Nadia Nighat: সামাজিক লাঞ্ছনাকে উপেক্ষা করেই অসাধ্যসাধনের পথে নাদিয়া

নাদিয়া নিঘাত (Nadia Nighat)। বয়স ২২। এখনও কিশোরী থেকে মহিলা হওয়ার পথে। বাসস্থান শ্রীনগরের রামবাগ। কাশ্মীরে প্রথম লাইসেন্সধারী মহিলা ফুটবল কোচ। কাশ্মীরে সামাজিকভাবে যুগ যুগ…

Women's football coach Nadia Nighat

নাদিয়া নিঘাত (Nadia Nighat)। বয়স ২২। এখনও কিশোরী থেকে মহিলা হওয়ার পথে। বাসস্থান শ্রীনগরের রামবাগ। কাশ্মীরে প্রথম লাইসেন্সধারী মহিলা ফুটবল কোচ। কাশ্মীরে সামাজিকভাবে যুগ যুগ ধরে তীব্র লাঞ্ছনায় আক্রান্ত কিশোরীদের ফুটবলের মাধ্যমে মুক্তির পথে আনার লড়াইয়ে প্রথম মহিলা নাদিয়া নিঘাত। ভূ-স্বর্গের মহিলা ফুটবলে নাদিয়া নিঘাতকে ডাকা হয় ‘জোয়ান অফ আর্ক’ নামে।

শ্রীনগরের রামবাগে তার নিজের একটি ফুটবল স্কুল রয়েছে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর অসম্ভব ভক্ত বলে নাদিয়া তার স্কুলের নাম রেখেছেন জে জে-৭। শুরু হয়েছিল ছেলে ও মেয়েদের খেলা শিখিয়ে। এখন সেখানে শুধু অনূর্ধ-১৯-এর মেয়েরা খেলা শেখে। রামবাগেই রাজ্য স্পোর্টস কাউন্সিলের কাছ থেকে পেয়েছেন একটি মাঠ।

   

প্রায় ১০ বছর হয়ে গেল তার ফুটবল স্কুলের। কিন্তু এখনও তার মেয়েরা প্র্যাক্টিসে পৌঁছনোর প্রায় আধ ঘন্টা আগে থেকে নাদিয়াকে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়! প্র্যাক্টিস শেষ হওয়ার পর একাধিক মেয়েকে তাদের বাড়ির দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসতে হয়! কারণ, স্থানীয় ছেলেদের, এমনকী বয়ষ্ক পুরুষদেরও লাঞ্ছনা! আর নাদিয়ার মতে পুরুষ-শাসিত সমাজের এই লাঞ্ছনা, ব্যঙ্গ, বিদ্রুপে পরোক্ষ মদত রয়েছে সংবাদমাধ্যমের!

কেরলের মহিলা ফুটবল লিগে ডন বসকো এফসি-র হয়ে খেলতে নাদিয়া এখন ত্রিচুরে। বুধবার রাতে সেখান থেকে ফোনে কথা বলার সময় নাদিয়ার আক্ষেপ, “আমার অ্যাকাডেমির মেয়েদের নিয়ে কয়েকবছর আগে একটা টুর্নামেন্টে খেলেছিলাম। প্রত্যেকটা ম্যাচের পরের দিন একাধিক স্থানীয় সংবাদপত্রে আমার মেয়েদের ছবি দিয়ে যে লেখাগুলো বেরিয়েছিল সেখানে ছিল বিদ্রুপ যে হিজাব না পরেই মেয়েরা এখন কাশ্মীরে ফুটবল খেলছে! তারপর থেকে মেয়েরা আমার অ্যাকাডেমিতে প্র্যাক্টিসে যাতায়াত করার সময় স্থানীয় ছেলেরা তাদের বিদ্রপ করত, ব্যঙ্গ করত, এমনকী মেয়েদের পাড়ায় বয়ষ্করাও তাদের গালাগাল করত ফুটবল খেলার জন্য। কতদিন হয়েছে, আমার প্র্যাক্টিস বিকেল ৪টে থেকে, আমাকে তার দু’ঘন্টা আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে মেয়েদের ঘর থেকে নিয়ে প্র্যাক্টিসে যেতে হয়েছে। পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে কিছুটা ভাল। তাও মেয়েরা খেলাধুলো করুক এটা কাশ্মীরে কেউ চায় বলে মনে হয় না।”

নাদিয়া নিজে লাইসেন্সধারী কোচ, রাজ্যের হয়ে বহুবার প্রতিনিধিত্ব করা পেশাদার ফুটবলার, এমনকী সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের পুরষ্কারপ্রাপ্ত রেফারিও। এখন তার মিশন একটাই। কাশ্মীরে মহিলা ফুটবলের লিগ চালু করা। বললেন, “মহিলাদের আট থেকে ১০টা ভাল দল রয়েছে খেলার জন্য। কিন্তু চাই আর্থিক অনুদান। রাজ্য সরকার, রাজ্য ফুটবল সংস্থার মধ্যে কেউই একটা টাকা অনুদান দেয় না, তাদের দেওয়ারও ইচ্ছে নেই। সেই কারণে লড়াইটা কঠিন।” তবু হার মানার পাত্রী নন নাদিয়া। জানিয়ে দিলেন শেষ দেখে ছাড়বেন!