বাঙালি এবং ফুটবল। এ যে একে অপরের পরিপূরক। বাঙালিদের মজ্জায় মজ্জায় রয়েছে ফুটবলের সোঁদা গন্ধ। এবার সেই ফুটবলেরই এক গুরুত্বপূর্ণ আসর বসতে চলেছে কলকাতার বুকে, বাঙালিদের একেবারে নাকের ডগায়। বুধবার থেকে যুবভারতী স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে মহাদেশের সবচেয়ে বড় ফুটবলের আসর এএফসি এশিয়ান কাপের (AFC Asian Cup) বাছাই পর্ব। যেখানে তিনটি ম্যাচে সফল হলে ভারতীয় দল ২০১৯-এর মতো আগামী বছরেও এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলবে।
এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে গ্রুপ ডি-তে ভারত ছাড়াও রয়েছে হংকং, আফগানিস্তান ও কম্বোডিয়া। এরা প্রত্যেকেই ফিফা ক্রমতালিকায় ভারতের নীচে রয়েছে। বুধবার ভারত তাদের প্রথম ম্যাচ খেলবে কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে, শনিবার তাদের প্রতিদ্বন্দী আফগানিস্তান এবং আগামী মঙ্গলবার তাদের শেষ প্র্রতিপক্ষ হংকং।
ভারতীয় দলকে সমর্থন জোগাতে যে বাঙালিদের ঢল নামবে যুবভারতীর গ্যালারিতে, টিকিটের হাহাকারে তা পরিষ্কার। ভারতীয় দলের ফুটবলাররাও জানিয়েছেন, কলকাতায় নিজেদের সমর্থকদের সামনে খেলা মানে বাড়তি সুবিধা। ইগর স্টিমাচের দলের দ্বাদশ ব্যক্তি হিসেবে অবশ্যই থাকবেন যুবভারতীর প্রায় হাজার পঞ্চাশ সমর্থক। তবে শুধু মাঠের বাইরে নয়, মাঠের ভিতরেও দুই বঙ্গসন্তান হয়ে উঠবেন ভারতীয় দলের অন্যতম দুই তুরুপের তাস। হুগলীর প্রীতম কোটাল ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার শুভাশিস বোস। উত্তরপাড়ার প্রীতমের আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক ২০১৫-র মার্চে, বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে নেপালের বিরুদ্ধে। স্টিফেন কনস্টানটাইনের প্রশিক্ষণে নেপালের বিরুদ্ধে দু’টি লেগের ম্যাচেই তিনি খেলেন।
তার পর থেকে গত সাত বছরে মোট ৬০টি ম্যাচে তিনি স্কোয়াডে ছিলেন এবং শুরু থেকে খেলেছেন ৪৪টি ম্যাচ। মাত্র দু’বার পরিবর্ত হিসেবে নেমেছিলেন। দেশের হয়ে দু’টি গোল রয়েছে তাঁর। দু’টিই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। ভারতের হয়ে চিন, পুয়ের্তো রিকো, জর্ডন, ওমান, আরব আমিরশাহি, বাহরিনের মতো শক্তিশালী দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি ম্যাচে প্রথম দলে রেখেছেন। গতবারের (২০১৯) এএফসি এশিয়ান কাপের মূলপর্বে তিনটি ম্যাচেই পুরো ৯০ মিনিট খেলেন ২৮ বছর বয়সী প্রীতম। সে বার তাইল্যান্ডকে ৪-১-এ হারালেও আমিরশাহী ও বাহরিনের কাছে হেরে ছিটকে যায় ভারত। এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বেও পাঁচটি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।
সুভাষগ্রাম থেকে উঠে আসা ২৬ বছর বয়সি লেফট ব্যাক শুভাশিসের অভিষেক ২০১৮-র জুনে, ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে, চাইনিজ তাইপের বিরুদ্ধে। তখন ভারতীয় দলের কোচ ছিলেন স্টিফেন কনস্টানটাইন। দেশের জার্সি গায়ে প্রথম টুর্নামেন্টেই টানা চারটি ম্যাচ খেলেন তিনি। তার পর থেকে জাতীয় দলের হয়ে এ পর্যন্ত ৩৫টি ম্যাচে দলে ছিলেন তিনি। যার মধ্যে প্রথম এগারোয় ছিলেন ২৯বার। ছ’টি ম্যাচে রিজার্ভ বেঞ্চে থাকলেও পরিবর্ত হিসেবে নামানো হয়নি তাঁকে। কোচেরা শুভাশিসকে খেলালে শুরু থেকেই মাঠে নামাতে পছন্দ করেন। প্রীতমের মতো তিনিও তিন বছর আগে এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলেন এবং তিনটি ম্যাচেই পুরো ৯০ মিনিট মাঠে ছিলেন।
এ বারেও এই দুই বঙ্গ তারকার হাতে থাকবে ভারতের রক্ষণের অর্ধেক দায়িত্ব। স্টিমাচ যদি চার ব্যাকে দলকে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে তার মধ্যে দু’টি জায়গায় নিশ্চিত ভাবে এই দু’জনকেই রাখবেন। সেন্টার ব্যাক হিসেবে খেলতে পারেন প্রীতম ও লেফট ব্যাক হিসেবে এক নম্বর বাছাই শুভাশিস। যেহেতু ম্যাচগুলি হতে চলেছে তাঁদের ঘরের মাঠ যুবভারতীতে, তাই তাঁরা হয়তো একটু বাড়তি চাপেই থাকবেন। অবশ্য চেনা যুবভারতীতে খেলতে নামবেন বলে বাড়তি সুবিধাও হয়তো পাবেন। মজার বিষয়, এই দু’জনের মধ্যে তালমিলও দারুণ। কারণ, দীর্ঘদিন ধরেই এই দুই ফুটবলার এক ক্লাবের জার্সি গায়ে খেলে আসছেন। এটিকে মোহনবাগানের দুই স্তম্ভ বলা যেতে পারে প্রীতম ও শুভাশিসকে। এবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের হয়ে হয়ে লড়াই করার পালা। লক্ষ্যটা সেই একই, নিজেদের দুর্গ সামলানো, সঙ্গে দলকে জেতানো।