রাষ্ট্রসংঘ প্রথমবার গমগম করল জলগগম্ভীর বাংলা ভাষণে, নজির গড়লেন বঙ্গবন্ধু

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ১৯৭১ সালে বিশ্ব জেনেছিল পদ্মা-মেঘনা-ধলেশ্বরীর তীরে ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ আক্রমণে রক্তাক্ত সংঘর্ষের পর পাকিস্তানকে পরাজিত করে বাংলাভাষার দেশ বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে।…

sheikh mijibur rahman

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ১৯৭১ সালে বিশ্ব জেনেছিল পদ্মা-মেঘনা-ধলেশ্বরীর তীরে ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ আক্রমণে রক্তাক্ত সংঘর্ষের পর পাকিস্তানকে পরাজিত করে বাংলাভাষার দেশ বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে। এই ঐতিহাসিক আত্মপ্রকাশের চার বছরের মাথায় সরাসরি রাষ্ট্রসংঘ থেকে পুরো দুলিয়া শুনেছিল প্রথম বাংলা ভাষণ।

১৯৭৪ সালের ঐতিহাসিক ২৫ সেপ্টেম্বর। এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে প্রথম বারের মতো বাংলা ভাষায় ভাষণ প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের মাধ্যমে রাষ্ট্রসংঘের সদস্য পৃথিবীর সব দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারে, বাংলা ভাষাভাষী বাঙালি জাতির জন্য রয়েছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। তার নাম বাংলাদেশ।

কী বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু ? তাঁর বহু বিখ্যাত এই প্রথম আন্তর্জাতিক বাংলাভাষার ভাষণ আজও রাষ্ট্রসংঘের কাছে অমূল্য সংগ্রহ। বহু রাষ্ট্রনায়কের বহু ঐতিহাসিক ভাষণ ও চমকদার মুহূর্তের কেন্দ্র নিউইয়র্কের রাষ্ট্রসংঘ সদর কার্যালয়ের অধিবেশন কক্ষ।

রাষ্ট্রসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আজ এই মহামহিমান্বিত সমাবেশে দাঁড়াইয়া আপনাদের সাথে আমি এই জন্য পরিপূর্ণ সন্তুষ্টির ভাগীদার যে বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষ আজ এই পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করিতেছেন। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পূর্ণতা চিহ্নিত করিয়া বাঙালি জাতির জন্য ইহা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার অর্জনের জন্য এবং একটি স্বাধীন দেশে মুক্ত নাগরিকের মর্যাদা নিয়া বাঁচার জন্য বাঙালি জনগণ শতাব্দীর পর শতাব্দীব্যাপী সংগ্রাম করিয়াছেন, তাঁহারা বিশ্বের সকল জাতির সাথে শান্তি ও সৌহার্দ্য নিয়া বাস করিবার জন্য আকাঙ্খিত ছিলেন।’

বিশ্ব চমকে গেল। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের অনুবাদ করে সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা শুনলেন। রাষ্ট্রসংঘের বিশেষ সংগ্রহশালায় সেই বাংলাভাষার প্রথম ভাষণ রক্ষিত আছে। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণের মাধ্যমে জাতিসংঘের সদস্য পৃথিবীর সব দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারে, বাংলা ভাষাভাষী বাঙালি জাতির জন্য রয়েছে একটি সার্বভৌম দেশ। তার নাম বাংলাদেশ।  বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পরেই রাষ্ট্রসংঘে আলোড়ন পড়ে। সেই ভাষণ শুনেছিলেন শুধু বাংলাদেশবাসী নন, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরার অগনিত মানুষ। সবাই জানলেন বাংলা আন্তর্জাতিক সরকারি ভাষা হয়ে গিয়েছে।