের পরিবর্তে কেন ৩.৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল সেটাও সরকারের জানানো উচিত।