যে দলে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, কেএল রাহুলের মতো তারকা ব্যাটসম্যান আছে, সেখানে অন্য কারও জন্য আলোচনা করা খুব কঠিন। কিন্তু ২০২৩ সালে এই তারকা খেলোয়াড়দের চেয়ে বেশি আলোচিত হন শুভমান গিল (Shubman Gill)। বিশ্বকাপে ‘প্রবেশ’ করা ‘জ্ঞাত’ ব্যাটসম্যানদের তালিকা তৈরি করা হলে শীর্ষে থাকবেন শুভমান গিল। বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষ দলগুলোর জন্যও শুভমন গিল বড় চ্যালেঞ্জ দেখাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
কিন্তু তারপর ভাগ্য বদলে গেল। প্রথম ম্যাচের ঠিক আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন শুভমান গিল। বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে প্ল্যান-বি নিয়ে আসতে হয়েছিল ভারতীয় দলকে। প্ল্যান-বি অর্থাৎ ইশান কিষাণ। ইশানকে নিয়ে ইনিংস শুরু করেন রোহিত শর্মা। এমনকি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে, গিলকে দলের সাথে ভ্রমণের পরিবর্তে হোটেলে বিশ্রাম নিতে বলা হয়েছিল। এর মধ্যে তাকে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়। কিন্তু ১৪ অক্টোবর, যখন রোহিত শর্মা আহমেদাবাদে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচের জন্য টস করতে আসেন, তখন তিনি সুসংবাদ দেন যে শুভমান গিল এখন ফিট। পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবেন তিনি। সেই ম্যাচে শুভমান গিল মাত্র ১৬ রান করে আউট হন। এখন রানের ক্ষুধা আরও বেড়েছে শুভমানের। এই ক্ষুধা বাংলাদেশের বোলারদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ভালো ছোঁয়ায় দেখা গেছে গিলকে
পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ১৬ রান করেছিলেন শুভমান গিল। তবে তার ব্যাটিং স্টাইল মনে রাখবেন। ১৬ রানের মধ্যে ১৬টি বাউন্ডারি থেকে এসেছে। আউট হওয়ার আগে ৪টি চার মেরেছিলেন তিনি। শাহীন শাহ আফ্রিদির বলে শুভমান গিল যে আক্রমণাত্মক চার মারেন তা দেখার মতো শট ছিল। এরপর হাসান আলীর একই ওভারে তিনটি চার মারেন তিনি। এতে মিড-অফের দিকে একটি চার মারেন। অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা রোহিত শর্মাও তাঁর প্রশংসাকারীদের মধ্যে ছিলেন। আসলে, ভাষ্যে আলোচনা শুরু হয়েছিল যে ভাইরাসটি শুভমান গিলের ‘টাইমিং’-কে প্রভাবিত করেনি। এর পর অবশ্য আউট হন শুভমান গিল।
আজ, ১৯ অক্টোবর যখন বাংলাদেশের বোলার শুভমান গিলের মুখোমুখি হবে, তখন গিলের ব্যাটিং দেখার মতো। পাকিস্তানের বোলারদের এবং বিশেষ করে শাহীন শাহ আফ্রিদির যে প্রশংসা করা হয় তা শুভমান গিলের সামনে থাকবে না। উইকেটের অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা রোহিত শর্মাও তাকে ক্রমাগত তার স্বাভাবিক খেলা খেলতে নির্দেশ দেবেন। শুভমন গিল এটাও জানেন যে নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কঠিন দলের মুখোমুখি হওয়ার আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে করা রান তাকে আত্মবিশ্বাস দেবে।
২০২৩ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসবেন শুভমান গিল
গিল এ বছর দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন। কিন্তু এ বছর তাকে দুবার বিপাকে পড়তে হয়েছে। একবার মাঠের ভেতরে, একবার বাইরে। ডেঙ্গুকে মাঠের বাইরের সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু একসময় মাঠের ভেতরে আটকে পড়েন কয়েকদিন। মনে রাখবেন, তিনি এই বছর আইপিএলে ১৭ ম্যাচে ৫৯.৩৩ গড়ে ৫৬৪ রান করেছেন। তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১৫৭.৮০। তার খাতায় ছিল ৩টি সেঞ্চুরি ও ৪টি হাফ সেঞ্চুরি। সে কমলা ক্যাপ পেয়েছে। কিন্তু আইপিএলের পর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে লড়াই করতে হয়েছে তাকে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচের দুই ইনিংসেই তার ব্যাট থেকে কোনো রান আসেনি। তিনি মাত্র ১৩ ও ১৮ রান করেন।
এর পর মুখোমুখি ওয়েস্ট ইন্ডিজের অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের বিপক্ষে। কিন্তু প্রথম টেস্ট ম্যাচে শুভমান গিলের ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৬ রান। দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটিও তাকে হতাশ করেছে। দুই ইনিংসেই তিনি মাত্র ৩৯ রান যোগ করতে পারেন। এই সিরিজে তার ব্যাটিং অর্ডারেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। যার কারণে রানের দিক দিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি। তবে শুভমান গিলকে নিয়ে ব্রুহা শুরু করার আগেই তার ব্যাট ফেটে যায়। একটানা রান করতে থাকেন।
এ বছর গিলের রেকর্ড বাংলাদেশকে ভয় দেখাবে
শুভমান গিলের এই বছরের রেকর্ডগুলো যে কোনো দলকে ভয় দেখাতে যথেষ্ট। সমস্যা একটাই যে বাংলাদেশকে এখন তাদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এ বছর শুভমান গিল ৫টি ওয়ানডে সেঞ্চুরি করেছেন। এই বছর খেলা ২১ টি ওয়ানডে ম্যাচে ১২৪৬ রান করেছেন তিনি। তার গড় প্রায় ৭০। এছাড়া এ বছর টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে একটি করে সেঞ্চুরি করেছেন শুভমান গিল। এ বছর তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৭০০ রানের বেশি যোগ করেছেন। তার একটা বড় ইনিংসও আছে। তিনি ছাড়াও টপ অর্ডারের সবাই পরীক্ষিত। প্রত্যেক ব্যাটসম্যানও সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। বিরাট কোহলি এবং কেএল রাহুল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কঠিন সময় থেকে টিম ইন্ডিয়াকে টেনে আনলেন।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন রোহিত শর্মা। প্রথম ম্যাচে বাজে শট খেলে আউট হওয়ার পর শ্রেয়াস আইয়ারও ভালো শক্তিশালী ইনিংস খেলেছেন। তার মানে, এখন যে ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে ক্রিকেট ভক্তরা বিশেষ ইনিংস চান তিনি হলেন শুভমান গিল। শুভমান গিলও তার ভক্তদের একটি বিশেষ ইনিংস উপহার দিতে চান। এটাই তার প্রথম বিশ্বকাপ। যুবরাজ সিং তার সম্পর্কে বলেছেন যে তিনি ভবিষ্যতের ‘কিংবদন্তি’। শুভমান গিল এই পথেই এগিয়ে যেতে চান।