মোহনবাগানকে জেতাতে লাল হলুদের মাঠে বসে খেলা দেখতেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়

Special Correspondent, Kolkata: ইস্টবেঙ্গলের পয়েন্ট কাটাতে লাল হলুদ তাঁবুতে গিয়ে ইস্ট-মোহন ম্যাচ দেখতেন কট্টর মোহনবাগান সমর্থক তথা সদ্য প্রয়াত রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। লাল হলুদের…

Subrata Mukherjee

Special Correspondent, Kolkata: ইস্টবেঙ্গলের পয়েন্ট কাটাতে লাল হলুদ তাঁবুতে গিয়ে ইস্ট-মোহন ম্যাচ দেখতেন কট্টর মোহনবাগান সমর্থক তথা সদ্য প্রয়াত রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

লাল হলুদের এই পয়েন্ট কাটানোর কথা জানিয়েছেন দেবব্রত সরকার ওরফে লাল হলুদের নিতু দা। তিনি বলেন, “এই গল্প জআমি খুব ছেলেবেলা থেকে ময়দানে আসতাম। এসে দেখতাম পল্টুদার সাথে সুব্রতদার একটা মধুর সম্পর্ক। এটাও শুনতাম সুব্রতদা নাকি আপাদমস্তক মোহনবাগানের সমর্থক, কিন্তু ভালো লাগতো ওনাকে দেখে যে তিনি আমাদের ম্যাচ গুলোর সময় ঠিক পল্টুদার পাশে বসে ম্যাচ উপভোগ করতেন।

https://video.incrementxserv.com/vast?vzId=IXV533296VEH1EC0&cb=100&pageurl=https://kolkata24x7.in&width=300&height=400

আসলে একজন কট্টর মোহনবাগানী আরেকজন কট্টর ইস্টবেঙ্গলি দুই বন্ধু, ম্যাচ দেখার নাম করে একে অন্যের টিমের খেলা থাকলেই তাদের মাঠে চলে যেতেন, এটা আসলে একটা তুক-তাক, অন্যের টিমের পয়েন্ট কাটার লক্ষ্যে। সুব্রতদা যেমন আমাদের খেলা থাকলে আমাদের মাঠে আসতেন তেমনি আবার পল্টুদা রাও মোহনবাগানের খেলা থাকলে চলে যেতেন তাদের মাঠে, পয়েন্ট কাটবার জন্য। এ ছিল এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সুব্রতদা আমাদের মাঠে আসলে ওনার পাশে থাকতেন পল্টুদা, জীবনদা, প্রদীপ ঘোষ – এই প্রদীপ ঘোষ ওনার রাজনৈতিক সহকর্মী ছিলেন আর ছিলেন আদ্যোপান্ত ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। মাঠে একটা সুন্দর সমাবেশ থাকতো।”

একইসঙ্গে তিনি বলেন, “সবসময় ওনাকে দেখেছি, যে, কোনো মানুষ কোনো কাজের জন্য তার কাছে গেছে, তিনি পরিষ্কার কথাটা পরিষ্কার করে বলেছেন। আমি কোনো রাজনৈতিক ক্ষেত্র থেকে বলছি না, আমাদের ময়দান কেন্দ্রিক কোনো কিছু নিয়ে তার কাছে কেউ গেলে তিনি পরিষ্কার কথাটা পরিষ্কার ভাবে তাকে বুঝিয়ে বলতেন। পল্টুদা ওনার থেকে বয়েসে বড় হলেও তার সাথে সুব্রতদার অদ্ভুত একটা সুসম্পর্ক ছিল এই স্পোর্টসকে কেন্দ্র করে। কখনো আই.এফ.এ.’র রাজনীতি, কখনো সি.এ.বি.’র রাজনীতি বা অন্যান্য আসোসিয়েশনের যেকোনো সমস্যায় তিনি পল্টুদার সাথে আলোচনা করতেন।

আবার পল্টুদা যেমন মাঝে মাঝে সুব্রতদার বাড়িতে যেতেন সেরকমই পল্টুদা বাড়িতে থাকলে তিনি চলে আসতেন পল্টুদার বাড়িতে। পল্টুদা চলে যাওয়ার পর আমাকে আর স্বপনদাকে উনি খুব স্নেহ করতেন। মাঝে মাঝে আমরাও যেতাম ওনার কাছে। সুব্রতদা যখন মেয়র হলেন, আমি আর স্বপনদা ওনার কাছে গিয়ে বললাম, “বড় ক্লাবগুলোতে তো কোনো অ্যাম্বুলেন্স নেই, তুমি যদি একটু করে দাও, ভালো হয়”। সুব্রতদা বললো, “দেখ আমি তো পুরো করতে পারবো না, বেশ খানিকটা করে দিচ্ছি, বাকিটা তোদের দেখতে হবে”। আমি বললাম, “ঠিক আছে”। সাথে সাথে স্বপনদা বললো, “মোহনবাগান তো চায় নি, তা তুমি দেবে তো?” তার উত্তরে খুব সুন্দর ভাবে তিনি বলেছিলেন, “মোহনবাগান তো আমার কাছে চায় নি, তোরা চেয়েছিস, তোদের দিচ্ছি”।

একজন আদ্যোপান্ত মোহনবাগানী হয়েও স্পোর্টস এর উন্নতিতে সবসময়ই এগিয়ে আসার মানসিকতা সুব্রত দার মধ্যে দেখতে পেয়েছিলাম। এরকম একজন ময়দান প্রিয় মানুষ চলে গেলো, আমরা খুবই শোকাহত। তিনি যেমন মোহনবাগানের সদস্য ছিলেন, তেমনি আমাদের সদস্য ছিলেন। প্রত্যেক বছরের বার্ষিক চাঁদা দিয়ে উনি কার্ড নবীকরণ করাতেন। ওনার সহকর্মী দেবুদার সাথে কথা বলে আমিই সেটা পাঠিয়ে দিতাম সুব্রতদার কাছে। আর হয়তো কার্ড রিনিউ করে পাঠাতে হবেনা, সুব্রতদার চলে যাওয়া ময়দানে এক অনন্ত শূন্যতার সৃষ্টি হলো। একজন ফুটবল প্রেমী ব্যক্তিত্বকে হারালাম আমরা। ওনার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। ওনার শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানাই।
সুব্রতদা এক বর্ণময় চরিত্র, রাজনীতির আঙিনার মতো ময়দানেও তিনি অমর হয়ে থাকবেন।”