Kashmir: বাঙালি ফিদায়েঁ বাহিনীর তলোয়ারে কচুকাটা কাশ্মীরীরা, মন্দির ভরেছিল মৃতদেহে

kashmir

প্রশ্ন উঠতেই পারে আত্মঘাতী হামলার শুরু এ দেশে কবে হয়েছিল? অতীত থেকে অতীতে যাওয়ার আগে একবার মনে করানো দরকার এখানে ‘হীনবল বাঙালি’র কথা বলা হচ্ছে। যারা যুদ্ধ টুদ্ধতে তেমন পারদর্শী নয় বলে বিশেষ একশ্রেণীর ইতিহাসবিদ রটিয়ে থাকেন। কিন্তু কবি কহ্লন করেননি। তিনি নিজ জাতির রক্তাক্ত চেহারা দেখেছেন, আবার হামলাকারীদের বীরত্ব লিখে রেখেছেন।

Advertisements

কবি কহ্লনের সেই লেখার সূত্র থেকে স্পষ্ট কাশ্মীরের মাটিতে ‘হিন্দু বনাম হিন্দু’ বা জাত্যাভিমানের খাতিরে ভয়াবহ গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। এই লিখিত বিবরণ ধরলে আজ যে কাশ্মীরী পণ্ডিতদের গণহত্যা নিয়ে চর্চা-বিতর্ক, বা পাকিস্তানি হামলায় শতশত কাশ্মীরী মুসলমানের মৃত্যু নিয়ে পারস্পরিক তর্ক চলে, তার বহু বহু আগে হয়েছিল পরিকল্পিত গণহত্যা। বঙ্গ তলোয়ার ঝলকে ছিল কাশ্মীরে। দেশের অন্যতম প্রমাণ্য ইতিহাস গ্রন্থ ‘রাজতরঙ্গিনী’-তে এমন লিখিত। এটাই ধরা হয় প্রথম ‘আত্মঘাতী হামলা’ – ‘ফিদায়েঁ হানা’- ‘Suicide Squad Attack’

অষ্টম শতকের কথা। কাশ্মীর বনাম গৌড়ের সংঘর্ষে রচিত হয়েছিল ভারতে প্রথম আত্মঘাতী হামলা। কাশ্মীরের কিংবদন্তি রাজা ললিতাদিত্য মুক্তাপীড় ও গৌড় নরেশ গোসালের মধ্যে সংঘর্ষের পর কূটনৈতিক সন্ধি থেকে পুরো ঘটনা মোড় নিয়েছিল। ভগবানের নামে শপথ নিয়েও কাশ্মীরের রাজা গোপনে খুন করান গৌড়ের শাসককে। ব্যাস শুরু হয়ে গেল আরও এক রক্তাক্ত পর্ব।

ভ্রমণ সাহিত্যিক ও হিমালয় গবেষক প্রবোধ কুমার সান্যাল তাঁর ‘উত্তর হিমালয় চরিত’ গ্রন্থের ‘সরস্বতী-শারদাস্থান’ পর্বে লিখেছেন, ‘সেকালের গৌড় থেকে কৃষ্ণগঙ্গা কমবেশি দু’হাজার মাইল দূর ছিল। এই সুবৃহত দূরত্ব সেদিনকার সেই অপরাজেয় বাঙালী কেমন করে অতিক্রম করে গিয়েছিল সে খবর কেউ রাখে নি, কিন্তু যতদূর অনুমান করা যায় তারা সংখ্যায় সাত বা আটশ ছিল। একাল হলে তাদেরকে বলা যেতে পারত ‘Suicide squad’ অর্থাৎ আত্মহন্ত্রীর দল।’

Advertisements

অষ্টম শতকের এই হামলার কথা বহু পরে দ্বাদশ শতকে কাশ্মীরের কবি কহ্লন যেভাবে লিখেছেন- গৌড়ের রাজাকে গোপনে খুন করানো মেনে নিতে পারেনি বাঙালিরা। তারা সিদ্ধান্ত নেয় কাশ্মীরে ঢুকে প্রতিশোধ নেবে। সেই মতো তারা অভিযান করেছিল। রাজা ললিতাদিত্য মুক্তাপীড় কাশ্মীরে ছিলেন না।
কবি কহ্লন লিখেছেন, ”তাহারা সারদা মন্দির দর্শন ছলে কাশ্মীর দেশে প্রবেশ করিয়া, সাক্ষী দেব পরিহাস-কেশব মন্দির বেষ্টন করিল। তাহাদিগকে মন্দিরে প্রবেশ করিতে অভিলাষী দেখিয়া পূজকগণ পরিহাস-কেশব মন্দির দ্বার রুদ্ধ করিল। বিক্রমশীল গৌড়বাসীগণ পরিহাস-কেশব ভ্রমে রামস্বামীর বিহগ্র উৎপাটিত করিয়া রেণুরূপে পরিণত করিল ও তিল তিল করিয়া চতুর্দ্দিকে নিক্ষেপ করিল। অনন্ত সৈন্য নগর হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া তাহাদিগকে আক্রমণ করিল।” (অনুবাদ)

শুরু হলো সেই ভয়াবহ মুহূর্ত। মন্দির ঘিরে গৌড়ীয় সেনা ও কাশ্মীরী সেনার যুদ্ধ। প্রবল আক্রমণে হতচকিত কাশ্মীরী সেনা কচুকাটা হতে থাকে। কিন্তু সাত আটশ বাঙালি সেনা কতক্ষণ লড়বে। বিরাট কাশ্মীর বাহিনী এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ততক্ষণে শতশত কাশ্মীরীর মৃত্যু হয়েছে। দিন শেষে পরিহাস-কেশব মন্দির হয় মৃতদেহের ঘর। সম্পূর্ন নিকেশ হয় গৌড়ীয় সেনা।
ভারতের প্রামাণ্য আত্মঘাতী হামলার শুরুটা করেছিল ‘হীনবল’ বাঙালি।

তথ্য সাহায্য :
উত্তর হিমালয় চরিত্র। প্রবোধ কুমার সান্যাল
বঙ্গ সামুরাই। ফরিদ আহমেদ
কাশ্মীরের ইতিহাস।