আড়িপাতা অসম্ভব, এমন টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা শীঘ্রই আনতে চলেছে ইসরো

প্রতিবেদন: আজকের দিনে প্রতিটি দেশই হ্যাকারদের তাণ্ডবে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা হোক বা ডিজিটাল মাধ্যম সব জায়গাতেই হামলা চালিয়েছে হ্যাকাররা। দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে অর্থনীতি…

প্রতিবেদন: আজকের দিনে প্রতিটি দেশই হ্যাকারদের তাণ্ডবে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা হোক বা ডিজিটাল মাধ্যম সব জায়গাতেই হামলা চালিয়েছে হ্যাকাররা। দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে অর্থনীতি সবক্ষেত্রেই গোপন নথিপত্র হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে সাইবার অপরাধীরা। এমনকী, করোনা ভ্যাকসিন তৈরির সূত্রও চুরি করার চেষ্টা চালিয়েছে চিনের হ্যাকাররা। কিন্তু এবার বোধহয় হ্যাকারদের সেই দিন শেষ হতে চলেছে। এবার এমন এক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে যেখানে কোনভাবেই হ্যাকাররা আড়ি পাততে পারবে না। আর এই বিশেষ ধরনের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বাজারে আনতে চলেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো (ISRO)।

জানা গিয়েছে, হ্যাক প্রুফ কমিউনিকেশন বা কোয়ান্টাম কমিউনিকেশন প্রযুক্তিতে নতুন নজির তৈরি করতে চলেছে ইসরো। আগামী দিনে যে সমস্ত প্রযুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে তার মধ্যে অন্যতম কোয়ান্টাম কমিউনিকেশন। যার মাধ্যমে দেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে হ্যাকারদের হাত থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদে রাখা যাবে। ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ জানিয়েছেন, ৩০০ মিটার দূরত্বের দুটি বাড়ি থেকে টেলিযোগাযোগ করে তাঁরা প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছেন। প্রাথমিক পরীক্ষায় তাঁরা অনেকটাই সফল হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তথ্যের গ্রাহক ও তথ্যের প্রেরক দুজনের কাছেই একটি বিশেষ চাবি থাকবে। এই চাবি দিয়ে তথ্য আদান-প্রদানের রাস্তা তালা বন্ধ করে রাখা যাবে। গ্রাহক বা প্রেরক চাইলে তবেই সেই তালা খুলবে। গোপন সেই চাবি হ্যাকারদের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব হবে না। ফলে তারা আর হ্যাক করতে পারবে না।

ইতিমধ্যেই বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যোগাযোগ বা তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যম যদি কোয়ান্টাম নির্ভর হয় তাহলে সেখানে কোনভাবেই হ্যাক করা যাবে না। ইসরোর গবেষক ও বিজ্ঞানীরা ঠিক সেই পথে হেঁটেছেন। কোয়ান্টাম নির্ভর তথ্য প্রযুক্তির বিশেষ দিক হল ক্রিপ্টোগ্রাফি বা গোপনে তথ্য আদান-প্রদান। ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড থেকে শুরু করে ব্যাংক এবং অনলাইনে জিনিস কেনা-বেচা সবেতেই দরকার গোপনীয়তা। যেখানেই গোপনীয়তার দরকার সেখানে বিশেষভাবে দরকার কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি।

ক্রিপ্টোগ্রাফি তথ্যের প্রেরক এবং তথ্যের গ্রাহক দুজনের কাছে আগে থাকতেই মজুত থাকে চাবি। যিনি তথ্য পাঠাচ্ছেন তিনি আগেভাগেই গ্রাহককে জানিয়ে দেবেন যে, চাবি দিয়ে তালা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই জানানোর পথেও আড়ি পাততে পারে হ্যাকাররা। কিন্তু কোয়ান্টাম নির্ভর মাধ্যমে হ্যাকারদের পক্ষে হানা দেওয়া অসম্ভব। এটাই ক্রিপ্টোগ্রাফির বৈশিষ্ট্য।

বিজ্ঞানের এই নতুন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ইসরোর বিজ্ঞানী ও গবেষকরা এমন ব্যবস্থা আনছেন যা হ্যাক করা সম্ভব নয়। যদি হ্যাক করার চেষ্টাও হয় তবে তা আগেভাগেই টের পেয়ে যাবেন গ্রাহক ও প্রেরক। চিন ইতিমধ্যেই ক্রিপ্টোগ্রাফির পথে অনেকটাই এগিয়েছে। ইতিমধ্যেই বেজিং মহাকাশে একটা কোয়ান্টাম স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছে। যোগাযোগের পথে হ্যাকাররা যাতে ঢুকে পড়তে না পারে সে বিষয়ে সাহায্য করবে এই স্যাটেলাইট। ইসরোও এই কোয়ান্টাম কমিউনিকেশনের গবেষণায় অনেকটাই এগিয়েছে। খুব শীঘ্রই তারাও এই নতুন প্রযুক্তির এনে হয়তো এক বড় ধরনের চমক দেবে।