কে বলে মরা হাতি লাখ টাকা! হীরের থেকেও দামি

বিশ্বের অন্যতম দামি বস্তু সোনার কিংবা হীরের চেয়েও অধিক দামি হাতির দাঁত। এর অন্য নাম আইভোরি (ivory)। ধরের অনুযায়ী হাতির এক জোড়া দাঁতের দাম হতে…

বিশ্বের অন্যতম দামি বস্তু সোনার কিংবা হীরের চেয়েও অধিক দামি হাতির দাঁত। এর অন্য নাম আইভোরি (ivory)। ধরের অনুযায়ী হাতির এক জোড়া দাঁতের দাম হতে পারে ৮ কোটি টাকার চেয়েও বেশি। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনটাই বাস্তব। মূলত বিশেষ মানের গহনা তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এই আইভোরি। উচ্চবিত্ত্বদের জন্য গলার হাড়-চুরি-বোতাম তৈরি করা হয় এটির মাধ্যমে। প্রাচীনকালে রাজ পরিবার ও অভিজাত শ্রেণীর ব্যক্তিদের মধ্যে হাতির দাঁতের তৈরি গহনার প্রচুর চাহিদা ছিল। এটি তাদের আভিজাত্যের বিষয় ছিল বলেই হাতির দাঁতের দাম সোনার চেয়েও বেশি। অনেকেই ঘর সাজাতে হাতির দাঁতের তৈরি পণ্য ব্যবহার করেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাতির তৈরি এসব শো-পিস সংগ্রহ করেন। একসময় হাতির দাঁতের জিনিস ঘরে থাকা সমৃদ্ধির অন্যতম লক্ষণ ছিল। প্রাচীন ভারতের শিল্প সামগ্রে একটু ঘাঁটলেই বোঝা যাবে হাতির দাঁত থেকে এক সময় কত সুখ্য শিল্প ও সামগ্রী তৈরি করা হত। শুধু ভারতই নয়, বিশ্বজুড়েই সমৃদ্ধির অন্যতম নিদর্শন ছিল এটি।
ইংল্যান্ডের রাজ পরিবারের একটা আস্ত ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে হাতির দাঁতের তৈরি। লাখ লাখ টাকা দিয়ে হলেও এর দ্বারা নির্মিত জিনিস কেনা ভাল ইনভেস্টমেন্ট বলে মনে করেন অনেকে। কারণ এটি বিরল এবং দীর্ঘদিন টেকেও। তাই আইভোরিতে জিনিসের শিল্পে ঐতিহাসিক মূল্য অস্বীকার করা যায়না। ধর্মীয় কারণেও এক ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস তাদের ভগবান শ্রী গণেশকে একটি হাতির মুখের আকারে দেখানো হয়েছে যার মধ্যে হাতির দাঁত বের হতে দেখা যায়। তাই তাদের মধ্যেও এর ব্যাপক চাহিদা র‌য়েছে।

তবে ১৯৮৯ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে নিষিদ্ধ হাতির দাঁত অর্থাৎ আইভোরি বিক্রি। হাতির দাঁতের সকল ব্যবসাকে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই সংক্রান্ত ব্যবসা করলে বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইনের ধারায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কারণ হাতির দাঁত সংগ্রহ করতে গিয়ে নির্বিচারে হত্যা করা হত নিরীহ প্রাণীগুলোকে। যে কারণে এই প্রাণীটির সংখ্যাও অনেক কমে এসেছে। তবে এখনও চোরাই পথে বিক্রি হয় হাতির দাঁতের তৈরি জিনিস, যার কোনটা আসল আবার কোনটা নকল। বর্তমানের চোরাপথে চলে হাতির দাঁতের পাচার। চোরা বাজারে লাখ লাখ কোটি কোটি টাকায় বিক্রি হয় হাতির দাঁত। সম্প্রতিক এক সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে গত কয়েক বছরে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে হাতির দাঁতে তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা,যার জন্য বাড়ছে চোরা-চালানও।

চিনেও হাতির দাঁতের তৈরি জিনিস ঘরে রাখাকে শুভ বলে মনে করা হয়। তার উপরে চিনা সংস্কৃতিতে হাতির দাঁতের জিনিস সমৃদ্ধির লক্ষণ। সেই কারণেই হঠাৎ করেই আন্তর্জাতিক চোরা বাজারে আইভোরির চাহিদা বেড়েছে বলে জানা গেছে। গত কয়েক বছরে চিনে মধ্যবৃত্য শ্রেণীর আর্থিক উন্ন্যতি হয়েছে। হাতির দাঁতের মূল্য ভীষণভাবে ওঠানামা করে। হাতির দাঁতের তৈরি জিনিসের দাম ২০,০০০ টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। কিলোগ্রাম প্রতি হাতির দাঁতের মূল্য পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া উন্ন্যতমানের দাঁত কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যেতে পারে।