Sunil Chhetri: একই সপ্তাহে দুটো পার্টি করলে ক্ষতি কী? কেন এরকম বললেন সুনীল

দীর্ঘ ১৭ বছরের ফুটবল কেরিয়ারে এতটা উচ্ছ্বসিত হতে সচরাচর দেখা যায়নি সুনীল ছেত্রীকে (Sunil Chhetri)। দেশের হয়ে ৮২টি গোল করেছেন। কিন্তু সেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ হয়…

Sunil Chhetri

দীর্ঘ ১৭ বছরের ফুটবল কেরিয়ারে এতটা উচ্ছ্বসিত হতে সচরাচর দেখা যায়নি সুনীল ছেত্রীকে (Sunil Chhetri)। দেশের হয়ে ৮২টি গোল করেছেন। কিন্তু সেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ হয় বেশ লাজুক ভাবেই। অনেকটা মহেন্দ্র সিং ধোনির মতোই শান্ত স্বাভাবের সুনীল নিজের আবেগকে সযত্নে গুছিয়ে রাখেন। কিন্তু আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সামাদের জয়সূচক গোলের পর চিত্রটা ছিল অন্যরকম। লম্বা একটা স্প্রিন্ট নিয়ে মাঠে ঢুকে পড়েন সুনীল। জড়িয়ে ধরেন সতীর্থদের।

এই প্রসঙ্গ তুলতেই সুনীল বলেন, ‍‘আমি সত্যিই ভীষণ খুশি ছিলাম তখন। দলের ছেলেরাও আমাকে এটা জিজ্ঞেস করে যে, দাদা যখন গোল করো, তখন তো কোনও সেলিব্রেট করো না। কিন্তু আজকের মুহূর্তটা অন্যরকম ছিল। আমি নিজের ও মনবীরের ওপর তখন একটু চটে ছিলাম। কারণটা বলা যাবে না। গোল খেয়ে খুব দুঃখ পেয়েছিলাম তখন। কিন্তু ব্র্যান্ডন, আশিক, উদান্ত, সামাদ মিলে যখন গোলটা করল, তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। এত লম্বা স্প্রিন্ট বোধহয় আমার ফুটবল জীবনে কখনও দিইনি। আমার জিপিএস বোধহয় সে রকমই বলবে।’

   

বারবার প্রশ্ন উঠছে, ভারতীয় দলে সুনীল ছেত্রী ছাড়া গোল করার কেউ নেই। এ কথা মানতে রাজি নন সুনীল। তিনি বলেন, ‍‘সুনীল ছেত্রীকেই যে গোল করতে হবে সবসময়, তার কোনও মানে নেই। সামাদ তো রয়েছে। দলে আমার ভূমিকা সামান্যই। প্রত্যেকেরই অল্প অল্প করে সমান ভূমিকা রয়েছে। তেমন আমারও আছে। আনোয়ার, রোশন, গুরপ্রীত, সন্দেশরা কত ভাল খেলেছে, তা সবাই দেখেছে। ওরা ভাল না খেললে আমি গোল করার সুযোগই পেতাম না।’ প্রসঙ্গত, আফগান বিরুদ্ধে জয়সূচক গোলটি করেন সাহাল আবদুল সামাদ। তিনি আফগানদের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে ভারতের প্রথম গোলদাতা সুনীল ছেত্রীরই পরিবর্ত হিসাবে মাঠে নেমেছিলেন।

নিজেকেও দলে বাড়তি গুরুত্ব দিতে রাজি নন ভারত অধিনায়ক। বলেন, ‍‘আসলে দলে আমার ভূমিকাটাই সবচেয়ে আকর্ষণীয়। তাই লোকে আমাকে নিয়েই বেশি আলোচনা করে। আমি মাঠে থাকলে ছেলেরা বোঝে তাদের প্রত্যেককে কী করতে হবে। আমি মাঠে সবার সঙ্গে কথা বলতে থাকি। যার জন্য আমার ভূমিকাটা হয়তো একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। আমি যেমন সামনে চেঁচাই, পিছন থেকে সন্দেশ, গুরপ্রীতরা চেঁচায়। বাকিরা আমাদের কথা মতোই চলার চেষ্টা করে। যেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ সামাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সুনীল বলেন, ‍‘গত একমাস ধরে ইশান (পন্ডিতা) ও সামাদকে নিয়ে আমরা সমানে শুটিং অনুশীলন করেছি। আশা করি, ইশানও সুযোগ পাবে। প্রথম দলে না থেকেও পরে নেমে এই পারফরম্যান্স দেখানোটা অসাধারণ ব্যাপার। সামাদ যেটা করেছে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে, তা মোটেই সোজা ছিল না।’

রবিবারই আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১৭ বছর পূর্ণ করছেন সুনীল ছেত্রী। ২০০৫-এ এই দিনেই দেশের হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। শনিবার এই স্মরণীয় জয়ের মাধ্যমেই দলনেতাকে এই উপলক্ষে সেরা উপহার দেন তাঁর দলের ছেলেরা। এমন উপহার পেয়ে খুশিও তাঁদের ‘ক্যাপ্টেন’। বলেন, ‍‘এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে এই উপলক্ষে এটাই আমার সেরা উপহার। পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হলে আমাদের পক্ষে তা মোটেই ভাল হত না। কিন্তু শেষে ছেলেরা এত ভাল খেলল যে, তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছেড়েছি আমরা। এই জয়ের খুশি নিয়ে আমার আন্তর্জাতিক ফুটবলের ১৭ বছর পূর্ণ হল। এই মাইলফলকগুলোকে আমি খুব একটা গুরুত্ব দিই না। এটা এমন কিছু বড় ব্যাপার নয়। তবে আমি সন্মানিত যে এতদিন ধরে দেশের হয়ে খেলতে পারছি।’

মঙ্গলবার হংকংয়ের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, যে ম্যাচ না জিততে পারলে টুর্নামেন্টের মূলপর্বে উঠতে পারবে না ভারত এবং ভারতীয় ফুটবলারদের এত পরিশ্রম সব বিফলে যাবে। এই ম্যাচ নিয়ে অধিনায়কের বক্তব্য, ‍‘এখন আমাদের নিজেদের পারফরম্যান্সের ভিডিও দেখতে হবে। হংকং ম্যাচেরও ভিডিও দেখতে হবে। ওরা যথেষ্ট শক্তিশালী দল। দুটো ম্যাচে ছ’পয়েন্ট পেয়েছে। তবে আমরা আমাদের ঘরের মাঠে খেলছি। তাই যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হয়েই নামব।’ সেইসঙ্গে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে সমর্থকদেরও তিনি আহ্বান জানিয়েছে মাঠ ভরানোর জন্য। সব শেষে দেশের ফুটবলপ্রেমীদের আশ্বাস দিয়ে রাখলেন সুনীল যে, চারদিনের ব্যবধানে আরও একবার সাফল্য উদযাপন করার সুযোগ পেতে পারেন তাঁরা। বলেন, ‍‘একই সপ্তাহে দুটো পার্টি করলে ক্ষতি নেই। তাই তৈরি থাকুন।’