Saiful Azam: বাঙালি ‘বাজপখি’র আঘাতে ধংস চার ইজরায়েলি যুদ্ধ বিমান

বিশ্বের বিমান যুদ্ধের ইতিহাসে লেখা আছে এক বাংলাভাষী-বাঙালির নাম। দুনি়য়ার একমাত্র আকাশ যোদ্ধা যিনি একাই ইজরায়েলের বিমান বাহিনীর খেল আকাশেই খতম করেছিলেন। খোদ শত্রুপক্ষ মার্কিন…

Saiful Azam: A Bangladeshi Hero Lives on in the Hearts of Palestinians

বিশ্বের বিমান যুদ্ধের ইতিহাসে লেখা আছে এক বাংলাভাষী-বাঙালির নাম। দুনি়য়ার একমাত্র আকাশ যোদ্ধা যিনি একাই ইজরায়েলের বিমান বাহিনীর খেল আকাশেই খতম করেছিলেন। খোদ শত্রুপক্ষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েলের কাছে পরম আশ্চর্য এই ব্যক্তি সাইফুল আজম (Saiful Azam)। জীবদ্দশায় তাঁকে ‘লিভিং ঈগল’ সম্মান দিতে কোনও কুন্ঠা দেখায়নি মার্কিন মুলুক। হোক না শত্রুপক্ষের। সুপ্রাচীন সমর-রীতি মেনে যোদ্ধাকে সম্মান জানানোই রীতি। সমকালীন ইজরায়েল ও ফিলিস্তিনি গোষ্ঠি হামাসের মধ্যে সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে সাইফুল আজমের আকাশ যুদ্ধের কিছু কথা।

গোটা দুনিয়া দেখেছিল বিখ্যাত একটি নিউজ রিল (ভিডিও)। একটি ছোট্ট বিমান মাঝ আকাশে চারটি ইজরায়েলি সুপারসনিক যুদ্ধ বিমানের মুখোমুখি। চারের বিরুদ্ধে এক! এমনই এক রোমহর্ষক মুহূর্ত। ফলাফল ছিল আরও রোমাঞ্চকর। এ যেন সেই বহু চর্চিত ডেভিড বনাম গোলিয়াথের লড়াই ফিরে এসেছে। দৈত্য গোলিয়াথকে হারিয়েছিল পুচকে ডেভিড। আর গোলিয়াথের মতো শক্তিশালী ইজরায়েলি বিমানগুলির কাছে ডেভিড হয়ে এসেছিলেন সাইফুল আজম। তাঁর অব্যর্থ নিশানায় আকাশ থেকে জ্বলতে জ্বলতে পড়ছিল ইজরায়েলি যুদ্ধবিমান। এ কী ঘটছে আকাশে! হকবাক পেন্টাগন। ভীত ইজরায়েল! তবে যা ঘটার ঘটে গিয়েছিল। নজির গড়ে একাই চারটি ইজরায়েলি বিমানকে ভেঙে আকাশ থেকে অক্ষত অবস্থায় জমিতে নেমেছিলেন সাইফুল আজম।

অবিস্মরণীয় এই আকাশ যুদ্ধের সংবাদ বিবিসি সহ আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম মারফত ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয়নি। খবর শুনে মারহাব্বা মারহাব্বা চিতকারে আরব দুনিয়ার সব দেশ ততক্ষণে মাতোয়ারা। সেটা ১৯৬৭ সাল। ইজরায়েলের কাছে মার খেয়ে আরব জোটের সেনা গুটিয়ে গেছে। ঠিক তখনই সাইফুল আজমের সেই লড়াই দেখা গেছিল। ১৯৬৭ সালে আরব-ইজরায়েলের মধ্যে ‘ছয় দিনের যুদ্ধ’ সুপরিচিত। এই যুদ্ধে জয়ী হয়েছিল ইজরায়েল। তবে তাদের বুক কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন সাইফুল আজম।

সাইফুল আজম এক বাজপাখি
সাইফুল আজমের জন্ম ১৯৪১ সালে। প্রথমে তিনি ছিলেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে। ১৯৭১ সালের পর তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। পাক বিমান বাহিনীতে থাকার সময় ১৯৬৫ সালে ভারতের সাথে যুদ্ধেও তিনি অংশ নেন। ভারতীয় যুদ্ধ বিমান ধংস করেন। তবে যুদ্ধে ভারত জয়ী হয়। এরপর সাইফুল আলনের জীবনে ঘটে চাঞ্চল্যকর কয়েকটি ঘটনা। আরব বনাম ইজরায়েলের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন। প্যালেস্টাইনের জমি দখল ইস্যুতে এই সংঘর্ষে পাকিস্তান সমর্থন করেছিল আরব জোটকে। পাক বিমান সৈনিক হিসেবে সাইফুল আজম ইরাক ও জর্ডনের বিমান বাহিনীতে ছিলেন। ১৯৬৭ সালের সেই আরব জোট বনাম ইজরায়েলের যুদ্ধে জর্ডনে আক্রমণ করতে এসেছিল ইজরায়েলি বিমান বাহিনী। যুদ্ধে তিনি চারটি ইজরায়েলি বিমানকে ধংস করে দেন।

সাইফুল আজমের এই একার লড়াইয়ে চমকে গেছিল দুনিয়া। ইরাক, জর্ডনের তরফে একের পর বীরত্বসূচক খেতাব পান তিনি। এরপর ১৯৭১ সালের ভারত-পাক সংঘর্ষের সময় তাকে বাঙালি অফিসার হিসেবে বন্দি করে পাকিস্তান সরকার। যুদ্ধের পর বাংলাদেশ তৈরি হয়। সাইফুল আজম বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেন। ১৯৭৯ সালে তিনি অবসর নেন। পরবর্তী সময়ে সাইফুল আলম বাংলাদেশের রাজনীতিতে অংশ নেন। বিএনপি দলের হয়ে পাবনা থেকে সংসদ সদস্য হন। ২০২০ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে অনন্য বীরত্বের জন্য সাইফুল আজমকে ২০০১ সালে আমেরিকার বিমান বাহিনী  বিশ্বের ২২ জন লিভিং ঈগলসের  একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।