Happy: ৮০ বছরের গবেষণা শেষে মিলল সুখের সূত্র

Special Correspondent: পৃথিবীতে প্রতিটি সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষই সুখপিয়াসী। জীবন‌কে সুখময়তায় যাপন করার চাইতে বড় প্রত্যাশা কি আর কিছু হতে পারে? নিশ্চয়ই না! সুখের নেশায়ই তো মানুষ…

happy

Special Correspondent: পৃথিবীতে প্রতিটি সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষই সুখপিয়াসী। জীবন‌কে সুখময়তায় যাপন করার চাইতে বড় প্রত্যাশা কি আর কিছু হতে পারে? নিশ্চয়ই না! সুখের নেশায়ই তো মানুষ ছুটে বেড়ায় দিগ্বিদিক! কী আশ্চর্য এক অনুভূতি এই ‘সুখ’! যা সবাই চায়।

তবে মানুষকে যখন সুখের-মানদন্ড খুঁজে বের করতে বলা হয়, তখন সাধারণত দুটি জিনিস ঘটে; অধিকাংশেই বেছে নেন অর্থ-বিত্ত; আর বাকিদের মধ্যে প্রায় সবাই বেছে নেয় যশ-খ্যাতি। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সম্পূর্ণ অন্য কথা বলছে।

https://video.incrementxserv.com/vast?vzId=IXV533296VEH1EC0&cb=100&pageurl=https://kolkata24x7.in&width=300&height=400

১৯৩৮ সাল! ইতিহাসের কালোপাতায় রচিত ৪৩ মাসব্যাপী ‘The Great Depression’ পর্ব সবেমাত্র থামে; বিশ্বজুড়ে তখন ভয়াবহ আর্থিকমন্দা। ঠিক সেই সময়ে বিজ্ঞানীরা ৭২৪জন মানুষের স্বাস্থ্যের উপর নজর রাখতে শুরু করেছিলেন, যাদের মধ্যে কেবল ৬০ জন নব্বই বছর বয়সী মানুষ আজ পর্যন্ত বেঁচে আছেন। প্রত্যাশা, এরকম সুদীর্ঘ একটি গবেষণাই উদ্ভাবন করবে সুখী জীবনযাপনের আকাঙ্ক্ষিত সূত্র! যার জন্য সেই সময়কার পরিস্থিতিই ছিল একদম যথাযথ! ৮০ বছর ধরে ‘Havard Study of Adult Development’ এর অংশ হিসেবে চলমান এই পর্যবেক্ষণটি বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ একটি গবেষণা, যেখানে গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের স্বাস্থ্যজনিত অবস্থা এবং ক্যারিয়ার কিংবা দাম্পত্যজীবনে তাদের সফলতা এবং ব্যর্থতা নিয়ে অধ্যয়ন করেছেন এবং চমকপ্রদ কিছু বিষয় সামনে নিয়ে এসেছেন। তাতেই মিলেছে সুখের মানদন্ড।

তবে হাভার্ডের-এই রিসার্চ অর্থ-বিত্ত এবং খ্যাতি সুখের মান দণ্ড , এই ধারণাকে উড়িয়ে দিয়েছে। গবেষণাটি বলছে, অর্থ বা খ্যাতি নয়; মানুষের মধ্যকার পারস্পরিক ঘনিষ্ঠ সুন্দর সম্পর্কই কেবল মানুষকে সারাজীবন সুখতৃপ্তি দিতে পারে! এই আত্মিক বন্ধনগুলো মানুষকে জীবনের অতৃপ্তি থেকে রক্ষা করে, মানুষ জীবনের অর্থ ও তৃপ্তি দুটোই খুঁজে পায়, মানসিক এবং শারীরিকভাবে ভেঙে পড়ে না। মানুষ-মানুষের মধ্যকার এই পারস্পরিক সম্পর্ক গুলো সামাজিক শ্রেণী, আইকিউ, এমনকি জিনগত বৈশিষ্ট্যের চেয়েও সুখী জীবনের জন্য অধিক নিশ্চয়তা দেয়।

গবেষকরা পর্যবেক্ষণের আওতাভুক্ত ৭২৪ জন মানুষের যাবতীয় মেডিক্যাল রেকর্ড ৮০ বছর যাবৎ তৎক্ষণাৎ সংগ্রহ করেছেন, প্রতিনিয়ত ব্লাড‌ সংগ্রহ করা হয়েছে, স্ক্যান করা হয়েছে তাদের ব্রেইন, নিয়মিত ব্যক্তিগত এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এবং বিভিন্ন প্রশ্ন করে করে তথ্য সংগ্রহ করেছেন; যেখানে একজন মানুষের Happiness এবং পরিবার-বন্ধু-স্বজনদের সাথে তাদের relationship-এর একটি শক্তিশালী যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন।

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জীবনে সফল কিংবা ব্যর্থ সব ধরনের মানুষই রয়েছে।
গবেষকদের মতে, Marital satisfaction মানুষের Mental Health-এর উপর প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে। রিসার্চের ফলাফল অনুযায়ী, সুখী দাম্পত্য জীবনের অধিকারী মানুষেরা ৮০ বছর বয়সেও মানসিক ও শারীরিকভাবে স্বাভাবিক থাকেন। অপরদিকে, বৈবাহিক জীবনে অসুখী মানুষেরা দৈহিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যায়, যার পেছনে সবচেয়ে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে ইমোশনালি সুখী না থাকা।

রিসার্চটির ডিরেক্টর Robert Waldinger বলেন, “আশেপাশের বন্ধু, পরিবার ও সমাজের মানুষের সাথে উষ্ণ সম্পর্কের অধিকারী লোকেরা দীর্ঘায়ু লাভ করেন এবং আজীবন সুখী থাকেন; অন্যদিকে একাকীত্বে ভোগা মানুষেরা ক্ষণজন্মা হয়। ক্ষুদ্র জীবনের বিশাল অংশ জুড়ে থাকে হতাশা, মাঝবয়সেই ভেঙে পড়ে স্বাস্থ্য। Loneliness kills. It’s as powerful as smoking or alcoholism.”

অতএব, জীবনে হ্যাপিনেসকে উপভোগ করতে হলে অর্থবিত্ত কিংবা যশ-খ্যাতির চাইতেও আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে অনেক বেশি যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। একটি বিজনেস কিংবা ক্যারিয়ার গঠনে সময় এবং প্রচেষ্টা ইনভেস্টের চাইতেও আমাদের পরস্পরের মধ্যে Healthy Relationship গড়ে তোলা এবং সেই সম্পর্ক গুলোর যত্ন নেয়ার পেছনে ইনভেস্টমেন্টে বেশি মনোযোগী হলেই সুখ-কে উপভোগ করা হবে সহজতর!