বিশেষ প্রতিবেদন: স্থানীয়দের এমনকি উদ্যানের কর্মীদের কাছে এটি ভূত-বাংলো। অথচ বিশাল ইতিহাসের সাক্ষী বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভিতরের এই বাড়ি। গার্ডেনের ভেতর সেন্ট্রাল ন্যাশনাল হার্বেরিয়াম বিল্ডিংয়ের পেছনে গঙ্গার একদম ধারে এটি অবস্থিত। বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থা।
কে এই রক্সবার্গ (Roxburg)?
উইলিয়াম রক্সবার্গ ছিলেন এক চিকিৎসক, উদ্ভিদবিজ্ঞানী এবং ‘ভারতীয় উদ্ভিদ বিজ্ঞানের জনক’ হিসেবে সমধিক পরিচিত। তিনি পূর্ব স্কটল্যান্ডের আয়ারশায়ারে ১৭৫১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন এবং সেখানে প্রখ্যাত ব্রিটিশ উদ্ভিদ বিজ্ঞানী অধ্যাপক জন হোপ-এর সান্নিধ্যে এসে উদ্ভিদবিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হন। একজন সার্জন-এর সহযোগী হিসেবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একটি জাহাজে তার চাকরি জীবন শুরু হয়। চাকরি সূত্রে মাদ্রাজ হয়ে তিনি কলকাতায় আসেন।
কলকাতা বটানিক্যাল গার্ডেনের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট কিড-এর মৃত্যুর পর রক্সবার্গ ১৭৯৩ সালের নভেম্বর মাসে এ উদ্যানের সুপাররিনটেনডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার অদম্য উৎসাহ এবং নিরলস প্রচেষ্টায় বোটানিক গার্ডেন অল্প দিনের মধ্যেই এক বিশিষ্ট উদ্যানরূপে গড়ে ওঠে। তিনি নিজের থাকার জন্যে এই কুঠীটি নির্মাণ করেন এবং তৎসংলগ্ন সুবিশাল পাঠাগার।
রক্সবার্গ যখন উদ্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন সেখানে প্রায় ৩০০ প্রজাতির গাছপালা ছিল। ১৮১৩ সালে তার অবসর গ্রহণকালীন সময়ে ঐ বাগানে উদ্ভিদের প্রজাতি সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫০০। এছাড়া ২৫৩৩টি বিজ্ঞানসম্মত চিত্র তিনি রেখে যান। এসব চিত্র এবং তার তৈরি অসংখ্য উদ্ভিদের নমুনা পরবর্তীকালে এ উপমহাদেশের অন্যতম এক বিশিষ্ট হার্বেরিয়াম প্রতিষ্ঠার সূচনা করে। রক্সবার্গ ভারত ত্যাগের পরে উইলিয়ম কেরী বোটানিক গার্ডেনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১৮১৪ সালে ১৫১০টি উদ্ভিদ প্রজাতির ওপর Hortus Bengalensis নামে এক ক্যাটালগ প্রকাশ করেন। সবগুলি উদ্ভিদই ঐ সময় বাগানে ছিল। এছাড়া রক্সবার্গ Flora Indica নামে এক পাণ্ডুলিপি উইলিয়ম কেরীর হাতে দিয়ে যান। ১৮২০ সালে উইলিয়ম কেরী এটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই মহান বিজ্ঞানী এডিনবার্গে ১৮১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।