অ্যাত্তো বড় ! জিলিপি মেলায় গেলে চমকে যাবেনই

তিমিরকান্তি পতি, বাঁকুড়া: ‘হ্যাঁ, অ্যাত্তো বড়!’ ভাদ্র সংক্রান্তি এলেই কয়েক বছর আগে পুজোর সময় একটি বহুজাতিক সংস্থার বহুল প্রচারিত বিজ্ঞাপনটিকেই যেন মনে করায় বাঁকুড়া- ১…

Unique jalebi fair of kenjakura village

তিমিরকান্তি পতি, বাঁকুড়া: ‘হ্যাঁ, অ্যাত্তো বড়!’ ভাদ্র সংক্রান্তি এলেই কয়েক বছর আগে পুজোর সময় একটি বহুজাতিক সংস্থার বহুল প্রচারিত বিজ্ঞাপনটিকেই যেন মনে করায় বাঁকুড়া- ১ ব্লকের প্রাচীণ ও সমৃদ্ধশালী গ্রাম কেঞ্জাকুড়া। 

কারণ প্যাঁচেভরা জিলিপির সাইজ নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে৷ কিন্তু এখানে এই সময় তৈরী জিলিপির সাইজের কোনও সীমা নেই৷ আপনি চাইলে আপনার প্রিয়জনকে দশ কেজি ওজনেরও জিলিপি উপহার দিতে পারেন৷ একদম হেঁয়ালি নয়, ফি বছরই ভাদ্র সংক্রান্তিতে জিলিপি মেলার আয়োজন হয় বাঁকুড়ার এই গ্রামে। সেখানেই মেলে বৃহদাকার এই জিলিপি।

Unique jalebi fair of kenjakura village

গ্রামে জিলিপি মেলার শুরু কিভাবে কিংবা এই মেলা কত বছরের পুরনো তা অবশ্য জানা নেই এলাকার প্রবীণদেরও৷ তাঁদের কথায়, জ্ঞান হওয়া থেকেই দেখে আসছি গ্রামে জিলিপি মেলা হচ্ছে৷ তবে এর উৎপত্তি কিভাবে তা আমাদেরও জানা নেই৷ বাসিন্দার জানান, ফি বছর ভাদ্র সংক্রান্তিতে রাঢ় বঙ্গে ভাদু পুজো হয়৷ আর এই পুজোকে কেন্দ্র করেই কেঞ্জাকুড়া গ্রামে বসে জিলিপি মেলা৷

ভোজনরসিক হিসেবে বাঙালির সুখ্যাতি কারও অজানা নয়৷ আর সেই খাবার    ‘মিষ্টি’ হলে তো কথায় নেই। তাও আবার যে সে মিষ্টি নয়, জিলিপি৷ যার একেকটির সাইজ দেখলে মাথা ঘুরে যাওয়াটাই স্বাভাবিক৷ বাসিন্দারা জানান, এই মেলার প্রধান আকর্ষণ জিলিপির সাইজ৷

Unique jalebi fair of kenjakura village

জিলিপি মেলায় জিলিপির নুন্যতম ওজন তিন থেকে চার কেজি। এছাড়াও ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী জিলিপির ওজন দশ কেজিও হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই বাঁকুড়া ছাপিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ভিড় করেন একদিনের এই জিলিপি মেলায়। এমনকি কে কত বড় সাইজের জিলিপি তৈরি করতে পারেন, তা নিয়ে মেলায় কারিগরদের মধ্যেও প্রতিযোগিতা হয়।

কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতিতে পুরো বিষয়টা কেমন যেন এলোমেলো। সব কিছুই হচ্ছে নিয়ম মেনে। কিন্ত বিক্রিবাটা তেমন নেই। কিছু মানুষ এসেছেন অভ্যেস মতো। তবে ফি বছর যেখানে পাশের জেলার মানুষও এখানকার ‘জাম্বো’ জিলিপির টানে এখানে ছুটে আসেন, এবার সেই ছবির অভাব অনুভব করছেন কারীগর, বিক্রেতা থেকে কেঞ্জাকুড়ার মানুষও।

কিভাবে তৈরি করেন এই জিলিপি? রহস্য উন্মোচনে আগ্রহী নন জিলিপি-র কারিগররা। তবে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে যেটুকু জানা গেল, তা হল- জিলিপি তৈরির মূল উপাদান বিরির বেসন ও আতপ চালের গুঁড়ি। আগের দিন রাত্রে আতপ চালের গুড়ি, বিরির বেসন, সামান্য পরিমানে ময়দা একটি বড় পাত্রে জল দিয়ে মেখে রাখা হয়। এই মিশ্রনটিকে বলা হয় ‘খামি’৷

কারিগররা জানান, ‘খামি’ যত পুরনো হবে জিলিপি ততই সুস্বাদু ও মুচমুচে হবে। এরপর ছিদ্র যুক্ত বিশেষ ধরণের কাপড়ের একটি পাত্র থেকে ঘি ভর্তি গরম কড়াইয়ে সাধারণ চলতি জিলিপির মতো তৈরি করা হয়। ভাজা হয়ে গেলে তা চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা হয়৷ তাহলে আর দেরী কেন?  জিভে জল আনা গরম মুচমুচে ঢাউস এই জিলিপির প্যাঁচ ভেঙ্গে স্বাদ গ্রহণের সুযোগ নিতে এক্ষুনি আপনার গন্তব্য হোক বাঁকুড়া শহর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরের প্রাচীণ জনপদ কেঞ্জাকুড়া।