Majid Reza Rahnavard : হিজাব বিরোধী মজিদের ফাঁসির কথা তার মা’কে বলা হয়নি, ইরানে যেন তালিবানি শাসন

সুজানা ইব্রাহিম মোহনা, দোহা: ভিডিওটা দেখে কাতার বিশ্বকাপ (Qatar WC) আসর জুড়ে চাপা আতঙ্ক ও তীব্র মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন দেশের সমর্থকদের মধ্যে। সামাজিক…

সুজানা ইব্রাহিম মোহনা, দোহা: ভিডিওটা দেখে কাতার বিশ্বকাপ (Qatar WC) আসর জুড়ে চাপা আতঙ্ক ও তীব্র মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন দেশের সমর্থকদের মধ্যে। সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়েছে ইরানে হিজাব বিরোধী আন্দোলনকারী মজিদরেজা রাহনাভার্ডের (Majid Reza Rahnavard) প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ডের ছবি। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি ইরান (Iran) সরকার ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে হিজাব বিরোধীদের বার্তা দিল। (এই ছবি ও ভিডিও যাচাই করেনি Kolkata 24×7)

কাতারবাসী বাঙালিদের মধ্যে গুঞ্জন, হিজাব বিরোধীকে এই প্রকাশ্যে ফাঁসির পরেও প্রতিবাদী কলকাতা নীরব কেন? কোথায় গেল ঢাকার বিখ্যাত প্রতিবাদী মশাল মিছিল? অথচ ইরানে হিজাব বিদ্রোহের সমর্থনে দুই বাংলার লাখ লাখ মানুষ বিদ্রোহের সমর্থনে সমাজিক মাধ্যমে সোচ্চার হয়েছিলেন। অভিযোগ, এখন এই ভয়াবহ ঘটনার পর তারা সবাই নীরব দূরত্ব বজায় রাখছেন।

iran_hijab

একটু আগে জানা গেল, হিজাব বিরোধী আন্দোলনে নেমে পড়া ইরানি কুস্তিগীর মজিদরেজা রাহনাভার্ডকে একটি ক্রেন থেকে ঝুলিয়ে মারা হয়েছে।  বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলির অভিযোগ, সেই ফাঁসির দৃশ্য ছড়ানোর জন্য পথচলতি জনসাধারণকে মোবাইলে ভিডিও তুলতে বাধা দেয়নি ইরান সরকার। তাদের আরও দাবি,  ইরান সরকার হিজাব বিরোধীদের ভয়াল বার্তা দিয়েছে।

একাধিক সংগঠনের দাবি, বন্দি হবার পর মায়ের সাথে দেখা করার আগেও মজিদরেজা রাহনাভার্ড জানতেন না তাকে ফাঁসি দেওয়া হবে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো আরও জানিয়েছে, ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছে ইরান সরকার। গত সপ্তাহে মোহসেন শেকারি নামে ২৩ বছরের এক যুবকের ফাঁসি কার্যকর করা হয় ইরানে। দুজনই হিজাব বিরোধী আন্দোলনে সামিল হয়েছিল।

এই হিজাব বিদ্রোহ সমর্থন করেছিলেন কাতার বিশ্বকাপে খেলতে আসা ইরান দলের ফুটবলাররা। তাদেরও কি চরম শাস্তি হবে? 

Hijab rebels hanged in Iran, concern over footballers

দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত দোহা থেকে অনেক চেষ্টা করেও ইরানে থাকা আমার পরিচিতদের কারোর সাথেই যোগাযোগ করতে পারলাম না।  বুঝতে পারছি কী চরম আতঙ্ক সে দেশে। আতঙ্কের ঢেউ তো কাতারেও এসে গেছে। তবে বিশ্বকাপের ঝলকানিতে খানিকটা চাপা দেওয়ার চেষ্টা চলেছে।

ইরানে কি তালিবানি শাসন তৈরি হয়ে গেল? একটা গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকার কী করে প্রকাশ্যে ফাঁসি কার্যকর করতে পারে? উঠছে এই প্রশ্ন। আমি নিজেও গত কুড়ি বছর ধরে আরব দুনি়য়ার বাসিন্দা। হিজাব বিদ্রোহের আগে কয়েকবার ইরানে গেছিলাম। আর সব ইসলামিক দেশগুলির মতো মহিলাদের কিছু পোষাকবিধি ইরানে থাকলেও সে দেশে এমন প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড হবে তা ভাবতেও পারিনি। ইসলামি দুনিয়ার তথা বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধিশালী ইরানের এই ঘটনা ভয়াবহ ইঙ্গিত দিতে শুরু করল।

Iran2

হিজাব ঠিক মতো না পরায় ইরানি-কুর্দিস মাহশা আমিনিকে গ্রেফতার করেছিল ইরানের ধর্মীয় নীতি পুলিশ। তাদের হেফাজতেই আমিনির মৃত্যুর পর থেকে হিজাব বিরোধী গণআন্দোলনে জ্বলছে ইরান। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, পাঁচশোর বেশি আন্দোলনকারী নিহত। ইরান সরকারের দাবি, দেশে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কড়া হাতে সরকার সব নিয়ন্ত্রণ করছে।

iran_hijab

বিক্ষোভের মাঝে দুদিন আগেই ইরান সরকারের তরফে ইঙ্গিত দেওয়া হয় সে দেশে ধর্মীয় নীতি পুলিশ থাকবে না। সন্দেহ ছিল নতুন কোনও পরিকল্পনা করেছে ইরান সরকার। এবার প্রকাশ্যে যেভাবে ইরানি হিজাব বিদ্রোহীকে ফাঁসি দেওয়ার ভিডিও দেখা যাচ্ছে তাতে ফিরে আসছে সিরিয়া, ইরাকে ইসলামিক স্টেট জঙ্গি সংগঠনের তৈরি করা সেই ভয়াবহ মুহূর্তগুলো। একইরকম আফগানিস্তানে তালিবান নৃশংসতা। এবার  ইরানের এই ফাঁসির ভিডিও পুরো আরব বিশ্বে প্রবল ঝড় তুলে দিয়েছে। পরিস্থিতি খুবই জটিল। পারস্য উপসাগর তীরে নতুন বিপদের মেঘ ঘনিয়ে এসেছে।

Iran

১৯৭৯ সালে রাজতন্ত্র হটানোর আন্দোলনে ইরানে শেষ হয়েছে রাজার শাসন। সেই বিক্ষোভের পর শুধু গণতন্ত্র নয়, জবরদস্তি ইসলামিক প্রজাতন্ত্র তৈরি করা হয়েছে।  এই ধর্মভিত্তিক নিয়মের মহিলাদের হিজাব বাধ্যতামূলক ইরানে। সেই হিজাবের বিরুদ্ধেই চলছে ইরানিদের তীব্র আন্দোলন।